প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
কলকাতায় আটক তিন জঙ্গির ডায়েরিতে বাংলাদেশি ব্লগারের নাম
কলকাতায় আটক আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) তিন সদস্যের কাছ থেকে উদ্ধার করা ডায়েরিতে বাংলাদেশি এক ব্লগারের নাম পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবিটির পরবর্তী টার্গেট হিসেবে তার নামটি হয়তো লেখা হয়েছিল। ভারতীয় সাংবাদিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান ওই ব্লগার। তিনি আরো জানান, কলকাতায় আটক জঙ্গিদের ডায়েরিতে নাম থাকায় তার নিরাপত্তা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে তাকে সিকিউরিটি বিষয়ে পরামর্শের জন্যও ডাকা হয়েছিল। ডিএমপিতে ওই ব্লগারকে ডাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও ঠিক কী কারণে তার নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে, তা পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা যায়নি।
গত মঙ্গলবার কলকাতা থেকে দুই বাংলাদেশিসহ তিনজনকে আটক করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। আটককৃতরা হলেন-সুনামগঞ্জের সামসেদ মিঞা, খুলনার রিয়াজুল ইসলাম ও ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার মনতোষ দে। আটককৃতদের গত বুধবার ব্যাংকশাল আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে এসটিএফ। বিচারক রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে সম্প্রতি কোনো ধরনের হুমকি পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে এবিটির সদস্যদের ডায়েরিতে থাকা ব্লগার বলেন, ‘লেখালেখি ও পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডের কারণে নিয়মিতই হুমকি ও আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সিকিউরিটি বিষয়ে পরামর্শের জন্য ডাকা হয়েছিল।’
কলকাতায় এবিটি সদস্যদের আটকের পর মঙ্গলবার এসটিএফের ডেপুটি কমিশনার মুরলিধর শর্মা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল-বাংলাদেশ থেকে দুই-তিনজন জঙ্গি পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। তিন দিন আগে আমরা এই তিনজন আসার ব্যাপারটি নিশ্চিত হই। গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে কলকাতা রেল স্টেশন থেকে এই তিনজনকে আটক করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানতে পারি, তারা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।’ তিনি আরো বলেন, আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে দুটি আদার কার্ড, এটিএম কার্ড, চারটি ফোন, নয়টি আগ্নেয়াস্ত্র, এবিটি ও আলকায়েদার লিফলেট জব্দ করা হয়েছে।’
অস্ত্র কেনার জন্য তারা বের হয়েছিল বলে জানায় এসটিএফ। ভারতীয় গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতদের কাছ থেকে লিফটলেট ছাড়াও ডায়েরি ও কিছু নথি পাওয়া গেছে। ডায়েরিতে বাংলাদেশি একজন ব্লগারের নাম ও নথিতে কলকাতার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানের নাম রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান ওই বাংলাদেশি ব্লগার।
জঙ্গিদের ডায়েরিতে নাম থাকা ব্লগারকে তার নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলার জন্য ডাকা হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা।
এদিকে, ভারতের বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার বলেছে, গত মঙ্গলবার কলকাতার লালবাজারের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স সামসেদ মিঞা ওরফে তনবির এবং রিয়াজুল ইসলাম ওরফে সুমন নামে যে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে, তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য বলে পুলিশের দাবি। সামসেদের সঙ্গে ধরা পড়েছে মনতোষ দে ওরফে শ্যামল দে ওরফে জিয়ারুল নামে এক স্থানীয় অস্ত্র ব্যবসায়ী। কিন্তু এবিটির আরো কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশ থেকে এসে কলকাতায় ঘাঁটি গাড়ার কাজে যুক্ত ছিল বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
মঙ্গলবার কলকাতা স্টেশনের কাছ থেকে সামসেদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দেখানো হলেও এসটিএফ সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগেই তাদের ধরা হয়েছিল। এই কয়েক দিন লাগাতার জেরা করার পরে পুলিশের ধারণা, সম্প্রতি এত শক্তিশালী জঙ্গি নেটওয়ার্ক আর ধরা পড়েনি। কারণ, বাংলাদেশে বিস্ফোরক পাঠানো এবং কলকাতায় জিহাদি যুবক-যুবতী নিয়োগ করে এবিটির সংগঠন তৈরির যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল সামসেদ-রিয়াজুলরা। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তার কথায়, ‘শুধু ঢাকা নয়, বড় বিপদ থেকে বাঁচল কলকাতাও। কিন্তু এদের দলের আরো কয়েকজন ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। সংশয় হচ্ছে, এটাই কি একমাত্র মডিউল? যদি আরো মডিউল থেকে থাকে, তাদেরও ধরতে হবে।’
আটককৃতরা কথাবার্তা চালাত প্রোটেক্টেড টেক্সট বা পিটি অ্যাপ ব্যবহার করে। হুন্ডির মাধ্যমে নিয়মিত টাকাও পেয়েছে তারা। এসটিএফ গোয়েন্দারা জেনেছেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সামসেদ মিঞা ওরফে তনবির বনেদি ঘরের ছেলে। তার এক ভাই ইতালিতে থাকেন। ২০১৪ সালে সিলেটে পড়ার সময় জনৈক মামুনের সঙ্গে তার আলাপ হয়। এই মামুনের হাতেই সামসেদের জিহাদের দীক্ষা। মামুনকে বাংলাদেশ পুলিশ আগেই গ্রেফতার করেছে। এসটিএফের ডিসি মুরলিধর শর্মা এদিন বলেন, ‘ সামসেদের মগজ ধোলাই করেছিল এবিটির বাংলা টিমের প্রধান মেজর জিয়া।’ তিনি জানান, সামসেদ ও রিয়াজুল দেড় বছর আগে হায়দরাবাদের মান্নেগুড়ার এক কারখানায় কাজ করত।
বেলগাঁওতে দু-তিন মাস কাজ করার পরে সামসেদ ও রিয়াজুল পুনেতে যায়। সেখানে কয়েক মাস থাকার পর হায়দরাবাদে ফিরে এসে একটি কম্পিউটার কোর্স করে তারা। এর পরে কয়েক মাস রাঁচি ও পটনায় কাটিয়ে এ বছর দুর্গাপূজার সময় কলকাতায় আসে। মুরলিধর বলেন, ‘ধৃত দুই বাংলাদেশি বিস্ফোরক পদার্থ কেনার জন্য রাঁচি ও পাটনায় একাধিক জায়গায় গিয়েছিল। সে ব্যাপারে তথ্যও মিলেছে।’
সামসেদের সঙ্গে ধৃত মনতোষের কাছ থেকে ভারত বা বাংলাদেশের কোনো পরিচয়পত্র পাওয়া না গেলেও ডিসি (এসটিএফ) জানান, সে আগেও একাধিকবার অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হয়েছে। মূলত অস্ত্র ব্যবসার কারবারি মনতোষ বিহারের মুঙ্গের থেকে অস্ত্র কিনত। সে গত ছয় মাসে ৪-৫ বার বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। গ্রেফতার তিনজনকে বুধবার দুপুরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাংকশাল কোর্টে তোলা হয়। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যঅর্ণব ঘোষাল তাদের ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
"