আবদুস সালাম বাবু, বগুড়া

  ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

বগুড়ার গাবতলী

মা-ছেলের কঠিন শ্রমে সর্ষের তেল

গরু বা যন্ত্রচালিত ঘানি হলে কষ্ঠ লাঘব হতো মা-ছেলের

কখনো কাঁধে কখনো বুকের পাঁজরে ঘানির জোয়াল ঠেকিয়ে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন বয়স্ক মা ও তার ছেলে। ষাটোর্ধ্ব মা আঙ্গুর বেগম একপাশে ঘানির আর অপর পাশে তার ৪০ বছর বয়সি ছেলে আমিনুর। তাদের শরীরে ঘাম ঝরছে, এই অক্লান্ত পরিশ্রমে সরিষার ঘানি থেকে বেরিয়ে আসছে ভোজ্যতেল। কাঠের ঘানিতে এভাবেই ভাঙা হচ্ছে সরিষা।

মা ছেলের হাড়ভাঙা এ পরিশ্রমে ঘুরছে ঘানি আর সরিষা দানা থেকে ফোটায় ফোটায় চুয়ে চুয়ে পড়ছে তেল। এভাবেই চলছে তাদের জীবন। হতদরিদ্র এই পরিবারের ৫ সদস্যর মুখে খাবার তুলে দিতে উপার্জনের পথ এই ঘানি। এ চিত্র বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউপির দাসকান্দি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে। সমাজের বিত্তবান, সামর্থ্যবান বা জনপ্রতিনিধি কেউ তাদের খবর নেয় না। তার আপসোস করে বলেছেন, একটা গরু বা যন্ত্রচালিত ঘানি হলে কষ্ঠ লাঘব হতো মা-ছেলের।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, বাপদাদার আমল থেকেই ঘানিতে সরিষা ভেঙে তেল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে তারা। বাবা ছহির উদ্দিনের সঙ্গে মা আঙ্গুর বেগম এই ঘানি টানতো, ছেলে আমিনুল নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করত, কয়েক বছর আগে শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় আর বাবা ছহির উদ্দিন আড়াই বছর আগে মারা যাওয়ায় সংসারের ঘানির পাশাপাশি বাবার কাঠের ঘানিও কাঁধে তুলে নিয়েছেন আমিনুর। তার মা আগে বাবার সঙ্গে সহযোগিতা করলেও এখন ছেলের সঙ্গে ঘানি টানছেন। আর এভাবেই চলছে তাদের জীবন। সংসারের বোঝা টানতে কাঁধে তুলে নিয়েছেন পুরোনো দিনের কাঠের ঘানি। সংসারে অভাব অনটন থাকায় গরু কিনতে না পেরে তিনি নিজে গরুর জোয়াল কাঁধে নিয়ে ঘানি টানার কাজ করছেন। কাজটি অত্যন্ত পরিশ্রমের হওয়ায় তার বৃদ্ধ মা এবং তার স্ত্রী তাকে ঘানি টানার কাজে সহযোগিতা করেন। প্রতিদিন ঘানিতে ৫ কেজি সরিষা ভেঙে দেড় কেজি তেল আর ৩ কেজি খইল পান তা দিয়েই চলছে তাদের ৫ জনের সংসার।

আমিনুর ইসলাম বলেন, বাপদাদার আমল থেকেই ঘানি টেনে তেল তৈরি করেন তারা। বাবা-মা কষ্ট করেই এভাবেই তেল তৈরি করেন। তাদের নিজস্ব কোনো জমি জমা নেই। আগে তিনি নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন, অসুস্থ হওয়ার পর আর সেই কাজ করেন না। তার বাবা ছহির উদ্দিন আড়াই বছর আগে মারা গেছেন, এরপর থেকে সংসারের দায়িত্বর পাশাপাশি এই কাঠের ঘানিরও দায়িত্ব নিয়েছেন। একটা গরু ও যন্ত্রচালিত ঘানি কেনার সামর্থ্য নেই তাদের, তাই এভাবেই চলছে তাদের জীবন। তিনি তাদের পরিবারের জন্য সরকার কিংবা সমাজের দয়ালু ধনী মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন।

আমিনুর ইসলামের মা আঙ্গুর বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই তিনি এই ঘানি টানার কাজ করেন, সংসারে অভাব তাই এভাবেই কষ্ট করে চলছেন। ছেলের কাজে সহযোগিতা করছেন। জনপ্রতিনিধিরাও তাদের খবর রাখেন না। একটা গরু বা যন্ত্রচালিত ঘানির ব্যবস্থা হলে মা-ছেলের কষ্ট কমত তাই সহযোগিতা চাইলেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, আমিনুর কষ্ট করে ঘানিতে তেল তৈরি করেন। তবে তাদের কাঠের ঘানির তেল একেবারেই খাঁটি ও সুস্বাদু। দরিদ্র পরিবারের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আহসানুল কবির ডালিম বলেন, আধুনিক সভ্যতার এ যুগে মা-ছেলের কাঠের ঘানি টেনে সংসারের বোঝা বইয়ে নেওয়া সত্যি অমানবিক। বিত্তবানসহ সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন এমন পরিবারের পাশে। এ পরিবারটিও হতে পারে গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।

গাবতলীর কাগইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ মোল্লা জানান, এলাকার মানুষ ও বক্তিগতভাবে সহায়তার পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close