শহিদুল ইসলাম সোহাগ, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ভাতাভোগীর আড়াই কোটি টাকা গায়েব

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রায় সাড়ে আট হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর প্রায় আড়াই কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হবার পর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সমাধানের আশ্বাস দিলেও শুধুমাত্র অভিযোগকারী ভাতাভোগী দুই একজনকে সাড়ে চার হাজার টাকার স্থলে এক হাজার করে টাকা দিয়ে সিংহভাগ ভাতাভোগীদের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট কমিটি কর্তৃক গৃহীত অভিযোগ তদন্তকালে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ২৮ জানুয়ারি ভুক্তভোগীরা ঘটনার সুরাহা চেয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব ও গণভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অবস্থানকালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা নিজ উপজেলায় ফিরে আসেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে সরেজমিন তদন্তে আসেন সামজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস, সমাজসেবা কর্মকর্তা রায়হান কবীর ও বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক সমির মল্লিক।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নতুন করে প্রায় সাড়ে আট হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধি ও দলিত হরিজন ভাতা প্রাপ্ত হিসাবে নিবন্ধিত হন। এজন্য ২০২১ সালের জুন মাসে তাদের মোবাইল ব্যাংকে সরাসরি টাকা প্রেরণের জন্য এমআইএস সম্পন্ন হয়। কিন্তু নিবন্ধিত হওয়ার পর থেকে কেউ তিন মাস কেউ ছয় মাস কেউ আবার এক বছরের ভাতা পায়নি তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিলে জানানো হয় তাদের টাকা অন্য নম্বরে টাকা চলে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সে সময় নতুন ভাতাভোগীদের এমআইএস সম্পন্ন করেছিলেন সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান, তার কার্যালয়ের সুপারভাইজার তরিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান এবং সংসদ সদস্যের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজ।

ভাতাভোগীরা জানিয়েছেন, সমাজসেবা অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংসদ সদস্যের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের যোগসাজসে আমাদের মোবাইল নম্বর আপলোড না করে তাদের নিয়ন্ত্রিত মোবাইল নম্বর আপলোড করে সমুদয় টাকা তুলে নিয়েছেন।

হোগলবাড়িয়া ইউপির চরদিয়াড় গ্রামের ভাতাভোগী হোসেন মণ্ডল, ইন্তাদুল, মাজু ও রাহেদ ঘোষ, প্রতিবন্ধী শাকিল ও মাহাতাব বলেন, এমআইএস সিস্টেম হওয়ার পর তারাসহ ইউনিয়নের সাত শতাধিক ভাতাভোগী ঠিকভাবে টাকা পাননি। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপি সাহেবের প্রতিনিধি হিসাবে ভাতাভোগীদের সহায়তা করি। এর বাইরে অন্য কিছু তিনি জানেন না। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছি।

এ ব্যাপারে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকার উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস তদন্তের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close