বান্দরবান প্রতিনিধি

  ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি

রিমান্ড শেষে কেএনএফের ১০ সন্ত্রাসী কারাগারে

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) গ্রেপ্তার হওয়া ৭৮ জন আসামির মধ্যে আরো ১০ জনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে আসামিদের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজির করা হলে শুনানি শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন বিচারক নুরুল হক। এ দিকে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বম গতকাল শনিবার পর্যন্ত চাকরিতে যোগদান করেননি। তাকে লালমনিরহাটে বদলি করা হয়েছিল

আসামিরা হলেন ভানলাল কিম বম, সাইরাজ বম, রুয়াল কমলিয়ান বম, গিলবার্ট বম, তিয়াম বম, লিয়ান নোয়াই থাং বম, নল থন বম, পেনাল বম, লাল মুন লিয়ান বম ও জাসোয়া বম। তারা সবাই রুমার বেথেল পাড়ার বাসিন্দা। আদালতে সূত্র জানা যায়, রুমা ও থানচি দুই উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতির এবং অস্ত্র লুটপাটের ঘটনায় ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে হাজির করা হলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দুদিনের জন্য রিমান্ড আবেদন করলে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। দুদিন রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে কেএনএফের সদস্য ১০ জনকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেয় আদালত।

এদিকে কেএনএফের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২২ জন নারীসহ ৭৮ জনকে রুমা ও থানচির ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনায় করা ৯টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) বিশ্বজিৎ সিংহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুদিন রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে ১০ জন কেএনএফ সদস্যকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেয় আদালত।

উল্লেখ, গত ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা সোনালী ব্যাংক ডাকাতি, ম্যানেজারকে অপহরণ, মসজিদে হামলা, পুলিশের অস্ত্র লুটের ঘটনায় রুমা থানায় ৫টি মামলা দায়ের করা হয় এবং পরে ৩ এপ্রিল দুপুরে বান্দরবানের থানচি উপজেলার সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে আর এই ঘটনায় ৪টি মামলা দায়ের হওয়ায় পর পুলিশ অভিযান শুরু করে এই পর্যন্ত মোট ৯টি মামলায় ২২ জন নারীসহ ৭৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী।

রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বম গতকাল শনিবার পর্যন্ত চাকরিতে যোগদান করেননি। তাকে লালমনিরহাটে বদলি করা হয়েছিল। রুমা সদরের ২নং ওয়ার্ডে তার নিজ বাসাতে তিনি নেই। বদলির আদেশের পর কোথায় রয়েছেন কুকি-চিন প্রধান নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বম। এ প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয়দের মাঝে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে তথ্য নেই । নাথান বম পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান তিনিও আত্মগোপন করেছেন। এরই মধ্যে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রধান নাথান বমসহ বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে।

নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বম আলোচনায় এলে সেখান থেকে তাকে গত ৮ এপ্রিল লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়।তবে তিনি এখনো সেখানে যোগদান করেননি। এবং নিজ বাড়িতেও তার সন্ধান মিলছে না। জানা যায়, সর্বশেষ ৮ এপ্রিল লাল সমকিম বম রুমা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওইদিন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উপসচিব (পরিচালক প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, নার্সিং সেবা ১ শাখার এক স্মারকের আলোকে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লাল সমকিমকে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়। তবে বদলি আদেশের পর লাল সমকিম বম বদলিকৃত কর্মস্থলে উপস্থিত হননি বলে জানা গেছে। বদলির পরিপত্রে ৯ এপ্রিলের মধ্যে কর্মস্থলে আবশ্যিকভাবে যোগদানের কথা বলা হয়। অন্যথায় ৯ এপ্রিল অপরাহ্নে স্ট্যান্ডরিলিজ বলে গণ্য করা হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এদিকে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বামংপ্রু মারমা বলেন, ‘নার্স লাল সমকিম বমকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে তিনি আর হাসপাতালে আসেননি।’ লাল সমকিম বম কোথায় আছেন সেই তথ্যও তাদের কাছে নেই বলেও জানান তিনি।

বদলির বিষয়ে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রমজান আলী বলেন, ‘নার্স লাল সমকিম বম সেখানে যোগদান করেননি।

এ বিষয়ে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বশীল এক অফিসার বলেন, লাল সমকিম বমকে বদলির পর তার আর কোনো সন্ধান মিলছে

না। বদলি কার্যকর হওয়ার পর বদলির কাগজ নিয়ে তার বাড়িতে গিয়েও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তারা তাকে পায়নি বলেও জানান তিনি। এছাড়া মোবাইলেও নার্স লাল সমকিম বমে পাওয়া যায়নি বলেও যোগ করেন তিনি।

রুমা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য (সংরক্ষিত) কল্যানি চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন ধরে নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বমকে নিজ বাড়িতে দেখা যাচ্ছে না। তিনি কোথায় আছেন সঠিক তথ্যও জানা নেই বলেও জানান তিনি। এদিকে লাল সমকিম বমের বাড়িতে নাথান বমের যাতায়াত ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কল্যানি চৌধুরী জানান, ‘প্রায় দুই বছরেও নাথান বম এই বাড়িতে আসার কোনো খবর কেউ পাননি।

রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি এই উপজেলায়। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তিনি (লাল সমকিম বম) এলাকাতে নেই। তিনি আরো বলেন, তাকে (লাল সমকিম বম) যদি প্রশাসন গ্রেপ্তার করত তাহলেও সবাই বিষয়টা জানতো। তবে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমাদের কাছে নাথান বমের স্ত্রীর কোনো তথ্য নেই। তিনি এলাকায় আছেন কি নেই, তাও পুলিশের জানা নেই’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close