ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৪ এপ্রিল, ২০১৯

শিরোপা ধরে রাখল আবাহনী

সৌম্যের অনন্য রেকর্ড

পাহাড়সম রান তাড়ায় চ্যালেঞ্জটা ছিল অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু সৌম্য সরকারের ব্যাটিং তা-বে সব সমীকরণ মিলে গেল সহজভাবে। দুর্দান্ত ডাবল সেঞ্চুরিতে বাঁহাতি ওপেনার নাম লেখালেন ইতিহাসে। জহুরুল ইসলামের সঙ্গে তার ট্রিপল সেঞ্চুরি জুটিতে তছনছ হলো রেকর্ড বই। শেষ দিনের অসাধারণ জয়ে আবাহনী ধরে রাখল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা।

পয়েন্টের হিসাবে সমান অবস্থানে থেকে ভিন্ন দুই মাঠে শেষ দিনের লড়াইয়ে নেমেছিল আবাহনী লিমিটেড ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। নিজ নিজ ম্যাচ জিতেছে দুই দলই। তাতে পয়েন্ট থেকে গেছে সমান, মুখোমুখি লড়াইয়েও ছিল সমতা। তবে রান রেটে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী।

নিজেদের শেষ ম্যাচে কাল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ৯ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে আবাহনী। বিকেএসপিতে তানবীর হায়দারের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে শেখ জামাল করেছিল ৩১৭ রান। সৌম্যর রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরিতে আবাহনী জিতেছে ১৭ বল বাকি রেখে।

১৫৩ বলে ২০৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন সৌম্য। যা কিনা লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। ইনিংসটির পথে ছক্কা মেরেছেন ১৬টি। যেটিও বাংলাদেশের রেকর্ড।

জহুরুলের সঙ্গে সৌম্যর উদ্বোধনী জুটিতেই প্রায় জিতে গিয়েছিল আবাহনী। ১২৮ বলে ১০০ করে জহুরুল যখন আউট হলেন, জয় তখন কেবল ৬ রান দূরে। ৩০০-এর বেশি রান তাড়ায় ১০ উইকেটে জয়ের অভাবনীয় কীর্তি ফসকে যায় অল্পের জন্য।

তবে জুটির রেকর্ডও হয়েছে একগাদা। উদ্বোধনী জুটি তো অবশ্যই, যেকোনো উইকেটেই লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যানের সেরা জুটি এটিই। আর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে রান তাড়ায় ৩০০ রানের জুটি বিশ্ব ক্রিকেটেই এই প্রথম।

সৌম্যর এমন রুদ্রমূর্তি ছিল না শুরুতে। ফিফটি করতে বল খেলেছিলেন ৫২টি। জহুরুলের ফিফটিতে লাগে ৫৫ বল। তবে ফিফটির পর থেকে শেখ জামালের বোলারদের কচু কাটা করতে থাকেন সৌম্য। আগের ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছিলেন ৭১ বলে। এ দিন সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ৭৮ বলে। ৯০ থেকে তাইজুল ইসলামকে টানা ২ বলে চার ও ছক্কায় ছুঁয়েছেন লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিতে।

অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকেন সেঞ্চুরির পরও। ১০৪ বলে স্পর্শ করেন ১৫০। ডাবল সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে একটু সময় নেন। ছিলেন খানিকটা সাবধানি। শেষ পর্যন্ত ইমতিয়াজ হোসেনকে বাউন্ডারিতে ১৪৯ বলে স্পর্শ করেন ডাবল সেঞ্চুরি।

জহুরুল যখন ফিফটি ছুঁলেন, সৌম্যর রান ছিল ৪০। তবে ফিফটির পর জহুরুল ছিলেন বলতে গেলে দর্শক। সৌম্য গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বোলারদের। তাইজুলের ওপর দিয়েই ঝড়টা গেছে সবচেয়ে বেশি। এই বাঁ-হাতি স্পিনারকে এক ওভারে তিনটিসহ মোট সাতটি ছক্কা মেরেছেন সৌম্য। লেগ স্পিনার মিনহাজুল আবেদিন আফ্রিদির ১ ওভারে তিনটিসহ ছক্কা ছিল ৪টি। ম্যাচের শেষটাও সৌম্য করেছেন ছক্কায়।

সৌম্যর ব্যাটিং ঝলকে অনেকটাই আড়ালে পড়ে যান তানবীর। কিন্তু ম্যাচের প্রথম ভাগে তিনিই ছিলেন নায়ক। দারুণ বিপদে থাকা শেখ জামালকে উদ্ধার করেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শেখ জামাল ৫ উইকেট হারিয়েছিল ৮৫ রানে। তানবীরের বীরোচিত ব্যাটিংয়ের শুরু সেখান থেকেই। ইলিয়াস সানির সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৯১ রানের জুটি, সপ্তম উইকেটে মেহরাব হোসেন জোসির সঙ্গে ৯৮।

এই দুজনের সঙ্গে জুটি থামার পর লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে তানবীর দলকে পার করান ৩০০। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার আগের সেরা ছিল ৭৭। সেটি অনেক পেছনে ফেলে এবার ১০টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১১৫ বলে অপরাজিত ১৩২।

প্রথম স্পেলে দুটির পর শেষ স্পেলেও মাশরাফি নেন ২টি উইকেট। তবে তানবীর বা মাশরাফি নয়, দিন শেষে সৌম্যর ব্যাটিং দ্যুতিতে মøান সবাই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শেখ জামাল-আবাহনী

শেখ জামাল : ৫০ ওভার ৩১৭/৯ (ইমতিয়াজ ১৫, ফারদিন ৩৪, নাসির ১৩, সোহান ১৭, তানবীর ১৩২*, ইলিয়াস সানি ৪৫, মেহরাব ৪৪, আফ্রিদি ৪*; সাইফ ১০-০-৬৯-১, মাশরাফি ১০-১-৫৬-৪, মিরাজ ৮-০-৩২-১, মোসাদ্দেক ৭-০-৪৬-১, সানজামুল ৯-১-৬২-০, সৌম্য ৬-১-৪৭-১)

আবাহনী : ৪৭.১ ওভার ৩১৯/১ (জহুরুল ১০০, সৌম্য ২০৮*, সাব্বির ০*; মেহরাব ৮-০-৬৪-০, ইলিয়াস সানি ৪-০-২৮-০, ইমতিয়াজ ৩-০-১০-১)।

ফল : আবাহনী লিমিটেড ৯ উইকেটে জয়ী

ম্যাচ সেরা : সৌম্য সরকার

রূপগঞ্জ-প্রাইম ব্যাংক

লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ : ৫০ ওভার ৩২৭/৪ (মারুফ ৫৪, মোহাম্মদ নাঈম ১৩৬, মুমিনুল ৫২, নাঈম ২৪*, জাকের ২৭, মুক্তার ২২*; মোহর ১/৫৩, নাহিদুল ১/৫২, রাজ্জাক ১/৫৮, নাঈম ১/৫৩, কাপালী ০/২৫)

প্রাইম ব্যাংক : ৪২.১ ওভার ২৩৯ (রুবেল ৩৭, এনামুল ২৬, সালমান ৭, জাকির ১১, আরিফুল ৩৩, কাপালি ২১, নাহিদুল ৭৪, নাঈম ১৫, রাজ্জাক ০, মোহর ০*, ইমরান ৬; নাবিল ২/৪১, শহীদ ৪/২২, আসিফ ০/২৬, মুক্তার ২/৬২, নাঈম ১/৩০)

ফল : লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৮৮ রানে জয়ী,

ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ নাঈম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close