reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ এপ্রিল, ২০২৪

হানিফ ওয়াহিদের হাসির গল্প

সুন্দরী পাঠিকা

কী নাম বললেন আপনার, আপা? বিল গেটস? জি না ভাই, বিলকিস। মেয়েদের নাম আবার বিল গেটস হয় নাকি! কী যে বলেন আপনি!

হয় না? হলে মন্দ হতো না। আচ্ছা, ফোন দিয়েছেন কেন?

কথাটা আমি খুবই রাগের মাথায় বললাম। রাতের বারোটায় কোনো মেয়ে যদি বলে আমার নাম বিলকিস, রাগ হওয়ারই কথা। বিলকিস তো খেতটাইপ মেয়েদের নাম। জরি ফরি হলেও না হয় একটা কথা ছিল। তবে খুব যে রাগ করেছি তাও না, নামের শেষ কিস আছে, এটাও মন্দ কী?

মেয়েটা খুবই আহ্লাদি গলায় বলল, তার আগে বলেন, আপনি ফোন ধরেন না কেন? আমার ফোন নম্বর সেভ করে রাখেননি?

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, বইন রে, কিছু কিছু মোবাইল নম্বর সেভ করতে হয় মোবাইল না ধরার জন্য। এটাও তেমন একটা নম্বর।

মেয়েটা অবাক হয়ে বলল, কেন?

আগে বিয়ে-শাদি করেন তারপর বুঝবেন কেন? আপা গো, আপনারাই সুখী। কারণ আপনাদের বউ থাকে না। বউ মানেই প্যারা। সংসারে পুরুষ মানুষের কোনো ইচ্ছাই থাকে না, বউয়ের ইচ্ছাই হচ্ছে তার ইচ্ছা।

কথা শুনে মেয়েটা খিলখিল করে হাসতে লাগল, তারপর বলল, বউকে খুবই ভয় পান তাই না?

ভয় না পেয়ে উপায় আছে? বাসায় খেতে, ঘুমাতে হবে তো!

এই মেয়ে আমার লেখার ভক্ত। আমার প্রতিটি লেখা সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে। বইমেলায় গিয়ে এক দিন দেখাও করেছে। মোবাইল নম্বর সেভ করে দিয়েছে।

বউ সন্দেহ করে বলে মেয়েটার নাম আমি এখন সেভ করেছি জরিনা খালা নামে। এই নামে আমার এক দূরসম্পর্কের খালা আছে। বউ ঘুমিয়ে আছে, যদি বুঝতে পারে রাত বারোটায় সুন্দরী পাঠিকার সঙ্গে কথা বলছি, নির্ঘাত আমার লেখক জীবনের অপমৃত্যু হবে।

আচ্ছা লেখক সাহেব, আপনি এত হাসির গল্প লেখেন, নিজে এত নিরামিষ কেন? লেখকরা তো সুন্দরী পাঠিকার সঙ্গে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে থাকেন।

আমি ফিসফিস করে বললাম, আমি যে পাগল নই, তাই।

এবারও মেয়েটা হাসতে লাগল।

আমি বললাম, এবার ফোনটা রাখি?

আরে না না, ফোন রাখবেন না। আপনি ফোন রাখলে আমি কি করব জানেন? বারবার ফোন করতেই থাকব। আপনার জীবন ছেড়াবেড়া করে দেব। ফোনের সুইচ অফ করেও লাভ নেই। আমি রাত-দিন ফোন দিতেই থাকব। ভাবিকে বলেন আমি আপনার অন্ধ ভক্ত।

কিন্তু আমি তো অন্ধ কারো সঙ্গে সম্পর্ক রাখি না আপা। আমার ক্লাস আরো ওপরে।

সে খিলখিল করে হাসতে হাসতেই বলল, শুনেন, গতকাল আপনার ‘নিশি রাতে ঘুঘু ডাকে’ বইটা পড়লাম। অসাধারণ বই। খুবই মজার।

আমি করুণ সুরে বললাম, আপা গো, আমার বউ তার চেয়ে বেশি অসাধারণ। আপনি নিশি রাতে ঘুঘু ডাকে পড়ে মজা পেয়েছেন। সে আমাকে ঘুঘু বানিয়ে খাঁচায় বন্দি করে মজা নেবে। পুলিশের মেয়ে সুন্দরী বউ এনে পড়েছি বিপদে। অসুন্দর বউয়ের পাশে শুয়ে সুন্দরী পাঠিকার সঙ্গে কথা বলা যায়, সুন্দরী বউ হলেই সর্বনাশ! পুলিশের মেয়ে হলে তো আরো সর্বনাশ! সব সময় আসামি ভেবে নজরবন্দি করে রাখে।

মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল, ওরে সর্বনাশ! পুলিশের মেয়ে বিয়ে করেছেন কেন?

