ক্রীড়া ডেস্ক

  ২৬ জুলাই, ২০১৭

‘প্রতিটি দিনই চ্যালেঞ্জিং’

২০০৭ সালের ২৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোতে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে শুরু। সেই শুরুটা গতকাল দশ বছরের দীর্ঘ সময়ে পদার্পণ করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উত্থান-পতনে ভরা ১০টি বছর পূর্ণ করলেন বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ক্যারিয়ারের দশক পূর্তির এই দিনে বাংলাদেশ দলকে সঙ্গে নিয়ে আরো অনেক দূর যাওয়ার স্বপ্নের কথাই যেন শোনালেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘আংসাং হিরো’খ্যাত এই ক্রিকেটার।

মঙ্গলবার বিসিবিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মাহমুদউল্লাহ জানালেন, ফিট থেকে আরো অনেকটা সময় খেলে যাওয়ার ইচ্ছা এবং ক্যারিয়ারের গতি টানার আগে বাংলাদেশকে র‌্যাংকিংয়ের তিন-চারে দেখার স্বপ্নের কথাও জানালেন। এখানে প্রতিটি দিনই চ্যালেঞ্জিং তার। এর আগে রোববার জিমে ট্রেনিংয়ের সময় টান লেগেছে কোমরে। পরে স্ক্যান করে দেখা গেছে, ফ্লুইড জমেছিল সামান্য। সেই ব্যথায় এখনো কাতর মাহামুদউল্লাহ। বিশ্রামেও আছেন কয়েক দিন ধরে। জানালেন, ব্যথা আর না বাড়লে বুধবার থেকে আবার সাইক্লিং দিয়ে টুকটাক ট্রেনিং শুরু করবেন। দশ বছরের মাইলফলক বলে কথা। দীর্ঘদিনের অনেক কথাও যেন বলার ছিল মাহমুদউল্লাহর। তাই হয়তো অসুস্থতা নিয়েও দাবি মেটালেন সংবাদমাধ্যমের। শোনালেন তৃপ্তির কথা। জানালেন ভবিষ্যতের ভাবনার কথা।

মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘ভালো লাগছে। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ১০টা বছর পার করলাম। ১০ বছরে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, সেটা জাতীয় দলে কাজে লাগানোটাই বড় ব্যাপার। চেষ্টা করব আরো বেশ কয়েক বছর যাতে পারফর্ম করে যেতে পারি।’

‘মাশরাফি ভাই, সাকিব-তামিম-মুশফিকও ১০ বছর পার করেছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক দলের জন্য। আমার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার বললে, এখন দায়িত্বও বেড়ে গেছে। যে কয় বছর খেলব আরো এই দায়িত্ব যেন ভালোভাবে পালন করতে পারি। ওরাও আশা করি আরো অনেক দিন খেলবে। বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকায় আমাদের কম্বিনেশনটা এখন খুব ভালো।’

গত ১০ বছরে মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ার ছিল উত্থান-পতনে গড়া। অন্য অনেকের মতো সহজাত প্রতিভা নিয়ে দলে আসেননি। তাই অকালেই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। সেই সঙ্গে দলে তার প্রয়োজনীয়তাও বদলেছে নানাভাবে। কিন্তু সব চ্যালেঞ্জের জবাব দিয়ে এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। শুরুতে কিছুটা ব্যাটিং আর কিছুটা বোলিং দিয়ে অলরাউন্ডার হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সেই তিনিই এখন সীমিত ওভারে দলের অপরিহার্য অংশ। বিশ্বকাপে দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে ওঠার অন্যতম নায়কও মাহমুদউল্লাহ।

সামনে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখেন কি নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘বিশ্বকাপ জেতাটা একটা লম্বা সময়ের ব্যাপার। আমাদের জন্য ২০১৮ সালটা গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের আগে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে ওই বছরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

ক্রিকেটে নিজের যে বিবর্তন সেটা যেন মাহমুদউল্লাহ নিজেও বুঝতে পারেননি, ‘মানসিকভাবে এখন আমি আগের চেয়ে বেশি গোছানো। আরো বেশি ইতিবাচক এবং আক্রমণাত্মক। এই জিনিসটা আমাকে বেশি সাহায্য করেছে। আর ফিটনেস এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। ফিটনেস নিয়ে সচেতনতাও বেড়েছে। তবে এটা ধরে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।’

অনেক অর্জনই টাইগার জার্সিতে এসেছে। আবার অধরাও থেকে গেছে অনেক কিছুই। র‌্যাংকিংয়েও অনেক ওপরে উঠে আসার কথা জানালেন তিনি, ‘অনেক উত্থান-পতন আছে, অপূর্ণতার কথা বললেও অনেক কিছুই বলা যায়। আমরা এখন যেভাবে পারফর্ম করছি, সেভাবে আরো অনেক বছর করতে পারাটাই বড়। আমরা ১০ নম্বরে থেকে শুরু করেছিলাম। এখন চাই র‌্যাংকিংয়ের সেরা তিন-চারে থাকতে।’

বর্তমানে দলের অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ। দলের অভিজ্ঞতার পতাকাবাহীদের একজন তিনি। তবে অন্য চার সিনিয়র ক্রিকেটারের তুলনায় মাহমুদউল্লাহর পথটা একটু বন্ধুরই বলতে হয়। ব্যাটিং পজিশনের মতো তার ক্যারিয়ারটাও থিতু হয়েছে কমই। সবশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে জায়গা হারিয়েছেন টেস্ট দলে। ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়ার গুঞ্জনও উঠেছিল কয়েকবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে গেছেন। প্রতিদানও দিয়েছেন আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো করে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অসাধারণ সেঞ্চুরি করে। তবুও নির্ভার থাকতে নারাজ মাহমুদউল্লাহ। লড়াই করতে চান সবসময়। জানেন, বাংলাদেশ দলে জায়গা ধরে রাখতে হলে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি দিনই চ্যালেঞ্জের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাই এমন যে কখনোই থিতু হতে পারবেন না। যত দিন যাবে, আপনাকে নিয়ে প্রতিটি টিম ততই ওয়ার্কআউট করবে। দুর্বলতা বের করতে চাইবে। আমি মানসিকভাবে এখন অনেক গোছানো।। এটা তাই বুঝতে পারি যে, আমার কোথায় শক্তির জায়গা, কোথায় কাজ করতে হবে।’

‘এগুলো নিয়ে সব সময় কাজ করি। প্রতিনিয়তই কাজ করতে হবে। আমি জানি কষ্টের কোনো বিকল্প নেই। এটা চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি। অনেক উত্থান-পতন ছিল। সামনে চাইব যেন নিজের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশ দলের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারি।’

এই লড়াই চালিয়েই এতদূর পাড়ি দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। অনেক প্রতিকূল সময়ের লড়াই করে জায়গা ধরে রেখেছেন দলে। দলকেও এনে দিয়েছেন মনে রাখার মতো অনেক মুহূর্ত। এই মাহমুদউল্লাহকেই যেন আরো অনেক দিন দেখতে চায় বাংলাদেশ দল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist