কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে টিসিবির পণ্যে দুর্গন্ধযুক্ত পচা চাল বিতরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে চাল বিতরণকারীর ডিলারের বিরুদ্ধে।

গত সোমবার উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের মধ্যে মার্চ মাসের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিতরণে এই ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুবিধাভোগীরা।

স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতি মাসে একবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিতরণ করা হয়। সোমবার উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের মধ্যে গত মার্চ মাসের টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়। এবারে ৩ হাজার ২৬০ জন সুবিধাভোগীর মধ্যে ৩৪০ টাকায় এক কেজি চিনি, দুই কেজি মশুর ডাল ও পাঁচ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।

সোমবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদ ভবন থেকে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানে একাধিক সুবিধাভোগী অভিযোগ করেন, যে চাল দেওয়া হচ্ছে সেগুলো দুর্গন্ধে নাকের কাছে নেওয়া যায় না। এগুলো কালো রঙের। চালে পাথর, ইটের টুকরা, ধুলাবালুতে ভরা।

দেখা গেছে, ৫০ কেজি ওজনের চালের বস্তা, পাঁচ কেজি করে হিসেবে ১০ জন সুবিধাভোগীকে একসঙ্গে দেওয়া হয়। তবে বাইরে গিয়ে মেপে চালের বস্তায় কম পায় তারা। এছাড়া মশুর ডাল ও চিনিতেও ওজনে কম ছিল।

টিসিবির পণ্য নিতে আসা ইউনিয়নের সোনাইরখামার এলাকার শাহাদত হোসেন, বড়বাড়ী এলাকার শাহজাহান আলী, পশ্চিম রায়গঞ্জ এলাকার মামুন মিয়া, সাপখাওয়া এলাকার মমিনসহ অনেকে জানান, তারা সবাই দূর-দূরান্ত থেকে টিসিবির পণ্য নিতে এসেছেন। কিছু টাকা বাঁচাতে এলেও যে চাল দেওয়া হচ্ছে, তা পঁচা চাল। সব পণ্যের ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে।

পশ্চিম রায়গঞ্জ এলাকার আলিউল মন্ডল বলেন, ‘আমাক যে চাউল দিচে, সেগুলা গরু খাবার নোয়ায়। পরে রাগ করি বদলে নিচি। ওগলাও পচা। তবে আগের চেয়ে একটু ভাল।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়গঞ্জ ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য বিতরণ করার দায়িত্বে আছে রাশেদুল ইসলামের মালিকানাধীন মেসার্স রাশেদ এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল বিতরণ করছেন পার্শ্ববর্তী হাসনাবাদ ইউনিয়নের মেসার্স রুস্তম আলী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. রোস্তম আলী বাদল। জানতে চাইলে রোস্তম আলী বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে যে চাল দিয়েছে, সেই চাল বিতরণ করছেন তারা। তিনি জানান, রাশেদ এন্টারপ্রাইজ থেকে তিনি সাব-ডিলারি নিয়ে পণ্য বিতরণ করছেন।

জানতে চাইলে রায়গঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান দীপ মন্ডল বলেন, ‘টিসিবির চাল এত নিম্নমানের যে, একেবারই খাওয়ার অনুপযোগী। এ রকম নিম্নমানের চাল দিলে আমাদের ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। সাধারণ মানুষও সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি থেকে কঞ্চিত হবে। কিন্তু বিষয়টি জানিয়েও কোন কাজ হয় না।’ তিনি ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা দাবি করেন।

এদিকে রাশেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি নিজে তার ডিলারি পরিচালনা করেন। গুদাম থেকে পাওয়া চাল বিতরণ করছেন তারা।

চাল নিয়ে কথা হলে নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি চালের ছবি দেখেছি। এসব চাল আমাদের গুদাম থেকে দেওয়া হয়নি।’ তবে টিসিবির চাল বদল হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তা বলতে পারব না। তবে চাল আমাদের গুদামের নয়।’

জানা গেছে, রোস্তম আলীর মেয়েসহ পরিবারের মধ্যে ৫টি টিসিবি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের নিবন্ধন রয়েছে। এছাড়া আরো পাঁচটি ডিলারি প্রতিষ্ঠানের সাব-ডিলার তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোস্তম আলী বলেন, ‘আমার পরিবারের তিনটা। বাইরেরও তিন চারটা চালাই। তাতে কী হয়েছে? কোনো সমস্যা নাই।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ বলেন, ‘রায়গঞ্জ ইউনিয়নে পচা চাল বিতরণের অভিযোগটি জেনেছি। আমরা চালগুলো পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি। খাদ্যগুদামে দূর-দূরান্ত থেকে আসা চাল আছে। কোনখান থেকে খারাপ চাল ঢুকে গেলে ফেরত পাঠানো কষ্টকর হয়ে যায়। তবে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’

"