মিজানুর রহমান পাটোয়ারী, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

  ০৭ জুন, ২০২৩

কিশোরগঞ্জের ভৈরব

প্রভাবশালীদের দখলে খাল-বিল পুনর্খননে বাধার মুখে ঠিকাদার

* বিপাকে কয়েক হাজার কৃষক ও পয়ঃনিষ্কাশনে সুবিধাভোগী পরিবার * ব্যক্তিগত জমির ওপর দিয়ে খাল কাটা হচ্ছে দাবি করে স্থানীয়দের বাধা * ভৈরব পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মধ্যে সমন্বয়ের অভাব

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে খাল-বিলসহ ছোট নদী দখল করে বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। এতে ভৈরব পৌরশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

এদিকে ভৈরব পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সতীর বিলসহ বিভিন্ন খাল খননকাজ। মরে যাওয়া খাল-বিল পুনর্খননেও বাধার দেওয়া হচ্ছে। এতে বিপাকে রয়েছে সেচ সুবিধাভোগী হাজারো কৃষক ও পয়ঃনিষ্কাশনে সুবিধাভোগী পরিবার। নদী, খাল-বিল ভরাট হওয়ায় পেশাগত সংকটে পড়েছে মৎস্যজীবী কয়েক শতাধিক পরিবার।

ভৈরব উপজেলা ও পৌরশহরে দেখা গেছে, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপত্তি হওয়া পলতাকান্দা খাল, স্টেডিয়ামপাড়া মান্না বিল, মনা মরা খাল, পঞ্চবটি বাল্লা বিলের খাল, সাতমুখী বিল, সতীর বিল খাল, কালিপুর খাল, কামাল সরকারবাড়ি খাল, উপজেলার আগানগর বাইদার খাল, শীতলপাটি ও কোদালকাটি নদীসহ ভৈরব উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর শহরের ওপর দিয়ে গেছে। এসব ছোট-বড় সরকারি খাল ও বিল দখল করছেন প্রভাবশালীরা।

তবে সরকারি খাসজমি হওয়ায় প্রভাবশালীদের ভয়ে কথা বলছেন না স্থানীয়রা। ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করে দখলদাররা নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। নদী খাল-বিলের নাব্যতা রক্ষা, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি এবং পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও পয়োনিষ্কাশনের স্বার্থে প্রায় ৫০ কিলোমিটার খাল-বিল পুনঃখনন করা প্রয়োজন। নয়তো শতাধিক হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হবে বলে দাবি করছেন কৃষকরা।

পৌর শহরে বসবাসকারীরা জানান, অল্প বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে হাঁটুপানিতে পরিণত হয়। পয়োনিষ্কাশনের পানি সরানোর ড্রেনগুলো পানি প্রবাহিত না হওয়ায় সারা বছরই এর পানিগুলো উপচে রাস্তার ওপর ওঠে পড়ে ময়লা আর দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে ও মশা-মাছি বৃদ্ধি পায়।

চন্ডিবের এলাকার কৃষক স্বাধীন মিয়া বলেন, ভৈরব সতীর বিল খাল পুনঃখননে কৃষক ও জেলেদের প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বর্ষা মৌসুমে খাল দিয়ে পানি নদীতে নেমে যাবে, নষ্ট হবে না ফসলি জমি। এ ছাড়া সারা বছর খালে পানি থাকলে খালের পানি ব্যবহার করে বোরো ধানের চারা রোপণ করাসহ এই পানি ব্যবহার করে রবি মৌসুমে আলো, গম, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদন করা যাবে। এ ছাড়া মৎস্য চাষ ও হাঁস পালনসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করা যাবে।

কৃষক আবদুল মান্নান, শাহীন মিয়া, বাদল মিয়া, হেলাল মিয়া বলেন, খাল খননের ফলে ভৈরব উপজেলা কৃষিকাজের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এরই মধ্যে পুনঃখনন করা বিভিন্ন অংশের কৃষকরা সুফল পেতে শুরু করেছে। কিন্তু খালের বাকি অংশ খনন না হলে কৃষকরা পানির অভাবে চাষাবাদে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হবে। এ ছাড়া বন্যায় বাড়িঘরও তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভৈরব পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহম্মদ আলী সোহাগ জানান, ভৈরবে বিভিন্ন খাল খনন করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু খাল একশ্রেণির প্রভাবশালী মহল দখল করে রেখেছে।

ওই এলাকার খাল খননকারী ঠিকাদারের প্রতিনিধি মমিনুল হক বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), ভৈরব পৌরসভা মেয়র ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাসহ স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে সরকারি খাসজমিতে খাল খনন করছি। তবে কিছু মানুষ তাদের ব্যক্তি সম্পত্তি দাবি করে আমাদের খননকাজে বাধা দিচ্ছে।

ভৈরব পৌর মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু বলেন, খাল-বিল দখল হওয়ায় শহরে সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক জলাবদ্ধতা। পৌরবাসীর জন্য সরকারি খাল দখলমুক্ত করে খাল খনন করা খুবই জরুরি। কিন্তু খাল খননের নামে ভৈরব পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের মনগড়াভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর অবৈধভাবে পাউবো খাল খনন করে যাচ্ছে। মানুষ নিরুপায় হয়ে খাল খননের বিরুদ্ধে গত ১ মে মানববন্ধনও করেছেন।

খননকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আতিকুল গনি মোবাইল ফোনে জানান, জনস্বার্থেই খননকাজটি করা হচ্ছে। সরকারি জায়গায় খাসজমি নির্ধারণ করেই খাল খনন করা হচ্ছে। ভৈরবে খাল খননের ৬০ ভাগ কাজ প্রায় শেষ। পৌর মেয়র কেন বাধা দিচ্ছেন তা আমি জানি না। প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ইউএনও মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, খাল খননের ফলে ভৈরবে কৃষির ব্যাপক প্রসার ঘটবে। আমি উপস্থিত থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের খননকাজে সরকারি খাসজমি বুঝিয়ে দিয়েছি। কারো ব্যক্তিগত জায়গায় খনন করার কথা না।

জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, খাল-বিল ভরাটের কোনো নিয়ম নেই। এ নিয়ে আমাদের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close