আবদুস সালাম

  ০৬ এপ্রিল, ২০১৯

শান্তিপুরের রাজা-রানি

অনেক দিন আগের কথা। হাকিমপুর এবং নূরনগর নামে দুটি রাজ্য ছিল। রাজ্য দুটির শাসকদের মাঝে যুগ যুগ ধরে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। এর ফলে দুই রাজ্যের অধিবাসীর মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। রাজ্য দুটির প্রায় মাঝ বরাবর একটি নদী ছিল। মূলত ওই নদীটার দুই তীরেই ছিল রাজ্য দুটির অবস্থান। তার পরও হাকিমপুর এবং নূরনগর রাজ্য দুটির মাঝখানে কোনো একটি সুবিধাজনক স্থানে তারা গড়ে তোলে হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, খেলাধুলার মাঠ ইত্যাদি ইত্যাদি। এই স্থানগুলোর আশপাশেই গড়ে ওঠে দুই রাজ্যের প্রধান নগরী। এর ফলে বিভিন্ন কাজে দুই রাজ্যের লোকদের সঙ্গে প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ হতো। তারা বিভিন্ন জিনিসপত্র নিজেদের মধ্যে লেনদেন করতেন। তাদের মধ্যে একটা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এভাবেই তারা সুখে-শান্তিতে দুই রাজ্যে বসবাস করে আসছিল। কালের পরিক্রমায় সর্বশেষ হাকিমপুর রাজ্য শাসন করতো একজন রাজা আর নূরনগর রাজ্য শাসন করতো একজন রানি। রাজার ছিল একটি মাত্র কন্যা এবং রানির ছিল একমাত্র পুত্র। রাজার কন্যা ছিল খুব সুন্দরী আর রানির পুত্র ছিল খুব সুদর্শন। হাকিমপুর আর নূরনগর রাজ্যের রাজা রানির মধ্যে শত্রুতা ছিল দীর্ঘদিনের। রাজা রানির বৈরিতার কারণে দুই রাজ্যের লোকজনের মধ্যেও কোনো বনিবনা হতো না। কালক্রমে দুই রাজ্যের লোকজনের মাঝে যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তাও নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তারা আগের মতো আর সুখে শান্তিতে বসবাস করতো পারতো না।

দুই রাজ্যের বাসিন্দাদের মাঝে সম্পর্কের অবনতি হলেও তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে নিয়মিত হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে আসতে হতো। কারণ গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল রাজ্যের মাঝখানে। এসব নানান কারণে দুই রাজ্যের লোকজনের একে অপরের সঙ্গে সবসময় দেখা-সাক্ষাৎ হতো। তবে তারা কেউ কারোর সঙ্গে প্রাণ খুলে কথাবার্তা বলতে এবং মিশতে পারতো না। তাদের মধ্যে সবসময় একটা রেশারেশি ভাব ছিল। তারা নিজ নিজ রাজ্যের রাজা ও রানিকে নিয়ে গর্ব করতো। কেউ কোনো সময় হারতে চাইতো না। নদীতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই জেলেদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধতো। এই সংঘর্ষ মাঝেমাঝে ভয়াবহ আকার ধারণ করতো। ফলে প্রায়ই ওই নদীতে মাছধরা বন্ধ থাকতো। হাটবাজারে জিনিসপত্র কেনাবেচা করার সময়ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হতো। এর ফলে অনেকেই অনেকের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রাখতো। তখন তারা রাজ্য দুটির মাঝের প্রধান হাটবাজার বর্জন করে নিজ নিজ রাজ্যের হাটবাজারে পৃথক পৃথকভাবে কেনাবেচা করতো। এতে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। আবার অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হতো। এমনকি বছর শেষে পাঠশালাতে ভর্তি নিয়েও সংঘর্ষ বাধতো। দুই রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষেও একে অপরের সঙ্গে কথা বলতো না। তখন পাঠদানে শিক্ষকদের সমস্যায় পড়তে হতো। তেমনিভাবে খেলাধুলার মাঠেও ছিল একই রকম বৈষম্য। দুই রাজ্যের ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতে পারতো না। তারা মাঠটি ভাগাভাগি করে পৃথক পৃথকভাবে খেলাধুলা করতো। এতে দিন দিন তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেল। শাসকরা ভালো থাকলেও প্রজারা ছিল অসহায়। কিন্তু কেউই এই সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারলো না।

