রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ০৪ জুন, ২০২৩

সংরক্ষিত বনে মধু সংগ্রহের পাশ

কর্মকর্তাকে ভাগ দিলেই মিলে অনুমতি

* ফরেষ্ট বিট কর্মকর্তা শোয়েব খানকে তিনের একাংশ মধু দিতে হয় * মধু বাণিজ্যের বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনে অবৈধভাবে মধু সংগ্রহের উৎসব চলছে। তা আবার বন কর্মকর্তাদের যোগ সাজোশে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলও তোয়াক্কা করছে না কেউ।

মৌয়াল ইলিয়াস জানান, মৌডুবী ফরেষ্ট বিট কর্মকর্তা শোয়েব খানকে তিনের একাংশ মধু দিতে হয়। আর এর বিনিময়ই মৌখিকভাবে অনুমতি দেন তিনি। অন্যথায় রয়েছে মামলার হুমকী।

এদিকে মৌডুবী ইউনিয়নের বিট কর্মকর্তা শোয়েব খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কাউকে বাগানে মধু সংগ্রহের জন্য অনুমতি দেইনি। তবে আমি জানতে পারছি যে দুই দল ইলিয়াছের দল ও ১১ নম্বর এলাকার আরো একটি দল বাগানে মধু সংগ্রহ করতে গিয়েছে।’

তবে নিয়মিত গাছ কাটা ও মধু সংগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে কেন আইনী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা তা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

বিট কর্মকর্তার মধু বাণিজ্যের বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছে অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়। লেনদেন, বাণিজ্য এবং মৌখিক অনুমতি থাকলেও নেই কোনো দালিলিক প্রমাণ। একাদিক স্থানীয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংরক্ষিত বনের মধু সংগ্রহে বীট কর্মকর্তা নিজেই জড়িত।

অন্যদিকে সাধারণ জনগণের প্রতি রয়েছে মামলার ভয়। লীজ নেয়া লোকজনকে মধু কিংবা গাছ কাটতে বাঁধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো হয়রানী মূলক মামলা দেয়া হয় বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত বীট কর্মকর্তার অনুসারী ইলিয়াসের মামলার ভয়ে কেউ বাসা বাড়ির মধুও কাটতে পারেনা। তাই আমাদের এলাকার সকল জনগনের দাবি, ‘তাদেরকে যেন এই বিট কর্মকর্তা সংরক্ষিত বনের মধুর লিজ না দেয়।’ একইসাথে অবৈধভাবে মধু সংগ্রহ এবং এলাকার মানুষকে মামলার ভয় দেখায় তার শাস্তি চান তারা।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক জেলে বলেন, আমরা আপনাদের কাছে যদি কিছু বলি তাহলে শোয়েব খান আমাদেরকে খাল লিজ, বাগানের মধু লিজ , আমরা যে বাগানের গাছ কাডি জানতে পারলে আর কোন দিন দিবেনা। তাই আপনাদের কাছে কিছুই বলতে পারবো না।

উল্লেখ্য গত সোমবার মৌডুবী ফরেষ্ট ক্যাম্পের আওতাধীন ১১ নম্বর গ্রামের আব্দুর রব ও সবুজ আকন বাধঘাট এলাকায় (আশাবাড়িয়া) সংরক্ষিত বনে মধু সংগ্রহে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয়া একই ইউনিয়নের ভূইয়াকান্দা এলাকার হাসেম পাটোয়ারীর ছেলে ইলিয়াছ পাটোয়ারীর লোকজন বনের ভিতরে পিছন থেকে সবুজ আকনের উপর হামলা চালায়।

সবুজ আকন জানান, আমি বনের ভিতর দিয়ে একা হাটছিলাম এমন সময় পিছন থেকে এসে একজন আমাকে লাঠি দিয়ে মার শুরু করে। পরে ইলিয়াসের সাথে থাকা দুলাল আমাকে দা দিয়ে কোপ দিতে চাইলে আমি হাত দিয়ে বাধা দেয়ায় কোপ আমার হাতে পরে হাত কেটে যায়। তার পরে আমাকে ইলিয়াসের দল উঠিয়ে ফরেষ্ট অফিসে নিয়ে আসে। আমি এর বিচার চাই।

উপজেলা রেঞ্জ অফিসার অমিতাভ বসু বলেন, অবৈধভাবে মধু সংগ্রহ করা আইনত দন্ডনীয়। বনবিভাগ থেকে এ ধরনের লিজ দেয়া বন্ধ রয়েছে। বনবিভাগের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি বনে মধু সংগ্রহ ও গাছ কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা অবৈধভাবে লিজ দিয়ে থাকলে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close