হাসানুজ্জামান তুহিন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) ও দুলাল মিয়া, নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা)

  ০৬ মার্চ, ২০২০

শাহজাদপুর-নাঙ্গলকোট

উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় ফসলি জমিজুড়ে পুকুর

কিছুতেই যেন থামানো যাচ্ছে না কৃষি জমি থেকে মাটিকাটা। সিরাজগঞ্জর শাহজাদপুরে দেড় ডজন ইটভাটায় দুই-তিন ফসলি কৃষি জমির উর্বর মাটির চলে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, ভয়ভীতি ও উচ্চ মূল্যের লোভ দেখিয়ে কেটে নিচ্ছেন এ সব কৃষিজমির মাটি।

এদিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নে শিহর গ্রামে ফসলি জমিতে জোরপূর্বক মৎস্য প্রজেক্ট খনন করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের উদাসিনতায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ভাটা মালিকরা। উর্বর কৃষিজমিতে থেকে প্রতিদিন ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষি উৎপাদন।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : শাহজাদপুর উপজেলার ১৮টি ইটভাটা মালিকরা লোক নিয়েগের মাধ্যমে কৃষকের জমির উর্বরমাটি কিনে নিচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে ও জেলায় শাহজাদপুরের ইটের চাহিদা থাকায় মাটির যোগান মেটাতে ভাটার মালিকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মাটি কেনাবেচার শক্তিশালী একটি চক্র।

পরিবেশ অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলার মাত্র ৩টি ইটভাটাকে পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া আছে। অন্য ভাটাগুলো ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। এদিকে শাহজাদপুরে উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা কৃষি অফিসের লিখিত অনুমতি ছাড়াই কাটা হচ্ছে দুই-তিন ফসলি জমি থেকে মাটি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাড়াদহ ও কায়েমপুর ইউনিয়নে অন্তত ১৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে গাড়াদহ ইউনিয়নেই রয়েছে ১২টি। সূত্র আরো জানায়, গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর ব্লকে ৭টি ইটভাটা রয়েছে। গাড়াদহ ব্লকে রয়েছে ২টি ও টেপরি ব্লকে রয়েছে ৩টি ইটভাটা। এছাড়া কায়েমপুর ইউনিয়নের শিমুলতলি ব্লকে রয়েছে ২টি ও কায়েমপুর ব্লকে রয়েছে ৪টি ইটভাটা। খবর নিয়ে জানা গেছে ইটভাটার মালিকদের কেউ কেউ আবার জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তাদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না ক্ষমতার দাপটে।

জানতে চাইলে শাহজাদপুর ইউএসও শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, ইটভাটা তৈরির পূর্বে স্থানীয় কৃষি অফিস ও ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। তা পরিবেশ অধিদফতরে জমা দিলে তা যাচাই-বাচাই শেষে জেলা প্রশাসনের কাছে মতামত পাঠানো হয়। পরে জেলা প্রশাসন তা যাচাই-বাছাইর পর উপযুক্ত স্থানে ইটভাটা তৈরির অনুমতি দিয়ে থাকেন । তবে সিরাজগঞ্জ প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র পাওয়ার পর তবেই ইটভাটা তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়।

পরিবেশ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় (বগুড়া) উপপরিচালক আকতারুজ্জামান টুকু। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইটভাটার লাইসেন্স জেলা প্রশাসক মহাদয় দিয়ে থাকেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ কেউ পরিবেশ বিনষ্ট করছে কিনা সেটি দেখার।

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) : কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নে শিহর গ্রামে ফসলি জমিতে জোরপূর্বক পুকুর খননের অভিযোগে আব্দুল মতিন চৌধুরী ২ মার্চ কুমিল্লার আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত ওই ফসলী জমিতে কোন ধরণের প্রজেক্টের কাজ না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিহর গ্রামের চার দিকে বিস্তীর্ণ চির সবুজের মাঠ। ওই মাঠের মাঝখানে শিহর মৎস্য খামার নামে একটি প্রজেক্ট করার উদ্দেশ্যে খনন করা হচ্ছে। এজন্য প্রায় ১ হাজার ৪০০ একর জমি কৃষকের কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন মন্নারা গ্রামের মরহুম জয়নাল আবেদীনের ছেলে রিসাত, শিহর গ্রামের আলী হোসেন চৌধুরীর ছেলে রাজিব ও রিয়াদ ও সায়েদুল হক চৌধুরীর ছেলে মিলন চৌধুরী।

এদিকে প্রজেক্টের ভেতরে আব্দুস ছোবহান চৌধুরী, আব্দুল মতিন চৌধুরী, তৈয়ব চৌধুরী, প্রবাসী জন্টু মিয়া, মন্টু মিয়া ও জহিরের মোট ২৮১ শতক ফসলী জমি রয়েছে। জোরপূর্বক ওই জমিতে প্রজেক্ট করছেন তারা। এনিয়ে আব্দুল মতিন চৌধুরী ২ মার্চ কুমিল্লার আদালতে মামলা দায়ের।

ক্ষতিগ্রস্থ মৃত. শফি আহাম্মদ চৌধুরীর স্ত্রী জাহানারা বেগম, ওই মাঠে তাদের প্রায় ১৭০ একর ফসলী জমি রয়েছে। ওই জমির ধান দিয়ে তাদের সংসার চলে। এখন এসকেভেটর দিয়ে দিয়ে জোর পূর্বক মৎস প্রজেক্টের পাড়ের নির্মাণ করছেন। তবে অভিযুক্ত শিহর প্রজেক্ট নির্মাণকারী মিলন চৌধুরী বলেন, আমার জায়গায় মৎস্য প্রজেক্টের জন্য পাড় নির্মাণের কাজ করছি। আমরা কোনো তাদের জায়গা দখল করিনি।

নাঙ্গলকোট থানার এসআই আক্তার হোসেন বলেন, আদালত কর্তৃক প্রেরিত মামলাটির তদন্ততাদিন রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close