উপদ্রবের উপদ্রব চাঁদাবাজি
উপদ্রবের তো শেষ নেই। মশার উপদ্রব, পানির উপদ্রব, ভেজালের উপদ্রব, চিকুনগুনিয়ার উপদ্রব, চালে, ডালে, নুনে, তেলে, মাছে, মাংসে-এ মাটির সব অঙ্গেই যেন উপদ্রবের জলবসন্ত। ঈদ মৌসুম বলে কথা। চারপাশে টাকার ম-ম ঘ্রাণে মৌমাছির আনাগোনা তো থাকবেই। স্বাভাবিক। তাই এ সময় চাঁদাবাজদের একটু-আধটু উপদ্রব থাকবে না-এ রকম ভাবাটাই অন্যায়! অনেক উপদ্রবের মধ্যে এটিও একটি মৌসুমি উপদ্রব। ফি-বছর আমরা এ কর্মকা- দেখে আসছি। যারা এ উপদ্রব সরানোর দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন, তারাও খুব মনোযোগ দিয়েই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। শুধু পর্যবেক্ষণই করেন বললে ভুল হবে। তারা হৃদয় দিয়ে বিষয়টি উপভোগও করেন। উপভোগ থেকে ভোগ।
ভোগ বলে কথা। তারা সবাই ‘চারবাক’ অনুুসারী। ঋণ করে ঘি খাওয়ায় বিশ্বাসী। ডিজিটাল যুগ। এখন আর ঋণ করার প্রয়োজন হয় না। ছিনতাই, চাঁদাবাজি অথবা লুট যেকোনো একটিতে নাম লেখাতে পারলেই কেল্লাফতে। টন টন ঘিও মিলতে পারে এক তুড়িতে। শঙ্কার কোনো কারণ নেই, প্রয়োজনে পুলিশ আপনাকে সাহায্য করবে-প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষে। এই যখন অবস্থা, তখন ‘চাঁদা দে, নইলে জীবন’-পত্রিকায় এ রকম শিরোনাম হতে দোষ কোথায়! হয়েছেও তাই। সবকিছু পাল্টে যাওয়ার সঙ্গে এখানেও ধরনটা বদলেছে। এখন ঈদ বকশিশের নামে চাঁদার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের নাম ভাঙানো ছাড়াও প্রয়োজনে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদা তোলা অব্যাহত রয়েছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে ঈদ বকশিেেশর নামে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে পরিবহন খাতেও চাঁদার পরিমাণ বেড়ছে। গত ১৫ দিনে রাজধানীর থানাগুলোয় চাঁদাবাবাজি প্রশ্নে সাধারণ ডায়েরি হয়েছে শতাধিক। ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব ডায়েরি করেছেন। কিন্তু কোথাও কোনো পরিবর্তন নেই। পুলিশ প্রশাসন চাঁদাবাজির চন্দ্রবিন্দুকেও স্পর্শ করতে পারেনি। পারবে বলেও মনে করার কোনো যৌক্তিক কারণও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
ঈদ বকশিশের নামে প্রতিদিন প্রকাশ্যেই চাঁদাবাজদের হুমকি-ধমকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এর বাইরে থাকারও যেন কোনো সুযোগ নেই। রক্ষক যখন ভক্ষকের আসনে বসবে তখন সাধারণের কিছুই করার থাকে না। দেশে এখন যা চলছে সেখানে চাঁদাবাজি থেকে পিছিয়ে নেই সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। ধরন ভিন্ন হলেও ঈদ চাঁদাবাজিতে কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যদের সরাসরি জড়িত থাকার কথাও শোনা যাচ্ছে, যা ব্যক্তি অথবা সমাজ অথবা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। আমরা রাষ্ট্রের মঙ্গল চাই।
"