খালেকুজজামান পান্নু, পাবনা

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

পাবনার শুঁটকি যাচ্ছে বিদেশে এলাকায় এসেছে সচ্ছলতা

পাবনার সাঁথিয়া ও চলন বিলের শুঁটকি মাছের কদর বেড়েছে দেশে-বিদেশে। এইসব বিলের শুঁটকি মাছ রফতানি হচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এতে এলাকায় কর্মসংস্থান বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা।

দেশি মাছকে কেন্দ্র করে পাবনার সাঁথিয়ার প্রত্যেকটি বিল ও ক্যানেলের পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল। গোপিনাথপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আফজাল মিয়া শুঁটকির চাতাল গড়েছেন সাতানী ও আরাজি গোপিনাথপুর এলাকায়। তিনি জানান, গত বছর তার চাতালে ৫০ থেকে ৭০ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। সৈয়দপুর, নীলফামারীসহ বিভিন এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা এসে চাতাল থেকেই শুঁটকি কিনে নেয়। আবার প্রয়োজনে আমদেরও পৌঁছিয়ে দিতে হয়। তবে এ বছর তার চাতালে কি পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হবে তা তিনি জানাতে পারেননি। এ ব্যবসা চলে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৪-৫ মাস। চলতি মৌসুমে এসব চাতালে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের ১৫০ থেকে ২০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাতাল থেকে পছন্দের শুঁটকি মাছ কিনে নিয়ে যায়। শুঁটকি মাছের মান ভেদে তারা ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। ‘এ’ গ্রেডের (ভালো মানের) শুঁটকি মাছ মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ প্রায় ২৫টি দেশে রফতানি করা হচ্ছে বলে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান। সাধারণত এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে রয়েছে পাবনার সাঁথিয়া ও সুজানগরের বিভিন্ন এলাকাসহ চলনবিলের শুঁটকি মাছের কদর।

তাছাড়া ‘সি’ ও ‘বি’ গ্রেডের শুঁটকি মাছ দেশের ভেতরে দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে চলনবিলের শুঁটকি মাছ। সৈয়দপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ী এখলাছ মিয়া জানান, পাবনার সাঁথিয়া মুক্তরের বিল, ঘুঘুদহ বিল, সুজানগর গাজনার বিল ও চাটমোহরের চলনবিলের শুঁটকি মাছের মান ভালো। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলনবিলের শুঁটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

চলতি মৌসুমে চলনবিলে ২৫০টি অস্থায়ী চাতালে মাছ শুঁটকি করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শুঁটকি তৈরির চাতাল মালিকরা এখানে আস্তানা গেড়েছেন। জানা গেছে, সাধারণত তিন থেকে ছয় লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করা যায়। পানি কমতে থাকায় চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে পুঁটি, খলসে, চেলা, টেংরা, কই, মাগুর, শিং, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, গুচিবাইম, বোয়াল, ফলি, কাতল, লওলা, শোল, গজারসহ নানা জাতের মাছ। এসব মাছ কিনে অথবা নিজেরা চাতালে শুকিয়ে উৎপাদন করছে শুঁটকি। পরে এই শুঁটকি পাঠানো হচ্ছে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

জানা যায়, পাবনার সাঁথিয়া, সুজানগর ও চলনবিল এলাকায় দুই সহস্রাধিক পরিবার শুঁটকি তৈরির কাজে জড়িত রয়েছেন। এসব পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যরা দিন হাজিরায় কাজ করছেন শুঁটকির চাতালে। কাজের ধরন অনুয়ায়ী, তারা মজুরি পাচ্ছেন ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। এ কাজ করে তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন। তবে তারা পুরুষ শ্রমিক থেকে অনেক কম মজুরি পান বলেও জানান নারী শ্রমিকরা। শুঁটকি তৈরির কাজে নিয়োজিত ননুয়াকান্দি গ্রামের সবিতা, তাহমিনাসহ বেশ কয়েকজন নারী-পরুষ শ্রমিক জানান, তিন কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে এক কেজি শুঁটকি তৈরি হয়। প্রকার ভেদে শুঁটকির বাজার মূল্য ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। চলতি মৌসুমে শুধু চলনবিলের মাছ থেকে ১১০ থেকে ১২৫ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা হবে বলে সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে।

বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের তারাশ উপজেলার মহিষলুটির শুঁটকির আরতদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই মহাসড়ক নির্মাণের আগে চলনবিল থেকে আহরিত বিপুল পরিমাণ মাছ অবিক্রীত থাকত। এসব মাছ পরে শুঁটকি করা হতো অথবা ফেলে দেওয়া হতো। তখন উদ্বৃত মাছ স্বল্প মূল্যে কিনে শুঁটকি তৈরি করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে অনেক শুঁটকি চাতাল মালিক বড় অঙ্কের টাকা উপার্জন করতেন। আর এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারিরা চলনবিলের মাছ ও শুঁটকি কিনে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। চলনবিলের দেশীয় প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরির চাতালগুলো অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চালু থাকে।

চলনবিলের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, শুঁটকি ব্যবসায় জড়িত হয়ে তারা আর্থিকভাবে সচ্ছলতার দেখা পেয়েছেন ঠিকই; তবে এ ব্যবসায়ে ঝুঁকিও অনেক বেশি। ঠিকমতো শুঁটকির পরিচর্চা করতে না পারলে অনেক ক্ষেত্রে শুঁটকি নষ্ট হয়ে যায়। আর এ ধরনের সমস্যায় পড়লে মূলধন খোয়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। সরকারিভাবে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হলে তারা এ ব্যবসায়ে আরো উপকৃত হবেন বলে

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist