বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২২

পর্যটনে আবার করোনার ধাক্কা

বাতিল হচ্ছে হোটেল-মোটেল বুকিং

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে পর্যটন ব্যবসায়। কমে আসছে পর্যটকদের আনাগোনা। হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম রুম বুকিং হচ্ছে। আবার অনেকে রুম বুকিং দিয়ে করোনায় আক্রান্ত ও বিধিনিষেধে বুকিং বাতিল করছেন। ভিড় নেই সমুদ্রসৈকত, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দোকানসহ স্পটগুলোতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে মানুষ আতঙ্কিত। অনেকটা ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ও যেকোনো মুহূর্তে লকডাউনের ঘোষণা আসতে পারে, এমন আতঙ্কে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে।

পর্যটন মৌসুমে স্বাভাবিকভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও সবসময় অন্তত ৫০ ভাগ রুম বুকিং থাকে। কিন্তু নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে রুম বুকিং এখন ২০ শতাংশে নেমেছে। আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রুম বুকিং থাকে। সেটিও ৪০ শতাংশে নেমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে নতুন করে পর্যটন ব্যবসায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কলাতলির হোটেল বে-মেরিনার ম্যানেজার রফিক উল্লাহ জানান, করোনার বিধিনিষেধে অনেকটা কমতে শুরু করেছে পর্যটক। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার উপলক্ষে বেশ কয়েকটি রুম বুকিং ছিল। কিন্তু করোনায় আক্রান্তের অজুহাতে বেশিরভাগ রুমের বুকিং বাতিল করেছে। এভাবে চললে আবার ধস নামবে ব্যবসায়।

সেন্টমার্টিন নৌ-রুটের জাহাজ কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড লিমিটেডের কক্সবাজার অফিস ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী জানান, গত কয়েক দিনে বড় বড় তিনটি গ্রুপ জাহাজের বুকিং বাতিল করেছেন। সরকারি ছুটি বাতিল হওয়ায় প্রশাসনের ৯৫ জনের একটি গ্রুপ বুকিং বাতিল করেছে। প্রতিদিন জাহাজে সিট খালি যাচ্ছে এখন।

ছিদ্দিকী আরো জানান, সরকার আবার কখন লকডাউন দেয় তা নিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছে। এর কারণেও অনেকে আসার সাহস করছে না।

নারায়ণগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা কাশেম জানান, অনেক দিন পর কক্সবাজারে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে খুবই ভালো লেগেছে। তবে করোনা ও প্রশাসনের বিধিনিষেধের খবর দেখে দুদিন আগে বাড়িতে চলে যেতে হচ্ছে।

একই অবস্থা নামি-দামি খাবারের হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের আইটেম প্রস্তুত করলেও ভোজনরসিক পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় অনেক খাবার নষ্ট হচ্ছে। এমনকি নতুন করে লকডাউনের ঘোষণা এলে বড় ধরনের লোকসান আতঙ্ক কাজ করছে তাদের মাঝে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, শুধু করোনার কারণে নয়, বিভিন্ন কারণে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। করোনার পাশাপাশি এতদিন স্কুল খোলা ছিল, স্কুলের ট্যুরও বন্ধ। এখানে যারা আসেন বেশিরভাগ ফ্যামেলি ট্যুরে আসেন। সে হিসেবে ফ্যামিলির কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আর আসা হয় না। তিনি আরো জানান, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। বিশেষ করে যারা আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছেন তারা ভয়ে আসতে চান না।

এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রতিদিন তিন-চারটি টিম নিয়ে প্রতিনিয়ত হোটেল-মোটেল জোনসহ শহরের বিভিন্ন স্পটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান।

জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা জানান, নিয়মিত অভিযান হিসেবে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে হোটেলগুলোতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোনো বিষয়ে অসঙ্গতি পেলে জরিমানাও করা হচ্ছে। বিশেষ করে পর্যটকদের মাস্ক ছাড়া সমুদ্রসৈকতে ঘুরাফেরা করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close