দুই রাজ্যের মাঝ দিয়ে একটি প্রধান পাকা রাস্তাও ছিল। ওই রাস্তাটি উভয় রাজ্যের লোকজনেরা ব্যবহার করতো। পার্শ্ববর্তী কোনো রাজ্যে যেতে হলে বা একস্থান হতে অন্যস্থানে যেতে হলে ওই প্রধান সড়ক ব্যবহার করতে হতো। এক দিন হাকিমপুরের রাজা পাশের কোনো রাজ্যে যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। রাজার সঙ্গে পায়েক, পেয়াদা, উজির, নাজির উপস্থিত ছিল। সেসময় নূরনগরের রানি প্রমোদভ্রমণের উদ্দেশ্যে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। রানির সফরসঙ্গী হিসেবে অনেকেই ছিলেন। তাই রানির সফরসঙ্গীরা হাকিমপুরের রাজাকে যেতে বাধা দিলেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। হাকিমপুরের রাজা এবং নূরনগরের রানি তাদের গন্তব্যস্থলে না গিয়ে নিজ নিজ রাজপ্রাসাদে ফিরে গেলেন। রাজপ্রাসাদে ফিরে গিয়ে তারা ঘোষণা দেন যে, রাজ্যের মাঝখানে যেসব হাটবাজার, পাঠশালা এবং খেলাধুলার মাঠ রয়েছে, তা এখন থেকে বন্ধ থাকবে। দুই রাজ্যের কেউই এগুলো ব্যবহার করতে পারবে না। এমনকি নদীতে মাছ ধরাও বন্ধ থাকবে। এতে সব সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করলো। এই দুই রাজ্যের আর্থিক অবস্থা দিন দিন খুব খারাপ হতে থাকলো।

এক দিন শান বাঁধানো নদীর ঘাটে রাজার মেয়ে তার সখীদের নিয়ে স্নান করতে এলো। ঠিক সেই সময় নৌকায় করে রানির ছেলে তার কয়েকজন সখাকে সঙ্গে নিয়ে প্রমোদভ্রমণ করছিল। তখন রানির ছেলে রাজকুমারীকে দেখে মুগ্ধ হলেন। রানির ছেলে আগে কখনো এ রকম সুন্দরী মেয়েকে দেখেনি। একইভাবে রাজকুমারীও আগে কখনো এ রকম সুদর্শন ছেলেকে দেখেনি। তারা একে অপরকে খুব পছন্দ করলো। কিন্তু তারা কোনো কথা বলার সাহস পেল না। বেশ কিছুদিন পর রানির ছেলে একাকী নৌকায় করে প্রমোদভ্রমণ করছিল। আর মনে মনে রাজকুমারীর কথা ভাবছিল। ঠিক ওই সময় রাজকুমারীও একাকী নদীর ঘাটে বসে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আর রাজকুমারের কথা ভাবছিল। কি সৌভাগ্য! তাদের দুজনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। রানির ছেলে তার নৌকাটি ঘাটে ভিড়ালেন এবং রাজকুমারীর সঙ্গে কথা বললেন। এতে রাজকুমারীও মনে মনে খুশি হলো। তাদের দুজনার মধ্যে পরিচয় হলো। পরিচয় হওয়ার পর তারা খুব ভয় পেয়ে গেল। কারণ এই বিষয়টি তাদের মা বাবা জানতে পারলে আর রক্ষা নেই। তারা তাদেরকে বন্দি করে রাখবেন।

