চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২৩ জুলাই, ২০১৮

চট্টগ্রামে বহুতল ভবন মিসম্যাক মরিগান

অগ্রণী ব্যাংকের নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন

চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানাধীন গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় ১৭ দশমিক ৪১ শতক জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ‘মিসম্যাক মরিগান’ নামের একটি বহুতল ভবন। মিসম্যাক ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ করে ৩১টি ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে। তবে এর আগে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গিয়ে ভবনটির দলিল বন্ধক দিয়ে রাখে মিসম্যাক ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড। এখন ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে এসব সম্পত্তি নিলামে তুলেছে ব্যাংক। তবে প্রকৃত ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে টাকা আদায় না করে এই নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, এই নিলাম প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে আইন মানা হয়নি।

অগ্রণী ব্যাংকের দাবি, ২০১১ সালের ৭ মার্চ ব্যাংকটির চট্টগ্রামের লালদিঘী পূর্ব করপোরেট শাখা থেকে ঋণ নেওয়ার সময় ‘মিসম্যাক মরিগান’ নামের ভবনটির মালিকানা-সংক্রান্ত দলিলপত্র জমা দেয় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান মিসম্যাক ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড। ঋণ পরিশোধ না করায় গত ৩১ মে পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্যাংকের পাওনা সুদসহ চার কোটি ছয় লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৫৬ টাকা। এই টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ‘মিসম্যাক মরিগান’ ভবনে থাকা ৩১টি ফ্ল্যাট নিলামে বিক্রির ঘোষণা দিয়ে গত ২১ জুন চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেয় অগ্রণী ব্যাংক। ১৯ জুলাই পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানায় ব্যাংকটি।

তবে ব্যাংকের এমন বিজ্ঞপ্তি দেখে বিস্মিত হন সেই ৩১টি ফ্ল্যাটের মালিকরা। তাদের দাবি, তারা কেউই অগ্রণী ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা নন। সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মিসম্যাক ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা। বর্তমানে ভোগ দখলে আছেন সবাই।

তবে এদের মধ্যে ১০ জন ক্রেতাকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হলেও নানা টালবাহানার কারণে এখন পর্যন্ত অন্যরা রেজিস্ট্রেশন পাননি। ‘মিসম্যাক মরিগান’ ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতি সূত্র জানায়, ২০১২ সালে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান শাহীন দেশ ত্যাগ করে কানাডায় চলে যান এবং এখনো দেশে ফিরে আসেননি। কিন্তু কোম্পানির পরিচালক (অর্থ) এ এম শাহ্ আলমকে ২০১২ সালের ৩ জুলাই কোম্পানি কর্তৃক ফ্ল্যাট মালিকদের রেজিস্ট্রি দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। কিন্তু শাহ্ আলম নানা অজুহাতে লিফট, জেনারেটর, ছাদের কাজ, টাইলস ফিটিং, সিঁড়ির রেলিং রঙের কাজসহ যাবতীয় উন্নয়ন কাজের বিষয় উল্লেখ করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। নির্মাণকালীন বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ওয়াসার বিল ইত্যাদি কোম্পানি পরিশোধ না করায় ফ্ল্যাট মালিকদেরকে পরিশোধ করতে হয়েছে। অসমাপ্ত কাজগুলো নিজ নিজ ফ্ল্যাটের মালিকরা সম্পন্ন করায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (অর্থ) শাহ্ আলম গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসছেন যে, কোম্পানির এমডি মিজানুর রহমান শাহীন দেশে আসবেন এবং রেজিস্ট্রেশন দেবেন। কোম্পানির পরিচালক এ এম শাহ্ আলম ভূমি মালিকদেরকে মিথ্যা আশ^াস দিয়ে ফ্ল্যাটের অনেক মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। উদ্দেশ্যমূলক আর্থিকভাবে ক্ষতি করতে পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ১২ (৩) ধারা মোতাবেক ৩১ টি ফ্ল্যাট নিলামে বিক্রির জন্য ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবি, ব্যাংকে বন্ধক প্রদানের বিষয়টি গোপন করে ফ্ল্যাট বিক্রি করে কোম্পানি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে ঋণের আসল টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। এবং তফসিলভুক্ত সম্পত্তিতে জমির পরিমাণ ১৭ দশমিক ৪১ শতক বা ১১ দশমিক ৪৬ কাঠা জমির ওপর নির্মিত। মিসম্যাক মরিগান নামের প্রকল্পের মোট ৪৮টি ফ্ল্যাট ও ২৪টি পার্কিং এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ বাবদ ৭ দশমিক ৫৬ কাঠা ভিটি ভূমি ১৫টি কার পার্কিংসহ নির্মিত স্থাপনায় নির্দিষ্ট করে পৃথকীকরণ করা হয়নি। এ বিক্রয় বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ব্যাংক পাওনা সুদসহ কোম্পানির নিকট ৪ কোটি ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৬। অথচ সেই ৩১টি ফ্ল্যাটের মূল্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে নিলাম প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ ও এ ক্ষেত্রে আইনের বিধান অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেওয়ার বিষয়টি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ও ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান উভয়ে গোপন রেখেছে। বন্ধকদাতা প্রতিষ্ঠান বন্ধককৃত সম্পতি বিক্রি করতে পারেন না। যা রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৬ ধারায় উল্লেখ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ও ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান আইনের সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করেছেন। বন্ধকদাতা ও ফ্ল্যাটের মালিকদেরকে নিলামের উদ্যোগ নেওয়ার আগে পাওনা পরিশোধের জন্য কমপক্ষে ৩ মাসের লিখিত নোটিস দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃক ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান অথবা ফ্ল্যাট মালিকদেরকে কোনো লিখিত নোটিস দেওয়া হয়নি। ব্যাংকের কাছে ফ্ল্যাট বন্ধক রয়েছে- এমন কোনো সাইনবোর্ড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্থাপন করেনি। এমনকি ফ্ল্যাট বিক্রিকালীন ব্যাংক কর্তৃক কোম্পানিকে বিক্রির ওপর কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করেনি। ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনোদিন প্রকল্পস্থান পরিদর্শন করেনি। আইনের বিধি-বিধান সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে এ নিলাম কার্যক্রম প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, ব্যাংকের পাওনার তুলনায় সেই ৩১টি ফ্ল্যাটের মূল্য প্রায় কয়েক গুণ বেশি। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন পাওয়া অনেক ফ্ল্যাট ক্রেতা অন্যান্য ব্যাংক থেকে ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করেছেন। এ প্রেক্ষিতে কোম্পানির পরিচালক (অর্থ) শাহ আলম রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত এবং নির্বাহী পরিচালক মোজাম্মেল হক কোম্পানির পক্ষে ঋণ গ্রহণ করেছেন এবং তারা সকলে এখনো কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা ঋণ পরিশোধে সক্ষম। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হলে অগ্রণী ব্যাংকের সকল পাওনা আদায় নিশ্চিত হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist