নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ মে, ২০২৪

বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি

ফসলের ক্ষতি, চারজনের মৃত্যু

ঝড়ে গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ী এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় -প্রতিদিনের সংবাদ

তীব্র তাপপ্রবাহের পর গত রবিবার রাতে ও গতকাল সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় এবং শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীতে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রামে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও ফেনীতে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। শরীয়তপুর, সিলেট ও নেত্রকোনায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে দুই কৃষক, এক কৃষানি ও এক ওমানপ্রবাসীর।

রবিবার রাতে রাজধানী ঢাকায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে সোমবার রাজধানীর তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ঢাকার কাকরাইলে গাছ ভেঙে পড়ে। অন্যদিকে মোহাম্মদপুরে একটি অর্ধপাকা ঘরের দেওয়াল ধসে পড়ে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, রাজধানীতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এ সময় ৫৯ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে রাজধানীতে। নগরীতে চলতি মাসে এ ধরনের কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় এটিই প্রথম। এদিকে সোমবার তাপপ্রবাহের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশার বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে এবং তা অধিকাংশ জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।

সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে নগরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নগরের আগ্রাবাদ, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, চান্দগাঁও ও বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে নগরের বিভিন্ন কলোনির কাঁচা ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার আমজুরহাট, কমলমুন্সির হাট, বাইপাস ও চন্দনাইশের কাঞ্চননগরে সড়কের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলার কয়েকটি স্থানে গাছ পড়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চগ্যা বলেন, আজ (সোমবার) বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩২ মিলিমিটার।

শরীয়তপুরের জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়। তারা হলেনÑ জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া এলাকার আলতু মাঝির মেয়ে আমেনা বেগম (২৬) ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরসেনসাস ইউনিয়নের বেড়াচাক্কি গ্রামের নেছার উদ্দিন মাঝির স্ত্রী কুলসুম বেগম (৩৮)। সিলেটের কানাইঘাটে মাঠে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে মাহতাব উদ্দিন মাতাই (৪৫) নামে এক ওমানপ্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার দীঘিরপার ৩নং পূর্ব ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। মাহতাব উদ্দিন মাতাই উপজেলার দর্পনগর পশ্চিম করচটি গ্রামের রফিকুল হকের ছেলে।

নেত্রকোনার আটপাড়ায় জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। সোমবার সকালে সাড়ে ৮টায় উপজেলার স্বরমুশিয়া হাওরে এ ঘটনা ঘটে বলে আটপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ তাওহিদুর রহমান জানান। নিহত মো. দিলওয়ার মিয়া (৩৫) উপজেলার স্বরমুশিয়া গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে। ফেনীতে চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জেলা আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খুলনায় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয় ঝড়ো বৃষ্টি। এতে জনজীবনে অনেকটা স্বস্তি নেমে এসেছে। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, তাপপ্রবাহের পর খুলনায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কত মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, তা জানা যায়নি। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির। বিশেষ করে বোরো মৌসুমের ধান, মরিচ, বেগুন, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, শসা, করলা, ডাঁটা, আম ও লিচুর ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, রবিবার বিকেল ৫টায় শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। সন্ধ্যার পর বাতাসের গতি বাড়তে থাকে। রাত ১২টায় ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি। এরপর থেমেও যায়। রাত ২টায় ফের শুরু হয় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি। মাত্র ২০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে শেষ হয়ে যায় কৃষকের স্বপ্ন।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার ২ হেক্টর ফসলি জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ হেক্টর জমির। ফলে শিলাবৃষ্টিতে ধান ও সবজির ক্ষতির পরিমাণ ১৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার। রাজিবপুরের উজানচর-নওপাড়া গ্রামের কৃষক আল-মামুন বলেন, ‘আমার ৬০ শতক জমিতে প্রতি বছর ধান ৪২-৫০ মণ পেতাম। এছাড়া ৩৫ শতক জমিতে মরিচ করে গত বছর ১ লাখ টাকার ওপর বিক্রি করেছিলাম। এবার ফসল ভালো হয়েছিল। আশা করেছিলাম ফলন ভালো পাব, কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে সব হয়ে গেছে। অনেক কৃষক ঋণ করে এসব ফসল চাষ করেছে। সরকারের কাছে কৃষিঋণ মওকুফ করে কৃষিকাজে সার্বিক সহযোগিতার দাবি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান বলেন, ‘সরকারিভাবে কৃষকদের সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘এরই মধ্যে কৃষি ডিপার্টমেন্ট ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে আমাকে জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।’

এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম ব্যুরো, সিলেট, ফেনী, খুলনা, শরীয়তপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ প্রতিনিধি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কালবৈশাখী ঝড়,চট্টগ্রাম,সিলেট,ফেনী,শরীয়তপুর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close