টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

টেকনাফে ভেসে এলো ২৫টি মরা কাছিম

টেকনাফের মহেশখালীয়াপাড়ার সৈকতে একে একে ভেসে এলো ২৫টি মৃত মা কাছিম। ভেসে আসা কাছিমগুলোর কোনোটির পা ভাঙা, কোনটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভেসে আসে প্রায় ৩৫ কেজি ওজনের বিশাল একটি মৃত মা কাছিম। কাছিমটির পা, মুখে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এদিন রাতে টেকনাফের লম্বরী পর্যটন ঘাট, দরগার ছড়াসহ বিভিন্ন সৈকতে ভেসে আসে আরো অন্তত ৯টি মা কাছিমের মৃতদেহ। এর আগে বুধবার বাহারছড়ার বড় ডেইল, শিলখালী চৌকিদারপাড়া, মাথাভাঙ্গা ও উত্তর শিলখালী সৈকতে ১৫টি মা কাছিম ভেসে আসে। সব মিলিয়ে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার কেবল টেকনাফের সৈকতে ভেসে আসা কাছিমের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫টিতে।

টেকনাফে মা কাছিমের প্রজননের জন্য কোডেকের গড়ে তোলা হ্যাচারির কয়েকজন পাহারাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ১০ থেকে ২৫ বছর এ কাজের সঙ্গে জড়িত। এর আগে কখনো এত কাছিম মরতে দেখেননি। এ বছর সমুদ্রতটে প্রচুর মৃত মা কাছিম পাওয়া যাচ্ছে, যা খুবই হতাশাজনক।

বাহারছড়ার শামলাপুর ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দিন বলেন, সাগরে মাছ ধরার নৌযান রয়েছে প্রায় ছয় হাজার। নৌযানের জেলেদের নিষেধ করা আছে, মাছ ধরার জালে কাছিম আটকা পড়লে হত্যা না করে ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু তারপরও মা কাছিম মারা যাচ্ছে। উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, উপকূলের নিষিদ্ধ জাল উচ্ছেদের জন্য মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড প্রায় সময় অভিযান পরিচালনা করে। বিপুলসংখ্যক নিষিদ্ধ জাল জব্দ করে আগুনে ধ্বংসও করা হয়। তারপরও মা কাছিমের মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু বলেন, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, নয়াপাড়া, মহেশখালিয়াপাড়া, বাহারছড়া, উখিয়ার মনখালী, ছেপটখালী, পাটোয়ারটেক, ইনানী, কক্সবাজারের হিমছড়ি, দরিয়ানগর।

, কলাতলী সৈকতসহ মহেশখালী ও সোনাদিয়া উপকূলে প্রতিদিন গড়ে কয়েকটি করে মৃত মা কাছিম ভেসে আসছে। ২ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ দিনে অন্তত ৩৫টি মৃত কাছিম সৈকতে ভেসে আসে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কাছিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

নিষিদ্ধ জাল ছাড়াও সৈকতে ডিম পাড়তে আসা মা কাছিম বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা পড়ছে। বিশেষত সেন্টমার্টিন দ্বীপে কুকুরের হামলার ঘটনা ঘটছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, গত সাত দিনে দ্বীপের সৈকতে ১০-১৫টি মৃত মা কাছিম ভেসে আসে। অধিকাংশ কাছিম কুকুরে খেয়ে ফেলেছে। অবশিষ্ট কাছিম বালুচরে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের দায়িত্ব নেওয়ার যেমন কেউ নেই, তেমনি জেলেদের সচেতন করছে না কেউ। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার সম্পর্কে সরকারের নীতিমালা নিয়ে স্থানীয় জেলেদের ধারণা নেই।

সামুদ্রিক প্রাণী কাছিম সমুদ্রের বাস্তুসংস্থানের অন্যতম প্রধান উপাদান। তারা জেলি মাছজাতীয় বিষাক্ত সামুদ্রিক প্রাণী খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। কাছিম না থাকলে সমুদ্রে দূষণ বাড়ার পাশাপাশি জেলি মাছের সংখ্যা বেড়ে যাবে বলে গবেষকরা মনে করেন। এতে মৎস্য সম্পদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close