নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

নদীতীরের ধর্মীয় স্থাপনা সরিয়ে নিতে প্রকল্প

* ঢাকার ৪ নদী ঘিরে ১১৩ ধর্মীয় স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান * সুন্দর ভাবনা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী

ঢাকার চার পাশের নদী দখল করে গড়ে ওঠা মসজিদসহ ধর্মীয় স্থাপনা স্থানান্তর করে নদীর সীমানার বাইরে নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর তীরভূমিতে বিদ্যমান মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা স্থানান্তর করে বাইরে নির্মাণ নিয়ে সভার শুরুতে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

সভায় জানানো হয়, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদী দখল করে ১১৩টি ধর্মীয় স্থাপনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা ও মাজার রয়েছে ৭৭টি; কবরস্থান ও মৃত ব্যক্তির গোসলখানা পাঁচটি; ঈদগাহ একটি; স্কুল ও কলেজ ১৪টি; স্নানঘাট, মন্দির ও শ্মশানঘাট ১৩টি এবং অন্যান্য স্থাপনা তিনটি।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকাকে বসবাসেরযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দখলমুক্ত করে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই। গত এক বছর ধরে যে উচ্ছেদ অভিযান চলছে, তা মোটামুটি বাধাহীনভাবেই এগিয়ে চলছে।

তিনি বলেন, সেখানে আমাদের কিছু বিষয় আছে যেগুলো সরাসরি বিভিন্ন ধরনের অনুভূতির সঙ্গে জড়িত মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্মশানঘাটসহ অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। যেগুলো আমাদের অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত। সেগুলোতে আমরা কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি, আমরা আলোচনা করছি। এক বছর আগে আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কথাবার্তা বলে মতামত জানানোর জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। উনি বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে সভা করে উঠতে পারেননি। আমরা গত ১০ ডিসেম্বর প্রত্যেকটি মসজিদ, মন্দির, শ্মশান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্নধারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসেছি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আলোচনায় আমরা বলেছি, আমরা এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্ছেদ করতে চাই না, আমরা এটাকে সমন্বয় সাধন করতে চাই। আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি।

দেশে সরকারি অর্থায়নে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, সেই আলোকেই আমরা আলোচনা করেছি। ঢাকার আশপাশে নদীর তীরে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলো যদি পরিকল্পিতভাবে করতে পারি, এর সংখ্যা অনেক কম। এটা করলে যখন আমরা নদী দিয়ে চলাচল করব এই ধরনের সুদৃশ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দেখব সেটাও আমাদের ভালোলাগার একটা বিষয় হবে। বিদেশি মেহমানরাও যখন নদীতে ভ্রমণ করবেন, দেখবেন বাংলাদেশ সরকার একটি সুন্দর চিন্তা-ভাবনা নিয়ে একই ডিজাইনের এই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছে। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে যখন সুন্দর সিদ্ধান্ত আসবে, তখনই আমরা বাস্তবায়নে যাব। এখানে স্থাপনা নির্মাণ, জায়গা নির্মাণের ব্যাপার আছে। (নদী দখল করে) এক জায়গায় তিন-চারটি প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে, সেগুলোতে এক জায়গায় সমন্বয় করা যায় কি না! এগুলো নিয়ে সার্ভে হচ্ছে। কোনো জায়গায় এগুলো করা যায়। এজন্য একটি প্রকল্প করতে হবে। প্রকল্প করে অনুমোদন নেওয়ার পর আমরা বাস্তবায়নে যাব। অনুমোদন দেওয়া প্রকল্পগুলো আমরা বাস্তবায়নে আছি, অনেক ধরনের বাধা আসছে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরে কতদিন লাগতে পারেÑ জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সার্ভে করে প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে, এজন্য ডিপিপি প্রণয়ন করতে হবে। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো মসজিদ ভাঙা হবে না, আমরা সমন্বয় করব। নদীর জায়গায় মসজিদ হবে না, স্থানান্তর হবে, তবে সেটা আলোচনা করেই হবে। এখানে কোনো ফোর্স অ্যাপ্লাই করা হবে না।

খালিদ মাহমুদ বলেন, অনেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে একটা অস্থিরতা, কিছু কথাবার্তা চালাচালি করছে। যেটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। অতীতেও আমরা দেখেছি, এই ধরনের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে অনেকে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে, তারা কিন্তু ধর্মের প্রতি সম্মান দেখায়নি। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এগুলো করেছেন। বিভ্রান্তমূলক কথাবার্তা কেউ অব্যাহত রাখতে এক্ষেত্রে সরকার শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

সভায় নৌ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আবদুস সামাদ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, বিআইডব্লিউটিএ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close