যাহোক, এভাবে রাজকুমারীর সঙ্গে রানির ছেলের প্রায়ই দেখা হতো। রাজকুমারীর সঙ্গে রানির ছেলের যখন দেখা হতো তখন তারা রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলাপ আলোচনা করতো। প্রজাদের দুঃখ দুর্দশনা নিয়েও আলোচনা করতো। দুই রাজ্যে কীভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়, সে চেষ্টাও তারা করতে থাকলো। তাদের দেখা সাক্ষাতের বিষয়টি রানির ছেলের একজন বন্ধু আর রাজকুমারীর একজন বান্ধবী ছাড়া কেউই জানতো না। দুই রাজ্যের প্রজাদের দুঃখ দুর্দশনা লাঘবের জন্য তারা একা একা অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিল। কিন্তু বাবা মার একগুঁয়েমির কারণে তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। এবার রাজকুমারী আর রানির ছেলে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। আর তা হলো তাদের দুজনার মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। তাদের বিবাহ সম্পন্ন হলেও হাকিমপুর এবং নূরনগর রাজ্যের দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্কের অবসান ঘটবে। এক দিন রাজকুমারী তার বাবাকে বললেন, ‘আমি নূরনগরের রাজকুমারকে পছন্দ করি। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে পারলে খুশি হব।’

... ‘অসম্ভব! কোনো দিনই এ বিয়ে হতে পারে না। নূরনগরের রানি আমার চিরশত্রু। তার ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের কোনো দিন বিয়ে হতে পারে না।’

... বাবা, নূরনগরের রানির পুত্রকে আমি খুব পছন্দ করি। আমার সঙ্গে তার বিয়ে হলে আমরা সুখী হব।

... ‘অসম্ভব। কোনোভাবেই এ বিয়ে হতে পারে না। এর পরেও যদি তুমি তাকে বিয়ে করার চেষ্ট কর বা তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্ট কর, তা হলে তোমাকে হত্যা করা হবে।’

এদিকে রানির ছেলেও তার মাকে বললো, ‘হাকিমপুর রাজ্যের রাজকুমারীকে আমার খুব পছন্দ। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।’ পুত্র রাজকুমারীকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য মাকে অনুরোধ করলো। ছেলের কথা শুনে তার মা ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি বললেন, ‘আমি কখনো হাকিমপুরের রাজার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে দেব না। আর তুমি যদি রাজকুমারীকে বিয়ে করার চেষ্টা কর, তা হলে তার পরিণামও হবে খুব ভয়াবহ।’

... ‘মা, তুমি বোঝার চেষ্টা কর। আমাদের বিয়ে হলে রাজ্যে শান্তি ফিরে আসবে।’

... ‘আমি কখনো হাকিমপুরের রাজার কাছে মাথা নত করবো না। এরপরও যদি তুমি তাকে বিয়ে কর তা হলে তোমাকে আমি রাজ্য ছাড়া করবো।’

ওই বিয়েতে রাজা এবং রানি কিছুতেই রাজি হলেন না। ফলে রাজকুমারী এবং রানির ছেলে নতুন করে সমস্যায় পড়লেন। তারা কিছুতেই বাবা-মাকে রাজি করাতে পারলো না। তাই দুই রাজ্যের সমস্যারও কোনো সমাধান হলো না। এদিকে হাকিমপুর ও নূরনগর রাজ্যের অধিবাসীদের জীবনযাত্রাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এভাবে আরো কিছুদিন চলার পর রাজকুমারী আর রানির ছেলের রাজ্যের স্বার্থে গোপনে বিবাহ করলেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে রাজা ও রানীর মাথা হেট হয়ে গেল। তাদের অহংকার চূর্ণ হলো। তারা কেউই ওই বিবাহ মেনে নিলেন না। তারা সন্তানদের প্রতি ভীষণ ক্ষীপ্ত হলেন। অবশেষে তারা সন্তানদের প্রাণে না মেরে রাজ্য থেকে বের করে দিলেন। এতে নব দম্পতি উপায় না পেয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্যে আশ্রয় নিল। বাবা মাকে ছেড়ে রাজা রানির ছেলেমেয়েরা খুব কষ্টে জীবনযাপন করতে থাকলো। তবে তারা সবসময় হাকিমপুর এবং নূরনগরের লোকজনের মঙ্গলের কথা চিন্তা করতো। তাদের বিশ্বাস এক দিন না এক দিন তাদের বাবা মা তাদের বিবাহ মেনে নেবেন।

