কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে
প্রতিবেশীকে ‘আটকে’ বাড়ি ভেঙে রাস্তা নির্মাণ!
গাজীপুরের কালীগঞ্জে সেন্টু আন্তনী ক্রুশের পরিবারকে আটকে রেখে তার বাড়ি ভেঙে ও ফলজ গাছ কেটে জোরপূর্বক ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতিবেশী স্ট্যানলির বিরুদ্ধে। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও থানার এসআই উপস্থিত থাকলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি নাগরী ইউনিয়নের তিরিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর দিন কালীগঞ্জ থানা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগী সেন্টুর।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, সেন্টু আন্তনী ক্রুশের পাঁকা বাড়িটির মধ্যদিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। যেখান থেকে অল্প দূরে সেন্টুর পুরোনো বাড়ি। আর নির্মাণ করা সেই রাস্তার পাশে গাছ কাটার চিহ্ন দেখা গেছে।
ভুক্তভোগি সেন্টু আন্তনীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, আমার পৈত্রিক সম্পত্তিতে গত মাসের ২২ তারিখ দুপুরে ব্যক্তি সুবিধার্থে ৬ ফুট প্রস্থ’ ও ১২শ ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তা নির্মাণের স্ট্যানলি, তিরিয়া গ্রামের নিপু কস্তাসহ অজ্ঞাত আরো ১৫/১৬ জন। আমি তাতে বাধা দিলে তারা আমার পরিবারের ওপর হামলা করে আমাদের পুরোনো বাড়িতে আটকে রেখে রাস্তা নির্মাণ করে। রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রথমে সেন্টুর একটি পাকা ঘর ভাঙে। পরে ওই রাস্তার সীমানায় পড়া প্রায় ৪০/৫০টি ফলজ গাছ কেটে ফেল। ঘটনাস্থলে থানার এসআই আবুল হাশেম ও চেয়ারম্যান কাদির মিয়া এসেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সেন্টু আন্তনী অভিযোগ করেন, স্ট্যানলি দীর্ঘদিন যাবৎ সেন্টু ক্রুশের বাড়ি-ঘর দখলের চেষ্ঠা করে আসছিল। এ ব্যাপারে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সেন্টু গাজীপুরে ৫ম সহকারী জজ আদালতে (নং ১০/১৩) এবং সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (নং ১০৩/১৩) মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তার পরিবারকে ঘরে তালাবদ্ধ করে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করেছে।
ইউপি সদস্য অরুন রোজারিও জানান, রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান তাকে কিছুই জানায়নি। তবে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে রাস্তা নির্মাণ হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মিয়া জানান, সেন্টু যাদের কাছে জমি বিক্রি করেছে তাদেরকে এখন রাস্তা দিচ্ছে না। কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করতে পারে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাস্তাটি সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ মোড়ল কর্তৃক প্রস্তাবিত ছিল। কিন্তু তিনি এসে বাস্তবায়ন করছেন। তবে স্ট্যানলি কাছে কোনো ধরনের জায়গা বিক্রি করেনি বলে দাবি করেন সেন্টু। পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য স্ট্যানলির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলম চাঁদ জানান, রাস্তা নির্মাণর ব্যাপারে তার জানা নেই এবং অভিযোগ দায়েরের কথা অস্বীকার করেন। ‘তবে এ ব্যাপারে ইউএনও সাহেব ভাল বলতে পারবেন। দয়া করে ওনার সাথে যোগাযোগ করুন।’
কালীগঞ্জ ইউএনও খন্দকার মো. মুশফিকুর রহমান জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং চেয়ারম্যানকে এ রাস্তা অনুমোদনের জন্য নিষেধ করেছেন। এক-দুইজন ব্যক্তি স্বার্থে রাস্তা নির্মাণের জন্য সরকারের একটি টাকাও তিনি এখানে খরচ যাবে না বলে জানান।
বিষয়টি মিমাংশার দায়িত্বে থাকা নাগরী মিশনের ফাদার জয়ন্ত এস গমেজ ও প্যারিস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি হেমন্ত গমেজ জানান, সমস্যাটাও বহুদিনের পুরনো। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। আমরা সেন্টুর সাথে কথা বলেছি। অপরপক্ষ স্ট্যানলি ঢাকা থাকায় তার সাথে কথা বলা যায়নি। তবে আশা করছি খুব দ্রুতই এর একটি সমাধানে যেতে পারবো।
"