শামীম খান যুবরাজ

  ০৫ আগস্ট, ২০১৭

দুষ্টু কাঠবিড়ালি ও বন্ধুকাকের গল্প

হঠাৎ করেই বনের পাখিদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। দিনের বেলা মৃত্যুভয়ে অস্থির থাকতে হয় তাদের। চিন্তায় চিন্তায় রাত কাটে। অথচ কদিন আগেও এখানে পাখিদের অভয়ারণ্য ছিল, শান্তি ছিল, সুখ ছিল। এখন নেই।

এই না থাকার কারণ এক শিকারি। সে প্রতিদিনই বন্দুক কাঁধে নিয়ে বনে ঢোকে আর পাখি শিকার করে। এর মধ্যে ঘুঘুর সংখ্যাই বেশি। ঘুঘুর প্রতি খুব বেশি লোভ লোকটির। তাছাড়া ঘুঘুরাও একটু বোকাসোকা টাইপের। শিকারি দেখলেও বুঝতে পারে না, চুপও থাকতে পারে না। সারাক্ষণ শুধু ডাকতে থাকে। ভারি বাচাল পাখি। ফিঙে রাজার কপালে ভাঁজ পড়ল চিন্তায়। শালিকরা একে অপরকে দোষারোপ করে ঝগড়া করেই চলল। বুলবুলিরা বন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দোয়েল পাখি এসে সবাইকে বোঝাল এবং ধৈর্য ধরে বিপদ মোকাবিলা করার জন্য পরামর্শ দিল। আর হঠাৎ করে বনে শিকারির আগমনের কারণ খুঁজে বের করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাল। শিকারির আগমন সম্পর্কে তথ্য নিয়ে এলো মাছরাঙা। সে যখন শাপলা পুকুরে চুপচাপ মাছ ধরছিল তখন দুষ্টু কাঠবিড়ালিকে বন্দুক হাতে তাড়াতে তাড়াতে এ বনে এসে ঢুকেছিল শিকারিটি। বনের ভেতর কাঠবিড়ালি লুকিয়ে গেলে শিকারির চোখে পড়ে একজোড়া ঘুঘু পাখি। সে সেগুলোকে মেরে নিয়ে যায়। তারপর থেকে সে প্রতিদিনই আসে শিকার করতে।

দুষ্টু কাঠবিড়ালিকে ডাকা হলো। বুড়ো শালিক গম্ভীর গলায় কাঠবিড়ালিকে বলল, দেখ, বনের ভেতর এতসব ফলের গাছ থাকার পরও তুমি মানুষের গাছের নারিকেল খেতে গিয়ে আমাদের সবাইকে বিপদে ফেলেছ। তুমি অনেক লোভী প্রাণী। তোমাকে এ বন ছেড়ে চলে যেতে হবে। কাঠবিড়ালি মুখ বাঁকিয়ে বলল, আমি আমার কাজ করে যাব। তাছাড়া তোমাদের সমস্যা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তোমরা পাখি আর আমি কাঠবিড়ালি। ডালে ডালে নেচে বেড়ানো আর দুষ্টুমি করাই আমার স্বভাব।

কাঠবিড়ালি চলে গেলে সবাই তাদের অভিভাবকতুল্য বন্ধুকাকের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য সবচেয়ে উঁচু গাছটির শিখরে গেল। সব শুনে বন্ধুকাক রেগে গেল দুষ্টু কাঠবিড়ালির ওপর। কাঠবিড়ালিকে উচিত শিক্ষা দিয়ে বন থেকে তাড়াবে বলে সব পাখিকে আশ্বাস দিল বন্ধুকাক।

কয়েক দিনের মধ্যে কাঠবিড়ালিকে তাড়া করতে করতে বন থেকে বাইরে দিয়ে এলো বন্ধুকাক। তবুও লোভী শিকারির আনাগোনা বন্ধ হলো না। আবারও সবাই পরামর্শের জন্য কাকের কাছে গেল। সবাই জানে পাখিদের মধ্যে কাক সবচেয়ে বুদ্ধিমান। কাক বলল, কিছুদিনের জন্য সব পাখিকে বন ছেড়ে দূরে কোথাও থাকতে হবে। যখন শিকারি এসে কোনো পাখিকে পাবে না, তখন বনে আসা বন্ধ করে দেবে সে। তাছাড়া একই বনে দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে সবাই কেমন মনমরা হয়ে আছ। চল, কোথাও বেড়াতে যাই। বনের সব পাখি একসঙ্গে উড়াল দিল। অনেক দূরের এক পাহাড়ে তারা অবস্থান করল, ঘুরল, দেখল, তারপর বেশকিছু দিন পর নিজেদের বনে ফিরে এলো। এদিকে কোনো পাখিকে না পেয়ে শিকারির আসা বন্ধ হয়ে গেল। পাখিরা আবার ফিরে পেল তাদের অভয়ারণ্য। পাখিদের মধ্যে ফিরে এলো স্বস্তি। তারা আবার সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist