বেনজীর আহমেদ সিদ্দিকী

  ০১ আগস্ট, ২০২২

দুধ নিয়ে কিছু কথা...

আচ্ছা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সঙ্গে দুধের কি কোনো সম্পর্ক আছে? সাপ কি আসলেই দুধ পান করে? ভারতে স্থানীয় গবেষণায় নাকি দেখা গেছে, গরু যদি বাঁশির সুর শোনে তাহলে তার দুধ উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দুধ নিয়ে এমন অনেক প্রশ্ন, বিশ্বাস ও চিন্তার খোরাক আমাদের চারপাশে থাকলেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি মানুষের খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। যাহোক কথা না বাড়িয়ে চলুন এক নজরে দেখে নিই দুধ নিয়ে কিছু বিষয়...

* চর্বিযুক্ত উপাদানের কারণে দুধ দেখতে সাদা। যদিও দুধ প্রায় ৮৭ শতাংশ পানি দ্বারা গঠিত, যা বর্ণহীন, কিন্তু এর ভিতরে ভাসমান চর্বি এবং প্রোটিন অণুগুলো সব আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে প্রতিফলিত করে, ফলে দুধ সাদা দেখায়।

* একটি গাভী গড়ে ১০ মাস ধরে প্রতিদিন ২৫ লিটার দুধ উৎপাদন করে। স্তন্যদানের সময় একটি উচ্চফলনশীল গাভী প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৬০ লিটার এবং তার পুরো স্তন্যপানকালে ১২,০০০ লিটার পর্যন্ত দুধ উৎপাদন করতে পারে। ম্যারিলিয়া এফআইভি তেত্রো ডি নাইলো নামক একটি ব্রাজিলীয় গাভী ৩৯ বছর পর্যন্ত স্থায়ী দুধ উৎপাদন রেকর্ড করেছে এবং বুক অব গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছে।

* পশ্চিম উগান্ডায় বুনিয়োরো রাজ্যের রাজাকে ওমুকামা বলা হয়। এই শিরোনামের অর্থ ‘উন্নত দুধওয়ালা’ এবং রাজার ভূমিকাকে তার জনগণের খাদ্য হিসেবে বোঝায়।

* বিশ্বের বিরল পনির তৈরি হয় গাধার দুধ থেকে। দীর্ঘদিন ধরে মনে করা হয়েছিল যে, গাধার দুধ থেকে পনির তৈরি করা প্রায় অসম্ভব কারণ এর তরলে জমাট বাঁধার জন্য পর্যাপ্ত কেসিন থাকে না। যাহোক একজন সার্বিয়ান চিজমঞ্জার স্লোবোদান সিমিচ গাধার দুধ থেকে প্রথম পনির তৈরি করে এবং তার পনির প্রতি কেজি ১,০০০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়। আধা কেজি পনির তৈরি করতে প্রায় ১০ লিটার দুধ লাগে।

* দুধই একমাত্র খাদ্য যা পান করে আপনি সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে পারেন। দুধে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান থাকে।

* গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে- গ্যালাক্সি ঈশ্বরের কাছ থেকে ছিটকে যাওয়া দুধের রানি থেকে তৈরি হয়েছে। পৌরাণিক কাহিনিতে জিউসের স্ত্রী হেরা যখন শিশু হারকিউলিসকে দূরে ঠেলে দিচ্ছিলেন তখন তার স্তন থেকে কয়েক ফোঁটা দুধ রাতের আকাশে নেমেছিল। সেখান থেকেই ‘মিল্কিওয়ে’ নামটি আসে।

* লোকসমাজ ও কিছু বিশ্বাসে প্রচলিত আছে যে সাপ দুধ খায়। কিন্তু দুধ হজম করতে যে উপাদানটি প্রয়োজন হয় তা সাপের পাকস্থলীতে কখনো তৈরি হয় না। ফলে সাপ দুধ হজম করতে পারে না। অনেক সাপের ক্ষেত্রেই দুধ বিষের মতো কাজ করে। কিছু সাপ দুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারাও যায়। তবে সাপের খেলা দেখায় যারা, তাদের কাছে সাপ দুধ খাচ্ছে, এই দৃশ্য আপনি দেখেও থাকতে পারেন। সাপকে দীর্ঘদিন পানি না পান করানোর পর যে কোনো ধরনের তরল পদার্থ পান করতে দিলে তারা সেটাই পান করে। সাপকে দুধ খাওয়ানোর জন্য সাধারণত এই পদ্ধতিই অবলম্বন করে সাপের খেলা দেখানো ব্যক্তিরা।

* বিশ্ব দুধ দিবস হলো একটি আন্তর্জাতিক দিবস, যা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) দ্বারা বিশ্বব্যাপী খাদ্য হিসাবে দুধের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ২০০১ সালের ১ জুন থেকে প্রতি বছর পালন করা হচ্ছে।

* মার্কিন দুগ্ধ শিল্প বারবার দুগ্ধ বিকল্পের উৎপাদকদের বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করেছে। কারণ তারা বিশ্বাস করে, শুধু পশুর দুধই ‘দুধ’ হওয়ার যোগ্য। তাই দুধের বিকল্প বিষয়টি ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দুধের মতো পদার্থের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং ২০১৮ সালে আদালত রায় দিয়েছিল যে, বাদাম এবং সয়া দুধের মতো বিকল্প দুধ দুগ্ধজাত উপাদানগুলোর দুধের সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

* ভারত বিশ্বের বৃহত্তম দুধ উৎপাদক এবং বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের ২২ শতাংশ এখান থেকে আসে। এরপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পাকিস্তান এবং ব্রাজিল দুধ উৎপাদনে এগিয়ে আছে। ভারতের বৃহত্তম দুগ্ধ রপ্তানি পণ্য হলো স্কিমড মিল্ক পাউডার।

* যে সব খামারি তাদের গাভীকে বিভিন্ন নামে ডাকে, তারা বলে এই নামওয়ালা গাভীগুলো নামবিহীন গাভীদের তুলনায় বেশি দুধ উৎপাদন করে।

* মজার বিষয় হলেও সত্য, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যেসব দেশ বেশি দুধ পান করে তারা নাকি বেশি নোবেল পুরস্কার পায়। ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, যে দেশের নাগরিকরা মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেছে তাদের দেশ সবচেয়ে বেশি নোবেল পুরস্কার জিতেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close