রাজা ও রানি তাদের একমাত্র সন্তানকে শাস্তিস্বরূপ রাজ্য ছাড়া করেছেন। এই শাস্তি দিয়ে তারা বেশ খুশিও হয়ে ছিলেন। এভাবে কয়েক বছর কেটে গেল। কিন্তু আদরের সন্তানদের ছেড়ে রাজা ও রানি ভালো থাকতে পারলেন না। এদিকে হাকিমপুরের রাজা ঠিকমতো শাসনকার্যে মনোযোগ দিতে পারছিল না। কদিন পরেই তিনি কন্যার চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলেন। অনুরূপভাবে রানিও তার ছেলের দুশ্চিন্তায় অতিকষ্টে জীবনযাপন করছিল। তার মনটা সব সময় খারাপ থাকতো। রাজ্যের মন্ত্রীরা রানিকে সান্ত¡না দিলেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই রানি শান্তি পেল না। সন্তানের চিন্তায় রানি ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়লো। কোনো উপায় না দেখে রাজ্যের সভাসদরা রানিকে পরামর্শ দিল ছেলের বিবাহ মেনে নিতে। কিন্তু ছেলের বিয়ে মেনে নেওয়ার ইচ্ছা রানির মোটেও ছিল না। অন্যদিকে হাকিমপুর রাজ্যের সভাসদরা রাজাকে বললেন, ‘আপনার কন্যা হাকিমপুর রাজ্যের একমাত্র উত্তরাধিকারিণী। আপনার অবর্তমানে তিনি হবেন হাকিমপুর রাজ্যের রানি। আপনার উচিত রাজ্যের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মেয়ের বিবাহকে মেনে নেওয়া। নতুবা ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে হাকিমপুর রাজ্যের অধিবাসীদের দুঃখ দুর্দশার সীমা থাকবে না। এতে সমস্যা আরো বাড়বে।’

রাজা রানির অবর্তমানে কে রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করবে, কে হবেন রাজা বা রানি। দুই রাজ্যের রাজা ও রানি এসব নানান কথা চিন্তা করলেন। দুই রাজ্যের মন্ত্রী, সভাসদ এবং গণ্যমান্য লোকদের পরামর্শক্রমে রাজা ও রানি উভয়ই সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তাদের সন্তানদের বিবাহ মেনে নেবেন। অবশেষে রাজা ও রানির লোকজনরা পার্শ¦বর্তী রাজ্য থেকে তাদের সন্তানদের খুঁজে বের করলো। রাজা ও রানির অভিমতের কথা তাদের জানানো হলো। এ কথা শুনে রাজা রানির সন্তানরা খুশি হলো। অনেক দিন পর হলেও তাদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তারপর তারা নিজ নিজ রাজ্যে বাবা মার কাছে ফিরে গেল। তাদের বাবা মাও সন্তানদের কাছে পেয়ে খুশি হলো। সকলের মতামত নিয়ে রাজা ও রানি একটি নির্দিষ্ট দিনে সন্তানদের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো। এ উপলক্ষে দুই রাজ্যের সব গণ্যমান্য ব্যক্তিকে দাওয়াত দেওয়া হলো। খুব ধুমধাম করে রাজা ও রানি সন্তানের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানটি সুসম্পন্ন করেন। রাজা ও রানি আনুষ্ঠানিকভাবে সন্তানদের বিবাহ মেনে নেওয়ায় রাজ্যের লোকজনেরাও খুব খুশি হলো।

