মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

  ১৯ মার্চ, ২০২৪

ফাইতং-ঘুমধুম

অনুমতি নেই কোনো ভাটার ভাঙার পরও চলছে উৎপাদন

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটায় প্রতিদিনই পুড়ছে হাজারো মণ বনের গাছ। এতে ধ্বংস হচ্ছে বনায়ন। কাঠ পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। আর প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে অবৈধ ভাটাগুলো এমন অভিযোগ করে ক্ষতিকর ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

লামা উপজেলার ফাইতং একটি ইউনিয়নে অবৈধভাবে ২৮টি ইটভাটায় প্রকাশ্যে চলছে ড্রাম চিমনি ও পাকা চিমনির ইটভাটার কার্যক্রম। নীতিমালা লঙ্ঘন করে বনের মধ্যে, লোকালয় এবং কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে পাহাড়ে এসব ইটভাটা। অবৈধ ইটভাটার ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পরিবেশ। উজাড় হচ্ছে আরণ্যক প্রকৃতি।

অধিকাংশ ইটভাটা গড়ে উঠেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে, লোকালয়ে, বনাঞ্চল ঘেঁষে ও উর্বর কৃষি জমিতে। অধিকাংশ পাহাড় বিধ্বংসী ইটভাটাতে পরিণত। আবার অনেকেই আর্থিকভাবে সাময়িক লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাদের ফসলী জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

ইটভাটার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি ইটভাটায় ইট পোড়াতে দৈনিক প্রায় ৪০০ মণ কাঠ প্রয়োজন। সে হিসেবে ২৮টি ইভাটায় দৈনিক সাড়ে ১১ হাজার মণ কাঠ বনবিভাগকে ম্যানেজ করে ইটভাটায় জ্বলছে। এভাবে গেল বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত জ্বলবে। ইট প্রস্তুত মৌসুম শুরুর আগে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সকল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুরো মৌসুম চলছে সকল অবৈধ ইটভাটা। বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইটভাটা আইনের তোয়াক্কা না করে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও প্রশাসন, বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর শক্ত কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না।

সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় তিনটি ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে দাবী করে পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু অভিযানের দুই দিন পর ওই ইটভাটাগুলো পুনরায় কাজ শুরু করে এখনো দিব্যি কার্যক্রম চালাচ্ছে।

অপরদিকে ইটভাটায় পাহাড়ের মাটি ব্যবহারের কথা অস্বীকার ও সরকারী নিয়মানুযায়ী কয়লার চুল্লি দিয়ে ইটভাটা তৈরিতে অধিক খরচ হওয়ায় নিয়ম মানা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ফাইতং ইটভাটা মালিকেরা।

জানতে চাইলে উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, ‘যত্রতত্র ভাবে ইটভাটা গড়ে উঠায় তার ইউনিয়নে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। ইটভাটার মালিকরা ইউনিয়ন পরিষদের কোনো আইনকানুন মানে না। গায়ের জোরে সব কাজ করে।’ একটি ইউনিয়ন ২৮টি ইটভাটায় বড় বড় সব পাহাড় সাবাড় করে ফেলছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সবুজ পাহাড় বেষ্টিতে পরিবেশ ও বায়ুদূষণ করে চলছে অবৈধ ভাটাগুলো। প্রকাশ্যে পাহাড় ও ফসলি জমি কাটা এবং জ্বালানী হিসেবে বনের কাঠ পুড়ানো হচ্ছে।

অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নে খুব কাছাকাছি এলাকায় অন্তত ৫টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতা খালেদ সরওয়ার হারেজের মালিকানাধীন কেআরই, সাজু বড়ুয়ার ডিএসবি, ফরিদ আহম্মদের বিবিএম, জয়নাল আবেদীনের জেএসবি ও আবুল কালামের মালিকানাধীন কেআরএস ইটভাটার কেনোটির লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই।

প্রশাসন মাঝে মধ্যে এসব ইটভাটাগুলোয় অভিযান চালালেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ চোখে দেখেনি স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা খারেদ সরওয়ার হারেজ প্রশাসন ম্যানেজ করেই এই ইটভাটাগুলো চালাচ্ছেন।

এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বান্দরবানের একটি ইটভাটারও বৈধ অনুমতি নেই। উচ্চ আদালতের ১০টি রায় আছে। প্রতিটি রায় ভিন্ন ভিন্ন।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এক দশক ধরে অবৈধভাবে বান্দরবানের ইটভাটাগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। চলতি বছরও ইটভাটাগুলো সরকারি অনুমতি ও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close