সেখ জিয়াউল হক, রাজশাহী

  ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

পাল্টে যাচ্ছে রাজশাহীর পদ্মাপাড়

‘পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর থেকে সোনাইকান্দি পর্যন্ত সংরক্ষণ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু এবং বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক প্রকল্পের কারণে পাল্টে যাচ্ছে পদ্মাপাড়ের চিত্র। রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর থেকে পশ্চিমে পবা উপজেলার নবগঙ্গা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় গত ৩০ বছরে প্রায় আড়াই হাজার ঘরবাড়ি চলে গেছে পদ্মা নদীর গর্ভে। তাই ভাঙনের ভয়ে নদীপাড়ের এই গ্রামগুলোর বাসিন্দারা পাকাবাড়ি নির্মাণ করতেন না। কিন্তু গত প্রায় ছয় মাস আগে থেকে এলাকাগুলোতে এখন পাকাবাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়ে গেছে। কেননা, ‘পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রাজশাহী মহানগরীর অন্তর্ভুক্ত বুলনপুর থেকে সোনাইকান্দি পর্যন্ত সংরক্ষণ’ প্রকল্পের আওতায় পুরো এলাকাটি এখন কংক্রিটের ব্লক দিয়ে বাঁধাই করার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রথম ধাপে পাঁচটি প্যাকেজে বুলনপুর থেকে হাড়ুপুর পর্যন্ত দুই হাজার ৬৫০ মিটার তীর রক্ষার কাজ চলছে। ব্লক দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হচ্ছে নদীর এই পাড়।

গত বছরের জুন থেকে শুরু হওয়া এ কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। এ কাজের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। তবে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই কাজটি শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি শেষ হওয়ার পর আসছে শুষ্ক মৌসুমে হাড়–পুর থেকে পবার সোনাইকান্দি পর্যন্ত দুই হাজার ২৫৫ মিটার নদীর তীর রক্ষার কাজ শুরু হবে। এই কাজ শেষের পর পদ্মাপাড়ের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের বেশি এলাকার স্থায়ী সংরক্ষণ হবে।

হাড়–পুর এলাকার বাসিন্দা আব্বাস আলী (৬০) বলেন, প্রায় ৩০ বছরে অন্তত আড়াই হাজার বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে পদ্মায়। তাই এলাকায় কেউ পাকাবাড়ি নির্মাণ করত না। কিন্তু বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর এলাকার যার যার সামর্থ্য আছে, তারা সবাই পাকাবাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। এই বাঁধের আগে তারা সবাই ভাঙনের আতঙ্কে দিন পার করতেন। এখন তাদের সেই দুশ্চিন্তায় কেটে গেছে। পাশাপাশি এখন এলাকার জমির দামও বেড়ে গেছে।

গতকাল রোববার সকালে হাড়–পুর এলাকায় পাড় বাঁধাইয়ের কাজ পরিদর্শনে যান রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি জানান, পুরো প্রকল্পের ব্যয় ২৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩১ কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা নদী ড্রেজিংও করা হবে। এর ফলে রাজশাহী শহরের পাশে নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ থাকবে। নদী তীর রক্ষা ও ড্রেজিংয়ের পর ওই এলাকায় পাকা সড়ক নির্মাণ করে দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, উন্নয়ন তখনই বোঝা যাবে, যখন এর সুফল মানুষ ভোগ করবে। এখন এই বাঁধের কারণে এলাকার মানুষ পাকাবাড়ি করা শুরু করেছেন। এটা দিয়েই উন্নয়ন বোঝা যায়। বোঝা যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে তিনি বুলনপুর থেকে প্রথমে পূর্ব দিকে নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার পর্যন্ত এবং এরপর আরো পূর্বে কাটাখালি এলাকা পর্যন্ত তিনি পদ্মার পাড় বাঁধাই করতে চান। এতে রাজশাহী শহর পুরোপুরি সংরক্ষিত হবে।

পাউবোর রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, চলমান প্রকল্পটি গ্রহণ করতে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে তিনি তিনবার পরিকল্পনা কমিশনে গিয়েছিলেন। নিজের নির্বাচনী এলাকার বাইরের এলাকাও প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সংসদ সদস্য বাদশা সব সময় এই কাজ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি এলাকার লোকজনও বেশ সহযোগিতা করেছেন। তাই দ্রুতই সম্পন্ন হবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ।

মোখলেসুর রহমান বলেন, এই বাঁধের পাশেই বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণ হচ্ছে। সেখানে বহুতল ভবন হবে। কিন্তু যে স্থানটিকে পার্কের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে সেখানে আগে ভবন করার কথা কেউ ভাবতেও পারতেন না। এই বাঁধের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার পর এলাকাটি একটি নান্দনিক সৌন্দর্য পাবে বলেও মনে করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist