জহির রায়হান, কাউনিয়া (রংপুর)

  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

বাণিজ্য

কাউনিয়ার নান্দনিক টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

রংপুরের কাউনিয়া

কাউনিয়ায় নারীদের সুইয়ের ফোঁড়নে কাপড়ে দৃশ্যমান হয় নান্দনিক নকশা। সেই নকশা করা কাপড়ের তৈরি টুপি পাঠানো হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বিনিময়ে দেশে আসে বৈদেশিক মুদ্রা। এতে গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এই টুপিই তাদের সংসারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে।

রংপুরের কাউনিয়ার সাব্দী গ্রামে ১৯৯৮ সালে টুপির কাজ নিয়ে আসেন জহির উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী। ভোলা জেলা থেকে আসা এ ব্যবসায়ীর জন্য বাড়ির একটি ঘর ছেড়ে দেন মৃত আবোর উদ্দিন। সেই ঘরে থেকেই প্রথম শুরু হয় নারীদের সূক্ষ্ম হাতের টুপির কাজ। শুরুর দিকে কয়েকজন নারী এ কাজ করলেও পরে অনেকেই জড়ান এ পেশায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই টুপির চাহিদা থাকায় পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি জহিরকে। বর্তমানে শুধু সাব্দী গ্রাম নয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নারীরা টুপি তৈরি করে নিজেদের স্বাবলম্বী করেছেন। কাউনিয়া উপজেলার খোপাতি, চানঘাট, পূর্বচানঘাট, বল্লভবিষু, ভূতছাড়া, সাব্দী, হরিশ্বর, পাঞ্জরভাঙ্গা, গদাই, তালুকশাহবাজ, নিজপাড়া, মধুপুর, ভায়ারহাট, কুটিরপাড়, শিবু, চরনাজিরদহ গ্রামের ১৬ হাজারের বেশি নারী পেশা জড়িত।

ভুতছড়া গ্রামের আমিছা বলেন, স্বামীর আয়ে সংসার চলছিল না। এখন সংসারের কাজের ফাঁকে টুপি তৈরি করে মাসে ৩ হাজারেরও বেশি টাকা আয় করি। এতে সংসার ভালোভাবেই চলছে।

সাব্দী গ্রামের আগুরা বেগম বলেন, স্বামীর আয়ে সংসার ঠিকমতো চলছিল না। এখন টুপি সেলাইয়ের আয়ে ভালো আছি। তিনি বলেন, শুরুর দিকে একটা টুপি সেলাই করলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হতো। বর্তমানে কাজভেদে টুপি সেলাই করে পাচ্ছেন ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা।

ক্ষুদ্র টুপি ব্যবসায়ী জজ মিয়া বলেন, আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে নকশা করার জন্য নারীদের সুই-সুতাসহ টুপি দিয়ে আসি। নকশা হয়ে গেলে টাকা দিয়ে তা আবার ফেরত নিয়ে আসি। বিভিন্ন কারখানার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে টুপিগুলো কিনে নেয়। এতে মোটামুটি ভালোই লাভ হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা নিজস্ব উদ্যোগে ছোট ছোট কারখানা দিয়েছেন। এসব কর্মযজ্ঞে তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান, যা এক সময়ের মঙ্গাকবলিত তিস্তাপাড়ের হতদরিদ্র হাজারো নারীকে কাজের সুযোগ দিয়েছে। জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে পাকিস্তানি টুপি শীর্ষস্থান দখল করে থাকলেও রংপুর অঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন টুপি ওমান, কুয়েত, কাতার, সৌদি ও বাহরাইনসহ প্রায় ২০টি দেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে। রপ্তানিযোগ্য এ শিল্পের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন বালাপাড়া ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামের টুপি ব্যবসায়ী আ. আউয়াল। তিনি বলেন, বেকার ও দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই টুপিশিল্প সচ্ছলতার পথ খুলে দিয়েছে। কর্মী ও এজেন্টদের মাধ্যমে আমরা টুপি তৈরি করে নিচ্ছি। কর্মীদের বাড়ি বাড়ি সুতাসহ টুপি দিয়ে আসি নকশা করার জন্য। প্রতি মাসে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টুপি ওমানে পাঠানো হচ্ছে। মান, আকার ও প্রকারভেদে একেকটি টুপি তৈরিতে খরচ পড়ছে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এসব টুপি ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

সাহাবাজ গ্রামের টুপির এজেন্ট গোলাম রব্বানী বাবু বলেন, ১৩টি কেন্দ্র থেকে মাসে প্রায় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টুপি বিক্রি করেন। তাদের অনেকে মনে করেন সরকারি অনুদান পেলে এ শিল্পের আরো প্রসার ঘটবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close