reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩১ মার্চ, ২০২৪

আবুল কালাম আজাদের হাসির গল্প

নতুন স্যারের প্রথম ক্লাস

জহীর বলল- এখন নতুন স্যার আসবে। আমাদের সবার উচিত চুপচাপ থাকা। প্রথম দিনই স্যার আমাদের সম্পর্কে খারাপ কোনো ধারণা পান তা ঠিক না।

মন্টু বলল- তুমি ঠিক বলেছো জহীর। এই সবাই চুপ কর। ওই যে নতুন স্যার আসছেন।

নতুন স্যার এলেন। সবাই দাঁড়িয়ে বলল- শুভ সকাল স্যার।

নতুন স্যার বললেন- শুভ সকাল। সবাই বস।

নতুন স্যার পুরো ক্লাসে সবার মুখে তাকালেন। লাল্টু বলল- স্যার, আপনি আমাদের কোন সাবজেক্ট পড়াবেন?

- আমি অঙ্ক, বিজ্ঞান, ইংরেজি সব বিষয়েই দক্ষ। তবে আমি তোমাদের পড়াব বাংলা।

- তার মানে আপনি অলরাউন্ডার। আমাদের কপাল খুব ভালো, আমরা অনেক দিন পর একজন অলরাউন্ডার শিক্ষক পেয়েছি।

এর মধ্যে একজন হাত তুলে আছে। নতুন স্যার বললেন- এই তোমার নাম কী? তুমি হাত তুলে আছো কেন? কিছু বলতে চাও?

- স্যার, আমার নাম সগীর। আমি কিছু বলতে চাই।

- বলো বলো...।

- স্যার, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আমরা সবাই দিনরাত এই ভাষায় বকবক বকবক করতে পারি। এই ভাষা স্কুলে পড়ার দরকার কী?

- বকবক বকবক করতে পারলেই বুঝি ভাষা জানা হলো? তাহলে তোমাদের দু-একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে দেখি কেমন পারো।

রিন্টু মকবুলকে গুঁতো মেরে বলল- সগীরটা দিল আমাদের ফাঁসিয়ে। এখন তো স্যার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছেন। ওকে এত বলি যে, তুই কোনো কথা বলিস না।

স্যার বললেন- এই সগীর, তুমি সন্ধি সম্পর্কে কী জানো বলো তো?

- স্যার, সন্ধি আজ স্কুলে আসেনি। ও মেয়ে হিসেবে মন্দ না। লেখাপড়ায় ভালো। চেহারা-সুরত ভালো। কিন্তু দেমাগ বেশি। কথা বলতে চায় না আমাদের সঙ্গে। একা একা থাকে। এই জিনিসটা ভালো না। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বাস করতে গেলে এ রকম একা একা...।

স্যারের চোখ গোল হয়ে গেল। বললেন- তুই এসব কী বলছিস?

- স্যার, আমি ঠিকই বলছি। অন্যদের জিজ্ঞেস করে দেখেন, ওরাও আমার সঙ্গে একমত হবে।

- থাক, আমার আর সন্ধি সম্পকে জানার ইচ্ছা নেই। এই তোমার নাম কী? মুখটাকে অমন মিষ্টি কুমড়ার মতো করে রেখেছো কেন?

- স্যার, আমার নাম মকবুল-মকবুল মৃর্ধা-বাবার নাম হারিস মৃর্ধা।

- তুমি বর্ণমালা সম্পর্কে কিছু বলো তো। একেবারে প্রথম দিকে পাঠ জিজ্ঞেস করলাম।

- স্যার, বর্ণ আর মালা দুই ভাইবোন। বর্ণ আমাদের এক ক্লাস জুনিয়র। ক্লাস সেভেনে পড়ে। আর মালা আমাদের চেয়ে এক ক্লাস সিনিয়র। ক্লাস নাইনে পড়ে। আমরা মালা আপু ডাকি। মালা আপু খুব ভালো। মাঝে মাঝে আমাদের চকলেট, আইসক্রিমও খাওয়ায়। মালা আপু খুব সুন্দর করে হাসতে পারে। কিন্তু বর্ণটা একটু ঘাড়ত্যাড়া টাইপের। আমাদের সিনিওরিটির মূল্য দেয় না। আমাদের সঙ্গে তুই-তোকারি করে কথা বলে। আমরা তক্কে তক্কে আছি। ওকে এক দিন একা পেলে...।

- তুই দাঁড়িয়ে থাক। তোর কাছে আর বর্ণমালা শুনতে চাই না। তোমরা ছেলেরা যে কেমন লেখাপড়া করো তা আমি বুঝে গেছি। এবার মেয়েদের কাছে যাই। কয়েক বছর ধরে বোর্ড পরীক্ষায় মেয়েরা খুব ভালো করছে। এই তোমার নাম কী?

- স্যার, আমার নাম লিলি।

- সুন্দর নাম। আমার বাসার বারান্দায় টবে রেইন লিলি আছে। বৃষ্টি হওয়ার দুদিন পরেই ফুল ফোটে। লিলি, তুমি প্রত্যয় সম্পর্কে কিছু বলো তো।

- স্যার প্রত্যয় মাত্র এক বছর আমাদের সঙ্গে পড়েছিল, খুব ভালো ছেলে ছিল, প্রত্যয় ছাত্রও ভালো ছিল, কথা বলত কম, কখনোই কারো সঙ্গে দুষ্টুমি করত না, ওর বাবার বদলি চাকরি, তাই রাজশাহী চলে গেছে, ওকে এখনো আমার খুব মনে পড়ে ও আমাদের সঙ্গে থাকলে খুব ভালো হতো।

- শোনো লিলি, তুমি প্রত্যয় সম্পর্কে যা বলেছো তাতে আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগে তোমাকে একটা কথা বলে যাই- এভাবে এক দমে সব কথা বলবে না। কথা বলার সময় দাঁড়ি, কমা, সেমিক্লোন এবং অন্যান্য বিরাম চিহ্ন মেনে চলবে।

তড়াগ করে ফরহাদ দাঁড়িয়ে গেল। বলল- স্যার, যে মাছ জাল থেকে ছুটে যায় সেটাকে বড়ই মনে হয়। প্রত্যয় নেই বলে ওকে খুব ভালো মনে হচ্ছে। আসলে ওর চেয়ে আমরা অনেক ভালো। লিলি সেটা বুঝতে পারে না।

- তোমাদের বোঝাবুঝি নিয়ে আমার আর কোনো চিন্তা নেই। বাংলা পড়াতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা আজ আমি অর্জন করলাম তাতে এটুকু বলব, প্রত্যয়ের মতো আমিও চলে যাব।

- কেন স্যার, আপনি যাবেন কেন? আমরা তো কেউ আজ কোনো রকম দুষ্টুমি করিনি। সবাই আপনার প্রশ্নের জবাব দিয়েছি সুন্দর করে।

- তোমাদের সঙ্গে থাকলে আমি হয় হার্ট অ্যাটাকে মারা যাব, নয়তো পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরব। তখন আমার পরিবার কে দেখবে? আমি আজ থেকেই বদলির চেষ্টা করব। তোমরা বই খুলে বর্ণমালা, সন্ধি, প্রত্যয় ইত্যাদি একটু দেখে নিও। তারপর বুঝবে কেন আমার হার্ট অ্যাটাক হবে। আজ আসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close