কোনো আসামির ঘরে সুন্দরী মেয়ে পাই নাই তো, তাই।

মেয়েটা এবার হি হি করে হাসতে লাগল। আমি হিসাব করে দেখেছি, পৃথিবীতে একমাত্র বউ ছাড়া সব মেয়ের হাসি সুন্দর। এই মেয়ে তার ব্যতিক্রম নয়।

আমি বললাম, আপা, আপনার হাসি বেশ সুন্দর।

ও মা! তাই? কেউ তো কখনো বলে নাই ভাইয়া। থ্যাংক ইউ ভাইয়া! আই এম সো হ্যাপি।

মেয়ের কণ্ঠ শুনে আমি আঁতকে উঠলাম।

তেল এমন এক আজব পদার্থ, গাড়িতে দিলে চলে। আগুনে দিলে জ্বলে। আবার মানুষকে দিলে গলে।

মেয়েটা কি গলতে শুরু করল? অসম্ভব কিছু না। ফান করতে গিয়ে তুফানের পাল্লায় পড়ছি না তো!

শোনেন লেখক সাহেব, আপনাকে লাইক করি বলেই ভাববেন না পৃথিবীতে আপনি একমাত্র যোগ্য পুরুষ। এটাও হতে পারে, আমার রুচি খারাপ।

আপা গো, আমারও রুচি খারাপ।

কীভাবে বুঝলেন আপনার রুচি খারাপ?

আমার বউ সারাক্ষণই তা বলে তো!

এবারও মেয়েটা খিলখিল করে হাসতে লাগল।

আমি দেখলাম বউয়ের হাত-পা নড়ছে। আমি ফিসফিস করে বললাম, এই, আমার বউ উঠে গেছে। এবার রাখি কেমন? বলেই মোবাইল অফ করে দিলাম।

বউ ঘুমঘুম চোখে বলল, এই কী রাখার কথা বলছো?

আমি ভীত গলায় বললাম, আর বইল না, এত রাতে জরিনা খালা ফোন করেছে। কী জানি বলতে চায়। বয়স হয়েছে, বুদ্ধি হয়নি। এত রাতে কেউ ফোন করে? তোমার ঘুম ভেঙে যাবে বলে সকালে কল দিতে বললাম।

আহা! জরুরি কিছু তো হতে পারে, এখন কথা বলতে অসুবিধা কী?

না থাক, তোমার ঘুমের ক্ষতি হবে না, জান?

কী ক্ষতি হবে?

আমি বিরক্তির ভাব নিয়ে বললাম, খালা একবার কথা বলা শুরু করলে আর ফোন ছাড়তে চায় না। ওয়েব সিরিজ শুরু করে দেয়। কোনো মানে হয়?

সমস্যা হলে বাইরে গিয়ে কথা বলো। মানুষকে এত ইগনোর করো কেন? ছোট-বড় সব মানুষকে সম্মান করতে শিখো, বুঝলা? কাউকে অবহেলা করতে নেই। মানুষের কথা সব সময় মন দিয়ে শুনতে হয়। মানুষ কার সঙ্গে কথা বলতে চায় জানো? যাকে সে পছন্দ করে। যাও বলছি, বাইরে গিয়ে শুনে আসো।

আদেশ করেই বউ পাশ ফিরে শুয়ে নাক ডাকতে লাগল।

আমি আস্তে করে দরজা ভেজিয়ে বাইরে চলে এলাম। কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। বউয়ের আদেশ বলে কথা!

আমি সেই সুন্দরী পাঠিকাকে আবার ফোন দিলাম। তার কথা মন দিয়ে শুনতেই হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close