মিনহাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

চসিকে জামায়াতপন্থিদের পদোন্নতির তোড়জোড়!

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) তিন বছর আগের ১ হাজার ৪৬ পদে নিয়োগের প্রবিধানমালা অনুমোদন হওয়ার আগেই পদোন্নতির তোড়জোড় শুরু করেছে আগে থেকেই নিয়োগ পাওয়া জামায়াতপন্থিরা। জানা গেছে, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল কলেজের শিবিরের ভিপি রেজাউল বারী চসিকে প্রকৌশল বিভাগে উপসহকারী হিসেবে যোগ দেন। ২০১০ সালে মঞ্জুর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে শুরু হয় তার ক্ষমতার দাপট। ২০১১ সালের মার্চে অস্থায়ী ভিত্তিতে কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই উপসহকারী প্রকৌশলী পদে সাতজনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র মঞ্জু। এদের অধিকাংশই ছিলেন শিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে রয়েছেন শিবির নেতা রেজাউল বারীর ভাইসহ পদধারী ছাত্রদল ও শিবিরের নেতা।

জানা গেছে, তিন বছর আগে ১ হাজার ৪৬টি পদের অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। তবে এই জনবল কাঠামোতে নতুন সৃষ্ট পদের প্রবিধানমালা এখনো অনুমোদিত হয়নি। কিন্তু আগের অর্গানোগ্রামের শূন্যপদ পূরণ করতে গিয়ে অর্গানোগ্রামের নতুন সৃষ্ট পদে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। ফলে এসব পদে পদোন্নতি পেতে তোড়জোড় শুরু করেছেন কর্মকর্তারা। তেমনিভাবে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের বিদুৎ শাখায় ১৯৮৮ সালের সাংগঠনিক কাঠামো অনুসারে নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ ছিল একটি, যা পূর্ণ রয়েছে। তবে ১ হাজার ৪৬টি পদের অর্গানোগ্রামে আরো একটি পদ বাড়ানো হয়েছে। সেই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে রেজাউল বারী নামের এ প্রকৌশলীকে। এমন বিতর্কিত প্রকৌশলীর পদোন্নতি খবর দেওয়াতে ক্ষোভে ফেটে উঠেছেন স্বাধীনতার পক্ষের প্রকৌশলীরা।

১৯৮৮ সালে সরকার চসিককে ৩ হাজার ১৮০টি সাংগঠনিক পদের অনুমোদন দেয়। সেই সাংগঠনিক কাঠামোর ৮৬৬টি শূন্যপদ পূরণ করতে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল করপোরেশন। কিন্তু সাংগঠনিক কাঠামোর (অর্গানোগ্রাম) বিপরীতে প্রবিধানমালা না থাকায় সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল মন্ত্রণালয়। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কারণে প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহাকে শোকজ করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এছাড়াও পরবর্তী সময়ে এসব শূন্যপদ পূরণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়েছিল করপোরেশন। কিন্তু তখনো প্রবিধানমালা না থাকায় অনুমোদনের আবেদন নাকচ করেছিল একই মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ১ হাজার ৪৬টি নতুন পদ সৃষ্টির অনুমোদন দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সৃষ্ট পদগুলোর বেতন ‘স্কেল ভোটিং’ ছাড় ও কোনো প্রবিধানমালার অনুমোদন না হওয়ায় কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি চসিক। সর্বশেষ চলতি বছরের ১১ জুলাই ১৯৮৮ সালের অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর চাকরির বিধিমালার অনুমোদন হয়। ফলে ওই অর্গানোগ্রামে সৃষ্ট শূন্যপদের নিয়োগে কোনো বাধা রইল না। তবে ১ হাজার ৪৬টি পদের সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন সৃষ্ট পদের অর্গানোগ্রাম এখনো অনুমোদন হয়নি। অনুমোদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে অনুমোদন হওয়ার আগেই এই সাংগঠনিক কাঠামোর শূন্যপদের বিপরীতে পদোন্নতি করতে তোড়জোড় শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সম্প্রতি করপোরেশনে অনুষ্ঠিত পদোন্নতি বোর্ডের সভায় ওই সাংগঠনিক কাঠামোর শূন্যপদে বেশ কয়েক জনকে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।

তার মধ্যে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলামকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী সপ্তাহের শুরুতে এই সভার রেজুলেশন লিখিত আকারে প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এছাড়াও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এভাবে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য অনান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা শাহীনুল ইসলাম ও ফরহাদুল আলম। শাহীনুল ইসলাম সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগে চসিকের চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন, যা নিয়ে বর্তমানে আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন আছে। ফরহাদুল আলম ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় ছিলেন ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ১৯৮৮ সালের জনবল কাঠামোর প্রবিধানমালা অনুমোদন হয়েছে। যেখানে যেসব পদ রয়েছে তার জন্য আলাদা প্রবিধানমালার দরকার নেই। তবে ১ হাজার ৪৬টি নতুন সৃষ্ট পদের অর্গানোগ্রামের প্রবিধানমালা এখনো অনুমোদন হয়নি। তবে অনুমোদনের একদম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে একজনকে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, প্রবিধানমালা অনুমোদন না হওয়ায় দীর্ঘদিন চসিকে নিয়োগ বন্ধ ছিল। এখন সেটার অনুমোদন হয়েছে। তবে নতুন ১ হাজার ৪৬ পদের অনুমোদিত অর্গানোগ্রামের বিপরীতে প্রবিধানমালা অনুমোদন হয়েছে কিনা, সেটা দেখে বলতে হবে। নতুন সৃষ্ট পদে প্রবিধানমালার অনুমোদন হওয়ার আগে পদোন্নতি দেওয়া যাবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি আমলে নিয়েছি। খতিয়ে দেখা হবে। পুরো বিষয়টা আগে আমার দেখতে হবে, তারপর আমি বিস্তারিত বলতে পারব। তবে নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close