নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

গার্মেন্ট পণ্য চুরির সিন্ডিকেট

বিভিন্ন গার্মেন্টে শিল্পের কোটি কোটি টাকার পণ্য চুরি করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বিদেশে রপ্তানিযোগ্য এসব পণ্য চুরির ঘটনায় গার্মেন্ট মালিকদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ক্ষুণœ হচ্ছে দেশের পোশাক শিল্পের মান। অন্তত পাঁচ হাজার গার্মেন্টে পণ্য চুরির মূলহোতাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ। তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৭০৫ পিস তৈরি পোশাকসহ দুটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়েছে। এই চক্রের হোতা সিলেটি সাঈদের বিরুদ্ধে রয়েছে ২৪টি মামলা আছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামের গার্মেন্টসের ১৭ হাজার ১৫২ পিস তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার পথে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হলে সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন রাজ্জাক, ইউসুফ, মাইনুল, আলামিন, দুলাল হোসেন ও খায়রুল।

গতকাল সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিবহনে যুক্ত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের যোগসাজশে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করছে সংঘবদ্ধ চোরাই চক্রটি। বিশ্বে লিডিং রপ্তানিকারক বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ঘিরে চোরচক্রের কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে। সংঘটিত চুরির ঘটনায় চোরাই মালামাল ও দুটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার এবং গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্রের মূলহোতাসহ সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ কে এম হাফিজ আক্তার ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, গত ১১ মে জয়ন্তি নিটওয়্যার লিমিটেড তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০ পিস পণ্য শিপমেন্ট করতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছার পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম। এজন্য বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।

ওই ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করে গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইমরান, মোবারক ও ইব্রাহিম নামে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। অন্যদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামক গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক ১ হাজার ৪৩১ কার্টনে মোট ১৭ হাজার ১৫২ পিস বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। মালামাল শিপমেন্টের সময় গণনাকালে ৫ হাজার পিস মাল কম পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন তারা।

হাফিজ আক্তার বলেন, তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় উত্তরা এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ রাজ্জাক, ইউসুফ, খায়রুল ও মাইনুলকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে কুমিল্লার বুড়িচং থানার নিমসার এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ আল-আমিন ও দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুরো চক্রের মূলহোতা মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার সিলেটি সাঈদের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলা রয়েছে। চট্টগ্রামে তিনি ছয়টি মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। চোরচক্রের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন সময় চার থেকে পাঁচ হাজার চুরির ঘটনায় হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য।

হাফিজ আক্তার বলেন, সিলেটি সাঈদের স্ত্রী-সন্তান লন্ডনে বসবাস করেন। মৌলভীবাজারে রয়েছে তার বিশাল অট্টালিকা। প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ রয়েছে তার। এসব যানবাহন তিনি ভাড়ায় ব্যবহার করতেন গার্মেন্ট পণ্য শিপমেন্টের কাজে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনে যুক্ত। নিজের ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ব্যবহার করে ও এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের সহায়তায় সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন সাঈদ।

চোরাই গার্মেন্টস পণ্য কোথায় বিক্রি ও কারা ক্রয় করছেন জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে বেশ কয়েকজনের নাম জেনেছি। তদন্তের স্বার্থে বলছি না। দেশের ছোট ছোট কিছু বায়িং হাউসে যাচ্ছে সেসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য। আর ওইসব পণ্য ছোট বায়িং হাউসগুলো বিদেশি ছোট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মার্কেটেও যাচ্ছে সেসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close