ময়মনসিংহ ও নরসিংদী প্রতিনিধি

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

এসএসসির প্রথম দিন

শিক্ষকদের ভুলে পরীক্ষা দেওয়া হলো না ২০ শিক্ষার্থীর

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার মুখী পল্লীসেবক উচ্চবিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থী শিক্ষকদের ভুলে প্রবেশপত্র না পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। তবে ভুলের দায় নিয়ে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নান নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া নরসিংদীতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিতের প্রলোভন দেখিয়ে ৬ শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে আমিনুল ইসলাম নামে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি পলাতক রয়েছেন।

জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ২২ পরীক্ষার্থী ফরম পূরণে ভুল করে। পরে বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই পরীক্ষার্থীরা জানতে পারে- তাদের প্রবেশপত্র আসেনি। এরপর পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাপে প্রবেশপত্র আসবে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের শান্ত করে। তবে শেষ পর্যন্ত ২২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন প্রবেশপত্র পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়। বাকি ১৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে ওই ১৪ পরীক্ষার্থী বুধবার গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রবেশপত্র না পাওয়া শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে তাদের রেজিস্ট্রেশন ফি ও পরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণের টাকা পরিশোধ করেছে। সে সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ফরমফিলাপ হয়েছে বলে তাদের অবগত করে। কিন্তু বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা জানতে পারে- তাদের নিবন্ধনই হয়নি। ফলে তাদের প্রবেশপত্র আসেনি।

শিক্ষার্থীরা বলে, আমাদের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। নির্ধারিত ফি নিয়ে এখন বলছেন, রেজিস্ট্রেশন হয়নি। তাহলে প্রবেশপত্র আসবে কোথা থেকে। তাদের প্রতারণার কারণে আমাদের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাবে, তা মেনে নিতে পারছি না। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের আইসিটির শিক্ষক রেজাউল হক বলেন, ১৪ শিক্ষার্থীর অংশ না নেওয়ার মূল কারণ আমাদের ভুল। আমাদের ভুলের কারণে তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। আমরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। অনেক অভিভাবক আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। যেহেতু ভুল করেছি, যেকোনো শাস্তি মেনে নেব।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নান নিজেদের ভুল স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক মো. রেজাউল খুবই দক্ষ। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এমন ভুল কীভাবে করলেন, বুঝতে পারছি না। ওই ১৪ শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় তারা আর পরীক্ষা দিতে পারবে না। বাকি ৮ জনের ছবি ও গ্রুপের ভুল ছিল, তা সমাধান হয়ে গেছে। তারা প্রবেশপত্র পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বাকি ১৪ পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার পরও ফরমফিলাপের জন্য কেন টাকা নেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নরসিংদীর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা জানান, ব্রাহ্মন্দী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য ৬ শিক্ষার্থীকে নিজ প্রতিষ্ঠান নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিতের প্রলোভন দেখান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম।

পরে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড এবং প্রবেশপত্র দেওয়ার আশ্বাস দেন। আশ্বাসের পর তাদের রায়পুরা উপজেলার বালুয়াকান্দী উচ্চবিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে বলেন। কিন্তু বুধবার মোবাইল বন্ধ রেখে পালিয়ে যান আমিনুল। এরপর থেকে পলাতক রয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার যথারীতি পরীক্ষার সেন্টারে গিয়ে সেখানে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া হলে প্রবেশ করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে ফিরে নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসে অভিযোগ করে তারা। সেইসঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি প্রতারক শিক্ষকের বিচার দাবি করে। এদিকে জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, বিষয়টির সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ না পেলেও প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন তারা। তবে বিদ্যালয়টির অনুমোদনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রতারক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রচলিত আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close