আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৮ আগস্ট, ২০২০

করোনার সংকটকালে প্রতারণার জাল!

করোনা সংকটকালে ছড়ানো হয়েছে প্রতারণার জাল। মন্দিরে পূজা দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অনলাইন দুষ্কৃতকারীরা। এমনকি কোভিড পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে রোগীকে। ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দীর্ঘ লকডাউন ও তারপর আনলকের সময় সাধারণ মানুষের গতিবিধি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। সেই কারণে বিভিন্ন প্রয়োজনে অনলাইন সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই সুযোগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনাবেচায় প্রতারণা চক্রের জাল আরো বিস্তৃত হচ্ছে। প্রতারকরা মানুষকে নানাভাবে প্রতারিত করছেন। সম্প্রতি কলকাতায় এমন একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে যা চমকে দেওয়ার মতো। লকডাউনের সময় বিভিন্ন ধর্মস্থল বন্ধ ছিল। সরকারি নির্দেশে পরে তা খুলে গেলেও অনেক পুণ্যার্থী সেখানে সশরীরে হাজির হতে পারছেন না যাতায়াতে সমস্যা বা স্বাস্থ্যের কারণে। এতে হাতে চাঁদ পেয়েছে অনলাইন প্রতারকরা। পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত মন্দিরগুলো ইতোমধ্যে খুলে গেলেও ভক্তদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এর ফলে কলকাতার কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর এবং বীরভূমের তারাপীঠের মন্দিরে পূজা দেওয়ার জন্য অনলাইনের হাতছানি রয়েছে। অথচ এগুলো মন্দির কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ওয়েবসাইট নয়। এই ওয়েবসাইটে ঢুকলে আপনি দেখতে পাবেন, কম থেকে বেশি টাকা মূল্যের নানা প্রণামীতে পূজা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পছন্দের পূজার মূল্য আগাম চুকিয়ে দিলেই তা নিবেদিত হবে দেবীর চরণে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অনলাইন প্রতারকরা। ধর্মবিশ্বাসী মানুষ নিজেদের গাঁটের কড়ি খসাচ্ছেন।

আগামী ১৮ আগস্ট কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে ধুমধাম করে পূজা হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সেই অনলাইন পূজার বুকিং শুরু হয়ে গেছে। সেখানে সশরীরে হাজির থাকতে অসমর্থ প্রবীণরা পূজা দেওয়ার জন্য ইন্টারনেট ঘাঁটছেন। বেলঘরিয়ার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ বিবেক হাজরা বলেন, এই পরিস্থিতিতে বেরোতে পারছি না। কোনো সংস্থা যদি অনলাইন পূজা বা প্রসাদের কথা বলে, সুবিধা হয়। আমরা প্রতারণার কি বুঝব, প্রশাসন একটু দায়িত্ব নিলে ভালো হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে, পুরো টাকাটাই চলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীকারীদের পকেটে। মন্দিরে কিছুই পৌঁছাচ্ছে না। কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর ও তারাপীঠে প্রতিদিন দীর্ঘ লাইন পড়ে পূজা দেওয়ার জন্য। এই তিন মন্দির কর্তৃপক্ষ কিন্তু বলছেন, তারা কোনো ওয়েবসাইটকে অনলাইনে পূজা গ্রহণের অনুমতি দেননি।

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বদ্রীনাথের মতো ভারতবিখ্যাত মন্দিরেও পূজা দেওয়ার জন্য অনলাইনে হাতছানি রয়েছে। এ ছাড়া আসন্ন দুর্গোৎসবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে অনলাইনে পূজা দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিতভাবেই চালু হবে। ইন্টারনেটের অরক্ষিত দুনিয়ায় ঘাপটি মেরে থাকা প্রতারকরা যাতে পকেট কাটতে না পারে, সে জন্য সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকতে হবে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুণ্যলোভী মানুষের ক্ষতি এটুকুই, তার অর্থের অপচয় হলো। কিন্তু এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে প্রাণও চলে যাচ্ছে। অনলাইনে কোভিড পরীক্ষার ফাঁদ পেতেছে প্রতারকরা। বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে সোয়াব। তারপর রিপোর্টও আসছে। কিন্তু আদৌ সোয়াব পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে রিপোর্ট হচ্ছে মনগড়া। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রাণ দিতে হয়েছে কলকাতার নেতাজিনগরের এক বাসিন্দাকে। ২৫ জুলাই তার নমুনা নেওয়া হয় বাড়ি থেকে। কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়। ২৯ জুলাই ওই ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরের দিনই মৃত্যু হয় তার। মৃতের স্ত্রী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে প্রতারণা চক্রের জাল সামনে আসে। গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। শুধু অনলাইন নয়, অফলাইনেও একই ছবি। হাসপাতাল কর্মীর পরিচয় দিয়ে রক্ত সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। সাড়ে ৩ হাজারের বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা করানোর জন্য। কিন্তু সোয়াব পরীক্ষা করা হচ্ছে না, কাল্পনিক রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে অসুস্থ ব্যক্তি জানতেই পারছেন না, তিনি মারণরোগে আক্রান্ত কিনা!

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ-প্রশাসনকে আরো সক্রিয় হতে হবে বলে মনে করেন সাবেক পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, সাইবার সেলে প্রচুর অভিযোগ আসে। বর্তমান পরিকাঠামোয় একটি কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থায় সবটা দ্রুত সামলানো মুশকিল। তাই কয়েকটি জোন ভাগ করে তদন্ত চালাতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে তদন্তকারীদের। আর অবশ্যই অনলাইনে লেনদেন করার আগে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে ক্রেতাকে। তবে জনসচেতনতার থেকে অপরিসীম লোভ নিয়ে চিন্তিত সাহিত্যিক-সম্পাদক জয়ন্ত দে। তিনি বলেন, লকডাউনে রোজগার নেই বলে প্রতারণা করছে এমন নয়। আসলে উদ্বৃত্ত পয়সার দরকার। মানুষ লোভের জন্য প্রতারণা করছে। এটা নৈতিক অবক্ষয়। কাউকে ভুল রিপোর্ট দেওয়া শুধু প্রতারণা নয়, এটা খুনও। পুলিশ-প্রশাসনের ঢিলেমিতে প্রতারকদের সুবিধা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close