হাসানুজ্জামান তুহিন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

  ১৪ জুন, ২০১৮

শাহজাদপুরে ঈদেও তাঁতশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

ঈদ সামনে রেখে উৎপাদিত কাপড় নিয়ে বিপাকে তাঁতিরা

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট শাহজাদপুরে আশানুরূপ কেনাবেচা না থাকায় উৎপাদিত তাঁতের কাপড় নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার তাঁতী ও ব্যবসায়ীরা। দফায় দফায় রং ও সুতার দাম বৃদ্ধি, বিদেশি জামা ও থ্রি-পিসের দাপটে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তারা। ঈদ সামনে রেখে ঋণ নিয়ে নতুন উদ্যোগে রকমারি ডিজাইনে কাপড় উৎপাদন করলেও মিলছে ক্রেতা। ফলে তাঁতশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাঁতীদের মধ্যে। ইতোমধ্যে উপর্যুপরি লোকসানের মুখে পড়ে শাহজাদপুর ও বেলকুচি অঞ্চলের লক্ষাধিক হস্তচালিত তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি তাঁত মালিকদের।

তাঁত মালিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন বাজার মন্দা থাকায় পুঁজি হারিয়েছেন তাঁত মালিকরা। কিন্তু তাঁত বোর্ডের নিষ্ক্রিয়তা ও সরকারের সঠিক নজরদারি না থাকায় বৃহত্তর এ তাঁতশিল্প ক্রমশই ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে ভালো কেনাবেচার আশায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁতীরা বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান ও মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ করে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় তা অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে।

সপ্তাহের শনি, রবি, মঙ্গল ও বুধ এই চারদিন তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহজাদপুরে কাপড়ের হাট বসে। দেশের প্রায় সব জেলা থেকেই পাইকাররা তাঁতের কাপড় কেনার জন্য এ হাটে আসেন। কিন্তু এ বছরে তার ব্যতিক্রম। পাইকার না থাকায় তাঁতীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো হতাশ। একদিকে ভারতীয় শাড়ি ও অন্যদিকে থ্রি-পিসের কদর বেড়ে যাওয়ায় তাঁত কাপড় কেনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ক্রেতারা।

উপজেলার মাদলা গ্রামের তাঁত মালিক মনিরুল ইসলাম জানান, তার ফ্যাক্টরিতে ৫০টি হস্তচালিত তাঁত ছিল। উপর্যুপরি লোকসান গুনতে গুনতে তাঁত বন্ধ করে দিয়ে তিনি থ্রি-পিসের ব্যবসায় নেমেছেন। তার মতে, বর্তমানে মহিলাদের একটি বৃহত্ত অংশ তাঁতের শাড়ির পরিবর্তে থ্রি-পিস ব্যবহার করছে।

কান্দাপাড়া গ্রামের তাঁতী ছরোয়ার হোসেন জানান, তাঁতের কাপড়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় তার ফ্যাক্টরির ২৮টি তাঁতের মধ্যে বর্তমানে ১০টি তাঁত চালু রয়েছে। গাড়াদহ গ্রামের তাঁতী আক্তার হোসেন জানান, তুলনামূলক বেশি দামের তাঁতের কাপড়ের ক্রেতা থাকলেও কম ও মাঝারি দামের তাঁত কাপড়ের ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাদের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে তাঁত-খুঁটি বিক্রি করে মহাজনের ঋণ পরিশোধ করতে হবে না।

শাহজাদপুর তাঁতের কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলমাছ আনসারী জানান, শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জে পাঁচ লাখ তাঁতের মধ্যে বর্তমানে হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুম মিলে দুই লাখ তাঁত চালু আছে। পাঁচ বছর আগেও শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা লেনদেন হলেও বর্তমানে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই ব্যবসায়ী নেতা আরো জানান, তাঁতশিল্পকে রক্ষা করতে হলে তাঁত বোর্ডকে সচল করতে হবে। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যারা অফিসে এসে সরকারি টাকা লোপাট ও ঘুমপাড়া ছাড়া তাদের আর অন্য কোনো দায়িত্ববোধ নেই। অথচ এ ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁতীদের সহজ শর্তে সল্প সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, রং-সুতা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি করায় তাঁতশিল্পের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। তাছাড়া তাঁতের সরঞ্জামের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় কাপড়ের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও সে তুলনায় হাটে-বাজারে তাঁত কাপড়ের চাহিদা না থাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁতীরা চরম বির্পযয়ের মুখে পড়েছে।

এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খান জানান, তাঁতশিল্পকে রক্ষা করতে সরকার ইতোমধ্যেই বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি আরো বলেন, তাঁত বোর্ডকে সচল করে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরসহ অন্যান্য উপজেলার দুর্দশাগ্রস্থ তাঁতীদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাঁতশিল্পকে রক্ষা করতে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যেই বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist