গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২৯ মার্চ, ২০২৩

বাঁশের বাঁশি আর দেখা যায় না

বাঁশিওয়ালা বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবার আলী। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

একসময় পথে পথে বাঁশি বাজিয়ে বাঁশের বাঁশি বিক্রির দৃশ্য ছিল খুব স্বাভাবিক। বাঁশি বিক্রির জন্য বাঁশিওয়ালা মনোমুগ্ধকর সুর তুলে তারা হেঁটে বেড়াতেন গ্রামবাংলার হাটবাজারসহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন হারাতে বসেছে এই পেশা। সরকারি কোনো তথ্য না থাকলেও আগের চিরচেনা দৃশ্য এখন বিরল।

বিলুপ্তপ্রায় এই পেশার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের মধ্যে কামারখন্দে গোপালপুর গ্রামের আকবার আলী। তিনি বাঁশির সুরে মাতিয়ে তুলতেন এলাকাবাসীকে। বিক্রি করতেন তার হাতের তৈরি বাঁশের বাঁশি। আকারভেদে ওই সময় একটি বাঁশের বাঁশি ৫ থেকে ৭-৮ টাকায় বিক্রি করতেন, যা দিয়ে চলত তার সংসার। মানুষ আজকাল আর বাঁশের বাঁশি কেনে না।

আকবার আলী (৮৫) জানান, আমি কিশোর বয়সে আমার গ্রামে যাত্রাপালায় রাখালের ভূমিকায় অভিনয় করতাম। তখন থেকেই বাঁশির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে ক্যাম্পে ফিরে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান বাজিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবার আলী অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাতিয়ে তুলতেন।

বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবার আলী এলাকায় ‘বাঁশি আকবার’ নামে পরিচিত। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, স্বাধীনতার আগে হাটবাজারে, যাত্রাপালায় বাঁশি বাজাতাম। তার বাঁশির সুরে ধলেশ্বর গ্রামের রোমেনা বেগম তার প্রেমে পড়ে আজও তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করছেন। কিন্তু এখনকার দৃশ্য ভিন্ন। মানুষ এখন আমার বাঁশির সুরে মনোযোগী হয় না, তারা আমার এ অস্তিত্বকেও গুরুত্ব দেয় না।

গোপালপুর এবং পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বর, শ্যামপুর গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা এখনো বিশেষ বিশেষ দিনে তার বাড়ির আঙিনায় ভিড় জমাতো তার বাঁশি শোনার জন্য। এখনো গ্রামবাংলার বিয়ে, বনভোজনে বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে উৎসাহিত করেন আকবার আলী।

তাজুরপাড়া গ্রামের রজব আলী, আবদুল মজিদ জানান, সারা দিন মাঠে কাজ শেষে সন্ধ্যায় আকবারের বাড়িতে হোঁকা বৈঠকে চলত আকবারের বিভিন্ন গানের বাঁশির সুর। সঙ্গে চলত তামাক খাওয়ার ধুম।

তিনি আরো বলেন, এখন বাঁশি বিক্রি করি না। তবে অনেককেই বাঁশি বাজানো শেখাই। তরুণরা যখন তার কাছে বাঁশি বাজানো শিখতে আসে তখন আমি অভিভূত হই। এখন বাঁশি সুরের মাঝেই ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আমি অনুভব করি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাঁশি তার কাছেই রাখতে চান বলেও জানান তিনি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাঁশের বাঁশি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close