শাহ্জাহান সাজু

  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ঢাক বিভাগের ব্যবসায় মন্দা

টিকে থাকতে ইএমটিএস ফি কমানোর প্রস্তাব

ব্যবসায় মন্দাভাব ডাক বিভাগের ‘ইলেকট্রনিক মানি টান্সফার সার্ভিসের (ইএমটিএস)। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ইএমটিএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমে গেছে ৯৫ শতাংশ। অতিরিক্ত ফি-এর কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে ফি কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ইএমটিএসের মাধ্যমে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বিভিন্ন জায়গা থেকে সেবা গ্রহীতাদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যেখানে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে মাত্র ১১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। হিসাব করে দেখা গেছে, চার বছরের ব্যবধানে ইএমটিএসের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ কমেছে প্রায় ২ হাজার ৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। টাকা পাঠানোর অতিরিক্ত ফি এবং বেসরকারি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কারণে ডাক বিভাগের এই সার্ভিসের এমন অবস্থা। বর্তমানে ২ হাজার ৭৫০টি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।

অর্থ বিভাগে পাঠানো ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে ইএমটিএসের ফি-এর একটি বিবরণী পাঠিয়ে তা হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ইএমটিএসের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠাতে গেলে একজন গ্রাহককে ফি হিসেবে দিতে হয় ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। অন্যদিকে, ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে ফি দিতে হয় ৯২৫ টাকা। যেখানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে খরচ অনেক কম। যেমন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ পরে মাত্র ৫ টাকা। আর ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে খরচ পরে ১০০ টাকারও কম। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ইএমটিএসের মাধ্যমে বর্তমানে যেখানে এক হাজার টাকা পাঠাতে সাড়ে ১৮ টাকা প্রেরককে দিতে হয়, সেখানে এই ফি কমিয়ে ১০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে ডাক অধিদফতর। একইভাবে ৪ হাজার টাকা পাঠানোর ফি বিদ্যমান ৭৪ টাকা কমিয়ে ২০ টাকা, ৫ হাজার টাকা পাঠানোর ফি সাড়ে ৯২ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা, ১০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি ১৮৫ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, ২০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি ৩৭০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, ৩০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি ৫৫৫ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা এবং ৫০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি বিদ্যমান ৯২৫ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ডাক বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবছরই ধারাবাহিকভাবে ইএমটিএসের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমেছে। ২০১৩-২০১৪ সালে এই মাধ্যমে প্রেরকরা পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২০১৪-২০১৫ সালে তা প্রায় অর্ধেক কমে দাঁড়ায় ৫৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০১৫-২০১৬ সালে তা আরো কমে দাঁড়ায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা অর্ধেকেরও বেশি কমে হয়েছে ১১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে ডাক অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই সেবাটি চালু হয় ২০১০ সালের ২৬ মার্চে । প্রথম দিকে মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় সেবাটি। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের নিকটজনের কাছে পাঠাতে শুরু করেন গ্রাহকরা। তবে বিভিন্ন ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এই সেবাটি অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। এর অন্যতম কারণ হলো, এই সেবার ফি বর্তমান বাজার অনুযায়ী, অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। অত্যধিক ফি-এর কারণে এখন এই সেবা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close