নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতপূর্ণ নয়

ভোট নিয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, ‘সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বলা গেলেও, তা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারেনি।’ ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যালোচনার’ প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের এই পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সমান সুযোগ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে টিআইবি বেশ কিছু নির্দেশনা তুলে ধরে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে প্রচারকার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থাটির মতে, এ ধরনের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। ভোট নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার দাবি করে টিআইবি বলেছে, ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে’। প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোট হওয়া ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে দলটি, জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অন্যদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা মিলে মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে।

ভোটে জয়ী আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে সরকার গঠন করেছে। এই নির্বাচনে অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বিএনপি জোটের নেতারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় ভোট দাবি করেছেন তারা।

এই প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে টিআইবি কর্মকর্তারা জানান, ৩০০টি আসনের মধ্যে ৫০টি আসন দৈবচয়নের ভিত্তিতে বেছে নিয়ে সেখানে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেন তারা। প্রধান দুটি জোটের এবং ক্ষেত্রবিশেষে তৃতীয় প্রার্থীর ওপর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। মোট ১০৭ প্রার্থীর তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “কমিশন গুরুত্বপূর্ণ অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হয়নি। নির্বাচন কমিশন সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ হ

আছে কি নাÑ তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল।”

এ ছাড়া নির্বাচনের সময় তথ্যপ্রবাহ ‘নিয়ন্ত্রণ’ ছাড়াও ক্ষমতাসীন দল-জোটের কোনো কোনো কার্যক্রম নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে বলে পর্যবেক্ষণ টিআইবির।

তারা বলছে, প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখা গেছে। প্রচারণার জন্য নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া আসনপ্রতি নির্ধারিত ব্যয়সীমার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে। এটা আইনপ্রণেতাদের আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে অনীহার প্রমাণ দেয়।

প্রতিবেদনটি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনের পর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে বিধি মানা না হওয়ায় নির্বাচন আংশিক অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। ভোটারদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোট দেওয়ার সমান সুযোগ ছিল না। সব দলের প্রার্থীরা প্রচারণায় সমান সুযোগ পাননি।’

নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশিত নিরপেক্ষতার অভাব ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সময়মতো উদ্যোগ নেওয়ায় ব্যর্থতা ছিল। মোটা দাগে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায়। কারণ, সব দল প্রার্থী দিয়েছিল। আংশিক অংশগ্রহণমূলক এ কারণে বলা হচ্ছে, সবাই সমান সুযোগ পায়নি। ‘গণতন্ত্রের জন্য এ ধরনের নির্বাচন ইতিবাচক নয়। এটাও ঠিক যে একটা নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র আসে না আবার ধ্বংসও হয় না।’

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ‘নির্বাচনে যদি সমান সুযোগ দেওয়া না হয়, তবে গণতন্ত্রের জন্য এটা ভালো নয়। সেই কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলা হচ্ছে। নির্বাচনে সবাই সমান সুযোগ পাবে এটাই বাঞ্ছিত।

‘সবাই সমান সুযোগ না পেলে সংশয় থেকেই যায়। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো উদাহরণ রাখে না। নির্বাচন পরিচালনায় প্রচুর ত্রুটি ছিল। এ জন্য আমরা বলছি, ত্রুটিগুলো সংশোধন করে সামনের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু করবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close