reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ মার্চ, ২০২৪

আবুল কালাম আজাদের হাসির গল্প

মুলা

জামাই খেতে বসেছে। শাশুড়ি পাশে বসে যত্ন করে খাওয়াচ্ছে। শাশুড়ি বলল, খেতের মুলা যখন তোলা হলো তখন আসলা না জামাই। কি মুলা যে হইছে এবার! দেখার শোভা।

- ওইটা কী তরকারি আম্মা?

- এইটা মুলা চচ্চরি।

- আর ওইটা?

- এইটা ঝোল ঝোল করে মুলা রানছি। তুমি ঝোল পছন্দ করো এই জন্য।

- আর ওইটা কি তরকারি?

- এইটা মুলা ভুনা।

- মুলা ভুনা!

- হ, সবাই মুলা ভুনা করতে পারে না। আমি পারি। একেবারে রুই মাছের মতো স্বাদ। তাই না রে মুন্নি?

পাশ থেকে মুন্নি বলল, হ, আমার মা মুলা ভুনা করলে আশপাশের বাড়ি থেকে তরকারি নিতে আসে।

জামাই তার বউ মুন্নির কথায় কান না দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, ওইটা কী তরকারি আম্মা?

- এইটা মুলা শাক। ঝরঝরে করে ভাজছি। মুলা যখন তোলা হলো তখন তো আসলা না জামাই। কঁচি পাতাগুলার ভাজি যা লাগে!

- আর ওইটা কী আম্মা?

- এইটাও মুলা শাক। একটু পানি পানি রাখছি। আগামীবার অবশ্যই মুলা তোলার সময় আসবা। আগেই জানায়া রাখব।

- আম্মা ওইটা কী?

- এইটা মুলার ভর্তা। মুলা সেদ্ধ কইরা কাঁচালঙ্কা আর সরিষার তেল দিয়া ভর্তা বানাইছি। এই ভর্তা দিয়াই তিন প্লেট ভাত খাইতে পারবা। আর এই যে মুলা কেটে রাখছি। ভাতের লোকমার সঙ্গে কচকচ করে কামড় দিয়া খাবা। আগামীবার কিন্তু অবশ্যই খেতের মুলা তোলার সময় আসবা।

- আম্মা, আগামীবার কয় বিঘা জমিতে মুলা চাষ করবেন?

- এবার দুই বিঘা জমিতে মুলা চাষ করছিল। মুলা যা হইছিল! দেখার শোভা! তোমার শ্বশুর বলছে, আগামীবার চার বিঘা জমিতে মুলা চাষ করবে। আগামীবার কিন্তু খেতের মুলা তোলার দিনই আসবা জামাই।

- ঠিক আছে আম্মা, এখন তাহলে উঠি।

- উঠবা মানে? খাইবা না? তোমার জন্য এত আয়োজন করলাম।

- আম্মা, আগামীবার মুলা তোলার দিন আসব। নতুন মুলার তরকারি খাব। আমি এখনই বাড়ি যাইতেছি। একটু জরুরি কাজ আছে।

- বলো কী! কিছু না খেয়েই...!

- আম্মা, আগামীবার নতুন মুলা খেতে আসব। আম্মা, আপনের পা আগান, একটু সালাম করে যাই, আমার জন্য এত কষ্ট করেছেন।

- আজ কি মেয়েরে নিয়া যাইবা?

- না আম্মা, আপনার মেয়ে এবার থাক। মুলা যত দিন আছে তত দিন এখানেই থাক। আপনার হাতের সুস্বাদু মুলা তরকারি খাবে। আমাদের বাড়িতে তো এ রকম মুলা তরকারি রান্না করা হয় না।

- আমি মুন্নিকে মুলার বিভিন্ন পদ রান্না শিখিয়ে দেব।

- দরকার নেই আম্মা। সে পারবে না। তার মুলা তরকারি কখনোই আপনার মতো হবে না। অযথাই আপনি কষ্ট করবেন। তাহলে যাই আম্মা।

পথে নামতেই দেখা হলো সে এলাকার চেয়ারম্যান মোতালেব সমাদ্দারের সঙ্গে। মোতালেব সমাদ্দার খুব ক্ষমতাবান চেয়ারম্যান। জামাই চেয়াম্যানকে লম্বা করে সালাম দিল। চেয়াম্যান বলল, কী ব্যাপার জামাই, আজই আসলা আবার এখনই চলে যাচ্ছো যে?

- বাড়িতে একটু জরুরি কাজ আছে। শাশুড়িকে চোখের দেখা দেখে গেলাম। চেয়ারম্যান সাহেব....।

- কিছু বলবা জামাই?

- আমার শ্বশুরের একটা সিদ্ধান্ত ভালো লাগল না।

- কী সিদ্ধান্ত?

- সে নাকি আগামী বছর এলাকার সব জমি লিজ নিয়া মুলা চাষ করবে।

- কী বলছো এসব! আমার ইউনিয়নে এত মুলার দরকার নেই। এখানে অন্য অনেক ফসল ফলে। সে বললেই হবে?

- শ্বশুর আব্বা খুব জোরের সঙ্গে বলল। আরো বলল, চেয়ারম্যানকে আমি থোরাই কেয়ার করি। সে বাধা দিলে কোনো লাভ হবে না। আমি সব জমি লিজ নিয়ে মুলার চাষ করব। মোতালেব সমাদ্দার একটা চেয়ারম্যান, তেলাপোকা একটা পাখি।

- কী! আমাকে এমন অবজ্ঞা! তাকে আমি দেখে নেব। অন্যের জমি তো দূরের কথা, সে নিজের এক কানি জমিতেও মুলার চাষ করতে পারবে না। সে কেমনে মুলার চাষ করে তা আমি দেখে নেব। মোতালেব সমাদ্দারকে চেনে নাই এখনো। বজ্জাত লোক। ওর সব জমি কেটে পুকুর বানাতে বাধ্য করব। সেই পুকুরে মাছ চাষ করবে। রুই-কাতলার চাষ। পুকুরের ওপরে হাঁস-মুরগির চাষ করবে। কিন্তু মুলার চাষ করতে দেব না।

জামাই খপ করে চেয়ারম্যান মোতালেব সমাদ্দরের হাত ধরে ফেলল। বলল, চেয়ারম্যান সাহেব, আপনে পারবেন তাকে দিয়ে রুই-কাতলার চাষ করাতে? পরবেন হাঁস-মুরগির চাষ করাতে?

- পারব না আবার! কিছুদিন পর তুমি আইসা দেইখ। মুলার চাষ তো দূরের কথা, ও মুলার নাম পর্যন্ত ভুলে যাবে। আমাকে অবজ্ঞা করে কথা বলেছে। কত্ত বড় সাহস, এলাকার সব জমিতে মুলার চাষ করবে!

- চেয়ারম্যান সাহেব, আমার ফোন নম্বরটা রাখেন। আমার শ্বশুর হাঁস-মুরগি-মাছের চাষ শুরু করলেই আমাকে ফোন করবেন। আমি ছুটে আসব আপনার জন্য দই-মিষ্টি, আর নানা রকম উপহার নিয়ে। দাপুটে চেয়ারম্যানকে আমি খুব ভালোবাসি, সম্মান করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close