মরিয়ম খানম সেতু

  ০৯ নভেম্বর, ২০২৪

মুক্তমত

চাকরি নাকি ব্যবসা কোনটা ভালো হবে

জীবনে অর্থ উপার্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অর্থ উপার্জন করার মাধ্যম কেমন হবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির পছন্দ ও যোগ্যতার উপর। শিক্ষা জীবনের গন্ডি পেরিয়ে, সবাই চায় নিজের পছন্দের পেশাকে জীবিকা উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নিতে। এ সময় অধিকাংশ মানুষ হতাশায় ভোগে। তাদের জন্য চাকরি নাকি ব্যবসা কোনটা ভালো হবে এবং কোন কাজটা করবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। এ সিদ্ধান্তহীনতা তাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর অন্যতম হলো পেশা নির্বাচন করা। পেশা নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে সারাজীবন আফসোস করতে হয়। কেউ যদি স্বাধীনচিন্তার মানুষ হয় অথচ পেশা হিসেবে চাকরি বেছে নেয় তাহলে এই চাকরিই হয়ে ওঠে তার বিষাদময় জীবনের অন্যতম কারণ।

অপছন্দের কাজ বেশিদিন করা কষ্টকর। তাই পেশা নির্বাচনে নিজের পছন্দের কাজকে গুরুত্ব দিতে হয়। পছন্দের কাজে মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে পারে ফলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো, নিজেকে জানা। নিজের ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করা। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে, নিজের মধ্যে একটা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মতো গুণাবলি আছে কিনা, ব্যবসায়ে ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা এবং আত্নবিশ্বাস আছে কিনা। ব্যবসার প্রতি আগ্রহ আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। যদি বিশেষ কোনো চাকরির প্রতি ভালোলাগা থাকে তবে চাকরি করাই ভালো।

ব্যবসা এবং চাকরি দুইটাই সম্মানজনক কাজ। ব্যবসা ভালো আর চাকরি করা খারাপ বিষয়টি এমন নয়। সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্ভর করে, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকরিজীবীদের উপর। যদি একদল মানুষ চাকরির প্রতি আগ্রহী না হতো তবে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সফল হতো না। ব্যবসা এগোতে হলেও লোকবল প্রয়োজন হয়। তারা মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করে তবে মানুষ তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে আগ্রহী না হলে ব্যবসায়ীরাও লসের সম্মুখীন হবে। চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের মাঝেও একটা যোগসূত্র রয়েছে, তারা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। তাই কোনো পেশাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।

ব্যক্তি হিসেবে নিজের স্বপ্ন ও লক্ষ্যের সঙ্গে সামণ্জস্যপূর্ণ পেশা নির্বাচন করতে পারলে কাজ করা সহজসাধ্য হয়। আপনি যদি হয়ে থাকেন স্বাধীন চিন্তাচেতনাসম্পন্ন মানুষ, সৃজনশীল, ঝুঁকি গ্রহণে সাহসী, সর্বদা নতুন কাজ শিখতে আগ্রহী এছাড়াও নির্দিষ্ট আয়ের গন্ডি পেরিয়ে বেশি আয় করতে চান তাহলে ব্যবসা হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। এক্ষেত্রে আপনার মাঝে থাকতে হবে নেতৃত্বের গুণাবলি। আপনার অধীনে কাজ করা মানুষদের সঠিকভাবে চালনার জন্য টিম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা প্রয়োজন হবে। এছাড়া যোগাযোগে দক্ষতা, সৎ, পরিশ্রমি হতে হবে। আপনি যদি ভাবেন, চাকরি মানে অন্যের অধীনে কাজ করা, ৯টা-৫ টা রুটিন মেনে কাজ করা বিরক্তিকর বরং ব্যবসা ভালো, স্বাধীন এবং মন চাইলে কাজ করব, না চাইলে বসে থাকব আরামে। এমন চিন্তা নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে হলে চাকরির চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এখানে লেগে থাকার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হয়। বরং ব্যবসার চেয়ে চাকরি তুলনামূলক কম পরিশ্রমের এবং আরামের কাজ।

ব্যবসায়ে সুযোগ ও সম্ভাবনা বেশি তবে পরিশ্রমও বেশি করতে হয়। এছাড়া ব্যবসায়ের শুরুতে একটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হয় কিন্তু চাকরিরক্ষেত্রে পুঁজি প্রয়োজন হয় না। ব্যবসার কোনো নিরাপত্তা নেই। আজ লাভ হলে কাল লস হতে পারে। এক্ষেত্রে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়। খামখেয়ালি ও আবেগের বশে ব্যবসা শুরু করলে সফল হওয়া যায় না, তীব্র মনোবল নিয়ে কাজ করতে হয়। এসব দিক বিবেচনায় রেখে ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে কেউ যদি স্থিতিশীল ও নিরাপদ আয়ের পথ চায় সেক্ষেত্রে চাকরি করা ভালো। চাকরিতে নির্দিষ্ট একটা স্কিল শিখেই কাজ করা যায়। প্রমোশনের ব্যবস্থা আছে যদিও তা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। চাকরিতে মন চাইলে ছুটি নেওয়া যায় কিন্তু একজন ব্যবসায়ীর একদিনের ছুটি মানে ব্যবসায় লস। চাকরি ও ব্যবসা উভয় পেশাতেই কিছু সুবিধা, অসুবিধা রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে চাকরি করলে সীমিত আয়ে সাদামাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব আর ব্যবসায় সফল হলে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে পছন্দ সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। মানুষ যে কাজে পারদর্শী সেটা নিয়ে কাজ করা তার জন্য কল্যাণজনক।

লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close