সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৮ মার্চ, ২০২০

যে কারণে আগাম মৃত্যু চান ৩ মুক্তিযোদ্ধা

১৯৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল গ্রামের হোসেন আলী (৭৮), পোড়াবাড়ী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কাদের (৬৯)। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার গয়লা গ্রামের শাহজামাল সেখ (৭৪) সৃষ্টিকর্তার কাছে দ্রুত আগাম মৃত্যুবরণ করার আকুতি করেছেন।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে এ দেশের দামাল ছেলেরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে মাতৃভূমি স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা ছিনিয়ে আনে তাদের মাতৃভূমি স্বাধীনতা। কিন্তু সেই স্বাধীন বাংলার মাটিতে বসে স্বাধীনতা দিবসের পূর্বক্ষণে বয়োবৃদ্ধ এই মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে হচ্ছে আগাম মৃত্যু। রাগে-ক্ষোভে তারা এখন দ্রুত মরতে চান।

দীর্ঘদিন ধরে এসব মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন সম্মানী ভাতাভোগী। তা ছাড়া সরকার কর্তৃক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কতবার হয়েছে, তার নাম কী বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ না থাকারই কথা। কিছুদিন আগে ২০১৭ সালে উপজেলাভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে সমর্থনসহ বিভিন্ন রোষানলে পড়ে অনেকের নামই ‘গ’ তালিকা স্থান পেয়েছে। উল্লেখ্য, দেশের অনেক উপজেলায় এই যাচাই-বাছাই করতে ব্যর্থ হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলা অন্যতম। এ উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধার ভাতা অব্যাহত রয়েছে। বাছাইদের আপিল করার সুযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপিলের রায় দেওয়ার আগেই মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর প্রথম লগ্নে এবং মহান স্বাধীনতা দিবসের পূর্বক্ষণে এই ‘গ’ তালিকা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। যে মুহূর্তে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্সক্ষায়িত করেছেন, সেই মুহূর্তে এই পাতানো খেলা ভাবিয়ে তুলেছে মৃত্যুপথ যাত্রী হোসেন আলীদের। তারা ‘গ’ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হলেও আজও তাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য, যাচাই-বাছাই, সাক্ষী-সাবোদ জোগার আর সালাম-কালাম দিতে যে পয়সা সম্মানী ভাতা পান, তার চেয়ে বেশি খরচ হয় বলে যানান এক মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জামুকা, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের উদাসীনতায় আজও সমাপ্ত করতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা। হোসেন আলী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মরতে চান, কারণ তার কাছে ওষুধ কেনার জন্য ৩০০ টাকাও নেই।

মুজিববর্ষে এবং মহান স্বাধীনতা দিবসের পূর্বক্ষণে ভাতা বন্ধের এই নির্দেশ প্রত্যাহার, চূড়ান্ত আপিলের রায় না হওয়া পর্যন্ত এবং দেশের সব জেলায় যাচাই-বাছাই না করেই এই পাতানো খেলা বন্ধের অভিমত ব্যক্ত করেন। জরুরি ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদানে নির্দেশ প্রদানসহ সঠিক মূল্যায়ন প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তা ছাড়া ‘গ’ তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা যদি অমুক্তিযোদ্ধাই হন, তাহলে এদের তালিকা যারা তৈরি করেছেন, ভাতা প্রদানকারী, মৃত্যুর পরও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনে অংশগ্রহণকারী, সরকারি অর্থের অপচয়কারীদের কঠোর শাস্তিও দাবি করেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close