গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

১০ মাস পরও শেষ হয়নি ৮৫ কিমি রেলপথের কাজ

সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেললাইন প্রকল্পটি এখনো কাজ সম্পূর্ণরূপে শুরুই হয়নি। ২০১৮ সালে অনুমোদন হওয়া এই প্রকল্পটি চলতি বছর কেবল ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে। অথচ গতবছরের ৩০ জুন ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সিরাজগঞ্জ-বগুড়া পর্যন্ত রেলপথের নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকল্পটির মূল কাজ শুরু হয়েছে ধীরগতিতে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে।

সিরাজগঞ্জের সঙ্গে বগুড়ার সরাসরি রেল যোগাযোগ নেই। ফলে সিরাজগঞ্জ থেকে ঈশ্বরদী এবং নাটোর হয়ে বগুড়া তথা উত্তরের রংপুর বিভাগে যোগাযোগ চলে আসছে দীর্ঘদিন। ২০২৫ সাল নাগাদ ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হবে। রেলপথটি চালু হলে সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া চলাচলের ক্ষেত্রে সময় বাঁচবে তিন চার ঘণ্টা বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।

সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৯৬০ একর ভূমির প্রয়োজন পড়ছে রেলপথটি নির্মাণে। এর মধ্যে বগুড়া অংশে ৪৭৯ দশমিক ১৫ এবং সিরাজগঞ্জ অংশে ৪২০ দশমিক ৬৮ একর ভূমি রয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই রেলপথের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে ভূমি মালিকদের কাছে চার ধারার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অন্য কোনো জটিলতা না হলে আগামী বছরের শুরুর দিকে রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।

জানা যায়, রেল প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেয়। সে সময় এই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মোট টাকার মধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দেবে ভারত। এই প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও পরামর্শক নিয়োগ এবং নকশা চূড়ান্ত করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে মূল কাজ পিছিয়ে যায়। তবে ঋণদাতা কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রেলপথ নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ দেয়। এর পরই ২০২৩ সালের ৩০ জুন রেলপথের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করে পরামর্শকরা।

জানা যায়, ৮৫ কিলোমিটরের এই রেলপথে থাকছে দুটি ডুয়েল গেজ পথ। এর মধ্যে ৭৩ কিলোমিটারের একটি পথ রয়েছে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন থেকে বগুড়ার ছোট বেলাইল পর্যন্ত। এ ছাড়া বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রানীহাট পর্যন্ত রয়েছে ১২ কিলোমটিার পথ নির্মাণ করা হবে। এ কারণে রানীহাটে একটি জংশন এবং অপরটি নির্মাণ করা হবে সিরাজগঞ্জে। একই সঙ্গে আরো ছয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে শেরপুর, আড়িয়া বাজার, ছোনকা, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ ও কৃষ্ণদিয়া এলাকায়।

সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে রেলপথ নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে নির্মাণকাজ শুরু করতে অন্যান্য প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সিনিয়র সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রকৌশলী (লোকো) কাজী সুমন বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হলে পথ কমবে ১২০ কিলোমিটার। এতে করে বছরে দুটি ট্রেনের বছরে জ্বালানি খরচ কমবে অন্তত ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি।

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, এই রেলপথটি উত্তরাঞ্চল তথা রংপুর অঞ্চলের অন্তত আট জেলার মানুষের জীবনযাত্রায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।

সিরাজগঞ্জ পৌর সভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা বলেন, প্রস্তাবিত রেললাইন চালু হলে সিরাজগঞ্জ নির্মাণাধীন ইকোনমিকজোন, শিল্প পার্কসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।

সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী সরকারের নেওয়া এই পদক্ষেপকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিরাজগঞ্জ তথা উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, কর্মসংস্থানসহ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় ভূমিকা রাখবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close