মাহমুদুল হাসান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ঠাঁই মেলেনি সরকারি ঘরে

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে ঠাঁই মেলেনি বৃদ্ধ আজাহারের। অনাহারে-অর্ধহারে কাটে দিন। দীর্ঘদিন ধরে অন্যের এক টুকরো জায়গায় ভাঙা ছোট ঝুপড়ি ঘরে থাকেন আজাহার। ৭৫ বয়সের বৃদ্ধ আজাহারের মেলেনি সুখের হাতছানি, অভাবের তাড়নায় ও বার্ধক্যের কারণে ঠিকমতো চলতে পারেন না। ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে ঝুপড়ি ঘরের এক কোণে বসে নীরবে বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়া উপায় নেই। সারা ঘরেই পড়ে বৃষ্টির পানি। শীতের সময় ঠাণ্ডা বাতাস বইতে থাকে সারা ঘরে। এক সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে জীবন চলে অন্যের বাড়ি চেয়ে চেয়ে। জীবনযুদ্ধে বড্ড ক্লান্ত আজাহার এখন মৃত্যুতেই যেন সুখের ছোঁয়া খুঁজে চলেছেন। পটুয়াখালীর বিছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের মাঝের দেওর গ্রামের আজাহার এ কষ্ট যেন দেখার কেউ নেই।

সরেজমিন দেখা যায়, বাঁশের খুঁটি, তালপাতার বেড়া, আর ছেড়া কাগজ দিয়ে কোনো রকমের ছাপড়া দিয়ে ছোট একটি ঝুপড়ি ঘর করে, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকেন অসহায় বৃদ্ধ আজাহার। সেই ছোট্ট ঘরটিও অন্য একজনের ভিটায়। আজাহারের স্ত্রী শাহানাজ ও একমাত্র ছেলে সোহেলকে নিয়ে থাকেন সেই ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের ঘর উপহার দিয়েছেন সরকার। ভেবেছিলেন তিনিও পাবেন, কিন্তু আজও পর্যন্ত সেই ভাগ্য হয়নি। ঝুপড়ি ঘরে থাকতে হচ্ছে তাকে। একটি ঘরের জন্য বারবার আবেদন করলেও মেলেনি একটি সরকারি ঘর।

স্থানীয়রা জানান, যে টাকা দিছে সে ঘর পেয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তিও উপহারের ঘর পেয়েছেন। অথচ আজাহারের মতো প্রকৃত অসহায় ভূমিহীন সরকারি আশ্রয়ণের সুবিধা থেকে রয়েছেন বঞ্চিত। হয়তো আজাহার টাকা দিতে পারে নাই, তাই ঘর পায় নাই। তারা আরও জানান, সুষ্ঠু তদন্ত ও যাচাই-বাচাই করলেই বেরিয়ে আসবে অনিয়ম।

বৃদ্ধ আজাহার বলেন, বাবা আমি গরিব মানুষ, আমার জায়গা নাই জমি নাই। আমার এক ছেলে এক মেয়ে, মাইয়াগগা (মেয়ে) বিয়ে দিছি, আর পোলাউগা (ছেলে) ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়ছে আর পড়াতে পারি নাই। এখন মানসে (মানুষের সঙ্গে কাজ করে) সাথে বদলা দেয়। ৪০০-২০০ টাকা পায় এইয়া দিয়ে কোনো রকম খাই। ঘর দিয়া পড়ে পানি, কাগজের বেড়া, এমন কেউ নেই যে সাহায্য করবে। বয়স্ক ভাতাটা পর্যন্ত পাই না, কত কষ্ট করে চলি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে যে ঘর দেওয়া হয়েছে তখন আপনি চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে ঘরের জন্য আবেদনে করেননি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বহুদ (অনেক) আবেদন করছি। বর্তমান মেম্বারে বলে আসে নাই ঘর, আর আগের মেম্বারেরা ৫-৬ হাজার টাকা চাইছে। এখন আমাকে একটা ঘর দিলে আমি শেষ বয়সে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাকি জীবন একটু শান্তিতে বাস করতে পারতাম। আমার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হতো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সালেক মূহিদ জানান, তার আশপাশে খাস জমি আছে কিনা জানতে হবে। যদি খাস জমি থাকে তাহলে দেখব তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় কিনা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close