সোহেল রানা

  ২২ জুলাই, ২০১৭

রাজার ভুলের মাশুল

অনেক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বনের নতুন রাজাকে সিংহাসনে বসানোর কাজ শেষ করল বনের প্রাণীরা। আগের রাজা এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর অনেক দিন পর বন্যপ্রাণীরা যোগ্য রাজা পাওয়ায় এই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রজাদের এ রকম আয়োজনে নতুন রাজা অনেক খুশি হয়ে তাদের সুখে শান্তিতে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন, ‘আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজ্যের সকল জায়গা পরিদর্শন করব এবং সকলের কাজকর্ম ঘুরে ঘুরে দেখব।’

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজা পাইক-পেয়াদা নিয়ে রওনা হলেন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে। তিনি সারা দিন বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখার পর দিন শেষে দেখতে পেলেন, একটা শিয়াল খুব কষ্টকর কাজ করছে। রাজা তার কাছে কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানার সময় তার পা-িত্যের পরিচয় পেলেন, তাই তিনি তাকে আরও বেশি যাচাই করার জন্য রাজদরবারে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন।

দরবারে আসার পর রাজা দেখলেন তিনি যা ধারণা করেছিলেন ঠিক তাই, অর্থাৎ শিয়ালটা ছিল শিক্ষিত এবং জ্ঞানী। কিন্তু তিনি কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না যে, ‘এমন একজন শিক্ষিত ও জ্ঞানী প্রাণীকে কেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে না রেখে কষ্টকর কাজে নিয়োজিত করা হয়েছিল।’ এ বিষয়ে তিনি কাউকে জিজ্ঞাসা না করেই তাকে রাজার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দিলেন।

শিয়াল প-িতও তার পা-িত্যের জোরে রাজার খুব নিকটবর্তী চলে আসতে সক্ষম হলেন। এমনকি রাজার অনুপস্থিতিতে তিনিই রাজ্য পরিচালনা করতেন। রাজাও শিয়াল প-িতের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতেন বলে রাজ্যের কোনো প্রাণীই শিয়াল প-িতের অতীত নিয়ে রাজার কাছে মুখ খোলার সাহস পেত না।

এক দিন হঠাৎ করে মহাপ্রলয় হয়ে যাওয়ার কারণে রাজ্যে খাবার সংকট দেখা দিল। রাজা কোনোভাবেই প্রজাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছিলেন না। তার এই ব্যর্থতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজার বিরোধী পক্ষ আন্দোলনের ডাক দিল এবং দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজা যাতে প্রাসাদ থেকে বের হতে না পারে সেই সমন জারি করল। রাজা চরম বেকায়দায় পড়ে গেলেন, কী করবেন কিছুই ভেবে পেলেন না। এ সময় তিনি শিয়াল প-িতের কাছে সাহায্য চাইলেন ঠিকই কিন্তু শিয়াল প-িত এমন কোনো ভালো বুদ্ধি দিলেন না, যা দিয়ে রাজা প্রাসাদ থেকে বের হয়ে এই সংকট থেকে প্রজাদের মুক্ত করতে পারেন। রাজা খেয়াল করলেন শিয়াল প-িত কেমন যেন তাকে এড়িয়ে চলছেন। রাজা ও পাইক-পেয়াদারা প্রাসাদের বাইরে বের হতে না পারলেও শিয়াল প-িত ঠিকই প্রাসাদের বাইরে বের হতেন এবং কেউ তাকে বিন্দুমাত্র বাধা পর্যন্ত দিত না। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য রাজা একজন গুপ্তচর নিয়োগ করলেন। গুপ্তচর বিশ্বস্ত কবুতরের মাধ্যমে একটি পত্র পাঠালেন রাজার মিত্রের নিকটে। ওই পত্রে শিয়াল প-িতের গতিবিধি লক্ষ্য করার কথা উল্লেখ ছিল। রাজার মিত্র খুব সাবধানতার সাথে খোঁজখবর নিয়ে দেখলেন, যে পরিমাণ খাবার গুদামে গচ্ছিত আছে তা দিয়ে প্রজাদের এক বছর অনায়াসে চলে যাবে। তার মানে প্রজাদের খাবার সংকট পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে এবং যা করেছেন ওই শিয়াল প-িত।

শিয়াল প-িতকে বিরোধী পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেও দেখলেন তিনি। এসব দেখার পরও রাজার জন্য তার কিছুই করার ছিল না। কারণ, রাজ্যের বেশিরভাগ প্রজাই ছিল রাজার বিরোধী। শিয়াল প-িত তাদের মগজ এমনভাবে ধোলাই করেছিলেন যে, তারা রাজার কোনো কথা যেন শুনতে রাজি ছিল না।

রাজার মিত্র কোনো উপায় না পেয়ে সার্বিক বিষয়টি কবুতরের মাধ্যমে গুপ্তচরের কাছে জানালেন। রাজাও বিস্তারিত জানলেন গুপ্তচরের নিকট থেকে। কিন্তু এখন জেনে আর কী হবে, তিনি তো আগে চিন্তা-ভাবনা না করে, কারো কাছে শলাপরামর্শ না করেই শিয়াল প-িতকে এত বড় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি তখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলেন যে, কেন এই শিয়ালকে কষ্টকর কাজে নিয়োজিত করা হয়েছিল। রাজা শিয়াল প-িতকে এতটাই বিশ্বাস করতেন যে, এত কিছুর পরও তার কাছে শিয়াল প-িতের এই বিশ্বাসঘাতকার বিষয়টি বিশ্বাস করতেই যেন কষ্ট হচ্ছিল।

বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও রাজার বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোনো উপায়ই ছিল না। তারপরও তার ভুল ভাঙল তখনই যখন শিয়াল প-িত প্রজাদের নিয়ে রাজপ্রাসাদে ঢুকে রাজাকে বন্দি করে নিজেকে রাজ্যের রাজা দাবি করলেন। শিয়াল যে মস্তবড় বিশ্বাসঘাতক এই কথাটি রাজা কোনোভাবেই প্রজাদের বোঝাতে সক্ষম হলেন না। রাজার কোনো কথায় প্রজারা কর্ণপাত করতে চাইল না, তারা রাজাকে নানাভাবে কটূক্তি করতে করতে বন্দিশালার কাছাকাছি নিয়ে গেল। বন্দিশালায় প্রবেশের পূর্বে রাজা প্রজাদের উদ্দেশ্য করে শেষবারের মতো একটি কথায় বললেন, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist