ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০১ মার্চ, ২০২৪

আলো ছড়াতে প্রস্তুত তরুণরা

জাতীয় দলের তিন নতুন মুখের একজন কাজেম কিরমানি শাহ, যিনি সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহর ছেলে। অন্যজন তাজ উদ্দিন, যিনি জাতীয় দলের হয়ে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গোল করা সাদ উদ্দিনের ছোট ভাই। তৃতীয় জন রাব্বি হোসেন রাহুল, যার পেছনে আছে পোড় খাওয়া অতীত! এই তিন তরুণই বাংলাদেশের এক গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় খুলে দিলেন মনের আগল। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার রোমাঞ্চ সঙ্গী তিনজনেরই এবং তিনজনই নির্ভার। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে যে ঝলক দেখিয়ে অর্জন করেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরার আস্থা, সেই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে লাল-সবুজের জার্সিতে আলো ছড়াতে উন্মুখ হয়ে আছেন তারা।

কোচ কাবরেরাও তিন নতুনকে নিয়ে দারুণ আশাবাদী। বাফুফে ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দল নিয়ে কথা বলতে এসে কাজেম, রাহুল ও তাজকে বেছে নেওয়ার কারণ জানালেন এই স্প্যানিশ কোচ।

পুলিশ এফসির হয়ে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে ৯ ম্যাচের সবগুলোতেই খেলেছেন কাজেম। ২৫ বছর বয়সি এই মিডফিল্ডার লিগে জালের দেখাও পেয়েছেন একবার। ফেডারেশন কাপেও শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে গোল করেছিলেন একটি। মাঝ মাঠে দ্যুতি ছড়ানোর পাশাপাশি গোল করায় পারদর্শী কাজেমকে চোখে চোখে রেখেছিলেন বলে জানালেন কাবরেরা। কাজেমকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে চোখে রেখেছিলাম, গত বছর যখন থেকে সে পুলিশ এফসিতে যোগ দিয়েছিল, তখন থেকে। এরপর আমরা তার কিছু ট্রেনিং সেশন দেখেছিলাম, যেটা আমাদের ভীষণ মুগ্ধ করেছিল। আমাদের মনে হয়েছিল, আমাদের যে ধরন, ফুটবল খেলার যে দর্শন, তার সঙ্গে সে মানানসই। দেড় মৌসুম পুলিশ এফসির হয়ে খেলার পর এর আগেও তাকে আমরা ডাকার কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু চোট পাওয়ার কারণে ক্যাম্পের দলে ডাকতে পারেনি। এখন তার সামনে সুযোগ। তাকে নিয়ে আমরা ধীর পদক্ষেপে এগোব। আশা করি, সে দলের সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নেবে।

কাজেমও আশাবাদী নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে। বাবা হালিম শাহ ক্রিকেটার ছিলেন বলে কোনো চাপ অনুভব করছেন না তিনি। জানালেন, নির্ভার থেকে সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার মানসিকতা তার সহজাত। আমি নিজের ওপর অতিরিক্ত চাপ নেই না। বাবাও কখনো চাপ দেননি। সহজাতভাবেই আমি খেলাধুলায় এসেছি, ফুটবল খেলছি। এখন যে কাজটা করছি, সৌদি আরবের ক্যাম্পেও একই চেষ্টা অব্যাহত রাখব। বিষয়গুলো নিয়ে আমি খুব বেশি ভাবি না, চাপও নেই না। নিজের যেটা স্বাভাবিক, সেটাই করার চেষ্টা করি।

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে রাইট ব্যাক হিসেবে খেলা তাজের পজিশনে বর্তমান দলে আছেন বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়ার মতো অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্যরা। এই ২১ বছর বয়সিকেও মনে ধরেছে কাবরেরার। সে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে খেলেছে গত মৌসুমে। এবার শেখ জামালের হয়ে সবশেষ তিন ম্যাচে বেশি সময় খেলতে পারেনি, কিন্তু আগের ম্যাচগুলোতে সে যে মান দেখিয়েছে, দলের সঙ্গে আশা করি সে মানিয়ে নিতে পারবে। এর আগেও এশিয়ান গেমসের দলে সে ছিল, কিন্তু চোটের কারণে খেলতে পারেনি। তাজ এবার সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। যদিও চোটের কারণে সাদ উদ্দিনের খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে কিন্তু বড় ভাইয়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনায় দারুণ রোমাঞ্চিত তিনি।

‘আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে। তবে চাপ নিচ্ছি না। কখনো কল্পনাও করিনি, বড় ভাইয়ের সঙ্গে জাতীয় দলে খেলব, কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি লিগে ভালো খেলার। সে কারণেই হয়ত কোচের চোখে পড়েছে, আমাকে ডেকেছে। আমরা দুই ভাই এখন জাতীয় দলে-অবশ্যই খুব আনন্দের। এখন আমাকে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বলতে পারেন বাড়িতে ঈদের আনন্দ-উৎসব চলছে।’ লিগ টেবিলে ব্রাদার্স ইউনিয়ন আছে তলানিতে। কিন্তু বিবর্ণ দলটির আক্রমণভাগে আলো ছড়িয়েছেন রাহুল। ৯ ম্যাচে ৫ গোল করা ১৭ বছর বয়সি এই তরুণ নাকি শুরুতে কাবরেরার ভাবনাতেই ছিল না!

‘সত্যি বলতে রাহুল এ মৌসুমের শুরু থেকে আমাদের স্কাউটিংয়ের নজরে ছিল না। এরপর সে আস্তে আস্তে ভালো পারফরম্যান্স করতে শুরু করল এবং লিগের প্রথম পর্বে আটজন ৫ বা তার বেশি গোল করেছে, তাদের মধ্যে সে একজন। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় দলের অনুশীলনের আবহে থাকাটা তার প্রাপ্য। এরপর দেখব, এত অল্প অভিজ্ঞতা নিয়ে সে আমাদের কী দিতে পারে। লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলকে দিতে এসেছি’, প্রত্যয়ী কণ্ঠে বললেন রাহুল। গত বছর বাবাকে হারিয়ে একসময় হতাশায় ফুটবলকে বিদায় দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাবা হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করেছেন তিনি। যশোরের স্থানীয় কোচ সাব্বির আহমেদ পলাশের পরিচর্যায়, নিজের প্রচেষ্টায় কঠিন সময়কে পেছনে ফেলে এখন শুধু সামনের দিকেই তাকাতে চান রাহুল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close