বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ১৪ দফা অভিযোগ জানালেও কার্যত ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের অপসারণের এক দফা দাবিতে অনড় রয়েছেন তারা। চলমান আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংবাদ সম্মেলনে এ বার্তাই জানান দিয়েছেন তারা।

ভিসির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণকাজ শুরুর আগেই আড়াই কোটি টাকা নির্মাণব্যয় দেখানো, তুচ্ছ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শোকজ, অকথ্য ভাষায় গালাগাল, অন্যায়ভাবে আটজনকে বহিষ্কার, তুচ্ছ বিষয়ে অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান, ভিসি কোটার নামে ভর্তি-বাণিজ্য ও জালিয়াতি, মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি-ফি ও সেমিস্টার-ফি আদায়; কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ক্যাফেটারিয়া, অডিটোরিয়াম বা টিএসসির মতো কোনো অবকাঠামো তৈরি না করা; বৃক্ষরোপণ ও গোবর বাণিজ্য, চাকরির প্রলোভন দিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে খাটো করে দেখা, ১৫ আগস্ট সঠিকভাবে পালন না করা, এখতিয়ারবহির্ভূত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা, মেধাবীদের বাদ দিয়ে নিয়োগ দেওয়াসহ ১৪ দফা অভিযোগ তুলে ধরেছে শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ দাবি করে বলেছেন, ভিসি নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগই এর একমাত্র সমাধান।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেছে, ‘পরিপূর্ণ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত স্বৈরাচারী ভিসি’র নৈতিক স্খলন চরম পর্যায়ে চলে গেছে; যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে চরমভাবে বিষাক্ত করে তুলেছে। ভিসির বন্দি জিঞ্জির থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে গেলেও এ আন্দোলন বানচালের জন্য ভিসি নাসিরউদ্দিন সর্বক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভিসিপন্থি লোকজন নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’

এদিকে সোমবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক, যিনি আন্দোলনত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চার দিন আগে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন, সেই শিক্ষক মো. হুয়ায়ুন কবির গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি জানান, তার নাম ব্যবহার করে ভিসিপন্থি অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক, চারিত্রিক ও মানহানিকর খারাপ স্ট্যাটাস দিচ্ছে এবং অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে। তারা তাকে নানা ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে। ভিসিপন্থিরা তার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।

হুমকির অভিযোগে গোপালগঞ্জ থানায় আরো এজাহার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মিরা খাতুন। তার অভিযোগ, গত শনিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চলাকালীন সময়ে কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল যুবক তাকে হুমকি দেয়। পরদিন রোববার সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখভাগে সোবহান সড়কের মুখে তারা তার ওপর হামলা চালায় এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনরত অবস্থায় মাহমুদ হাসান ও সীমান্ত নামের শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। গত শনিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও কর্তব্যরত ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি।

"