তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি

  ২২ জুন, ২০২২

ডিজিটাল স্কেলে কারসাজিতে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে দুই কর্মকর্তা বহিষ্কার

দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধায় ডিজিটাল স্কেলে কারসাজিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ ডিজিটাল কারসাজির কারণে অনেক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী পথে বসার অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে একটি চক্র ঘুষের বিনিময়ে ওজন স্কেলে পণ্য ও পরিবহনের মাপ কমবেশি করার কারণে ব্যবসায়ী এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট পথে বসেছেন। রেমিট্যান্স হারানোর পাশাপাশি রাজস্ব খাতেও দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ডিজিটাল কারসাজির ঘটনায় আরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর নামে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ব্যবসায়ী এবং সিএন্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বন্দরে এই ডিজিটাল কারচুপি চলছে। ভারত, নেপাল, ভুটান থেকে যখন কোনো মালামাল আমদানি করা হয় তখন কোনো কোনো ট্রাকের মালামাল ওজন স্কেলে পরিমাপ কম হয়। তবে ওজন স্কেলে কম পাওয়া মালামালের পরিমাণ পরিবহনের ওজন বাড়িয়ে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে সমান করে দেওয়া হয়। এই মালামাল যখন আমাদানিকারকের নিজস্ব স্কেলে পরিমাপ করা হয় তখন কয়েক টন কম হয়ে যায়। তবে এলসির মাধ্যমে পুরো মালামালের টাকা আগেই রপ্তানিকারকের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।

দীর্ঘদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও কারচুপির ঘটনা ধরতে পারছিল না কেউ। চোখে ধুলো দেওয়ার মতো এ ঘটনা হঠাৎ ফাঁস হয় ভারতের আসাম থেকে আসা এক ট্রাক ড্রাইভারের মাধ্যমে। আবার একই ঘটনা ঘটে তার দুদিন পর। এসব ঘটনায় বন্দরটিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বন্দর সংশ্লিষ্টদের টান টান উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে।

জানা যায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে দুটি ডিজিটাল ওজন স্কেল রয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্য ও পরিবহনের ওজন পরিমাপ করা হয় এ দুই স্কেলেই। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাকে হাজার হাজার টন মালামাল পরিমাপের কাজ করেন নির্ধারিত কর্মচারীরা। অভিযোগ উঠেছে, ঘুষের বিনিময়ে ওজন স্কেলে পরিমাপ কমবেশি করেন বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ঘটনায় গত ১৩ জুন হাতেনাতে ধরা পড়েন দুই কর্মচারী।

আবদুল মোতালেব নামের ওই ড্রাইভার জানান, তার ট্রাকে মালামাল কম হয়েছিল। তবে ওজন স্কেলের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মচারী যান্ত্রিকভাবে তা ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এর জন্য সে তার কাছে ৩০০ টাকা ঘুষ চায়। পরে তাকে ১০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর ওই ট্রাকটি নিজস্ব স্কেলে পরিমাপ করা হলে প্রায় ১ টন ভুট্টা কম হয়। পরে আমদানিকারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্টরা কর্তৃপক্ষকে জানালে দুই স্কেল অপারেটর আরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

শামীম হোসেন নামে আমদানিকারক বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে অল্প পুঁজি নিয়ে বাংলাবান্ধা স্থলে আমদানি শুরু করেছিলাম। প্রায়ই আমার আমদানি মালামাল কম হতো। আমি বুঝতে পারিনি। আমি পথে বসে গেছি। এখন বুঝেছি এটা ডিজিটাল ওজন স্কেলের কারসাজি। এর সঙ্গে বন্দরের অনেকেই জড়িত আছে। এত বড় অপরাধ, কিন্তু শাস্তি হিসেবে চাকরিচ্যুত না করে ওই দুই কর্মকর্তাকে বাঁচানো হচ্ছে। এখন তাদের ওজন স্কেল থেকে সরিয়ে অন্যত্র দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এত দিনে যে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম, এর ক্ষতিপূরণ কে দিবে?’

সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পরিমাপে কম হওয়া মালামালের জন্যও নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার আগেই পাঠাতে হয়। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে সরকারও রেমিট্যান্স বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতি টনে ২০০ থেকে ৫০০ কেজি কম হয়। একজন আমদানিকারক কম করে ৩০ থেকে ৫০ টন মালামাল আমদানি করে। প্রতি এলসিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হাওয়া হয়ে যায়। এখন বুঝেছি এটা ডিজিটাল স্কেলে অভিনব কারসাজি। এ কারসাজিতে লভ্যাংশ তো দূরে থাক, প্রতিনিয়ত গুনতে হচ্ছে লোকসান। এই ডিজিটাল কারসাজিতে আমাকে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে। এর ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের পোর্ট ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরিফুল ও মোস্তাফিজুরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে আবার আলোচনা সভা হয়েছে। এতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই দুজনকে আর ওজন স্কেলে রাখা হবে না। আর এখন থেকে দু’ধাপে ওজন করা হবে বলে জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close