কিছুদিন যেতে না যেতেই এক দিন হঠাৎ নূরনগরের রানি অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন। রানির অকালমৃত্যুতে রাজ্যের সকলে খুব কষ্ট পেল। রাজ্যের চারদিকে শোকের ছায়া নেমে এলো। রানির অবর্তমানে রানির ছেলে নূরনগর রাজ্যের রাজা হলেন। তারপর নতুন রাজা খুব ভালোভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে লাগলেন। নতুন রাজাকে পেয়ে প্রজারাও খুশি হলেন। রানি মারা যাওয়ার কিছুদিন পরেই এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে হাকিমপুর রাজ্যের রাজা আক্রান্ত হলেন। কয়েক মাস পরেই হাকিমপুর রাজ্যের রাজাও মৃত্যুবরণ করেন। রাজার মৃত্যুতে রাজ্যের সকলেই খুব কষ্ট পেল। এতে রাজ্যে একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সারা রাজ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাজার একমাত্র কন্যা বর্তমানে নূরনগর রাজ্যের রাজার স্ত্রী। রাজ্যের নিয়ম অনুসারে রাজার উত্তরাধিকার হিসেবে রাজার মেয়ে হলেন হাকিমপুর রাজ্যের রানি। নতুন রানিকে পেয়ে হাকিমপুর রাজ্যের সকলেই খুশি হলেন।

নূরনগর এবং হাকিমপুর রাজ্যের নতুন রাজা ও রানি দুই রাজ্যকে একটি রাজ্যে পরিণত করার জন্য চেষ্টা করলেন। এতে তারা রাজ্যের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামত নিতে শুরু করেন। এ কারণে তারা বেশ কয়েকটি সভাও আহ্বান করেন। সভায় লোকজনরা দুই রাজ্যকে একটি রাজ্যে পরিণত করার পক্ষে মত দেন। তারপর দুই রাজ্যের মন্ত্রী, সভাসদ এবং গণমান্য প্রজাদের নিয়ে নতুন রাজা ও রানি একটি নির্দিষ্ট দিনে সাধারণ সভা আহ্বান করেন। নির্দিষ্ট দিনে সাধারণ সভা শুরু হয়। সভায় দুই রাজ্যের মন্ত্রী, সভাসদ এবং গণমান্য প্রজারা উপস্থিত হলেন। তারা সকলেই মত দিলেন যে, রাজ্য দুটি এক হয়ে গেলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। অবশেষে সকলের সামনে রাজা ও রানি নিজেদের রাজ্যকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং দুটি রাজ্যকে ভেঙে একটি রাজ্য গঠন করেন। সকলের মতামত নিয়ে নতুন রাজ্যের নাম দেওয়া হলো শান্তিপুর। আর শান্তিপুরের রাজা হলেন বিলুপ্ত নূরনগর রাজ্যের রাজা। আর রানি হলেন বিলুপ্ত হাকিমপুর রাজ্যের রানি। অর্থাৎ রাজা আর রানি দুই রাজ্যেরই রাজত্ব পেলেন। এর ফলে দুই রাজ্যের দীর্ঘদিনের বৈরিতার অবসান ঘটলো। তারপর থেকে শান্তিপুরে কখনো কোনো অশান্তি, দুঃখ-দুর্দশা, বিশৃঙ্খলা, গোলযোগ দেখা দেয়নি। শান্তিপুরে সুখ-শান্তি ফিরে এলো। শান্তিপুরের রাজা ও রানির শাসন পরিচালনায় সকলেই সুখে-শান্তিতে দিনাতিপাত করতে থাকলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close