শাম্মী তুলতুল

  ২৩ মার্চ, ২০২৪

মুক্তিযুদ্ধ হার না-মানা এক গল্প

মিতা আর নিতু দুই বোন। তারা রোজ সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় এক পাগল বাবাকে দেখে সে শুধু চিৎকার করে বলে জয় বাংলা, আমাদের দেশ স্বাধীন করেছে বঙ্গবন্ধু। তিনি আরো বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তারা বেশ কিছুদিন ধরে তাকে খেয়াল করছিল। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। মাথায় একটা ময়লা টুপি পরা। গায়ের শার্ট-লুঙ্গিও ময়লা। তারা ভয়ে তার কাছে যায় না। লোকটা তাদের প্রায় ডাকে। কিন্তু মামণি বলেছে, এভাবে কেউ ডাকলে না যেতে যদি ছেলে ধরা হয় তাই। তারা এভাবে বেশ কদিন তাকে খেয়াল করে মনে মনে অনেক ভাবতে লাগল। এক দিন তাদের বাসায় নানা ভাই এলো। নানা ভাই কদিন তাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া শুরু করল। নানাও সেই লোকটাকে খেয়াল করল। নানা ভাই তার কাছে যেতে চাইলে মিতা আর নিতু মানা করে। বলে, নানা ভাই যেও না, উনি পাগল তোমাকে খেয়ে ফেলবে। নানা ভাই শুনে হাসে হা হা হা করে।

আরে গাগলি উনি একজন মানুষ। আমাদের যুদ্ধের কথা বলছে। সেটা কী?

আমি বাড়ি গিয়ে বলব। তার আগে লোকটার সঙ্গে কথা বলি খানিক। তোমরা এখানে দাঁড়াও। তারা একটু দূরে দাঁড়াল। নানা ভাই লোকটার জন্য কিছু কলা কিনল। গিয়ে বলেন, নেন ভাই খান জয় বাংলা বলে।

হি হি জয় বাংলা।

আপনি কী করেন?

আমি একজন যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা।

কিন্তু আপনার এ অবস্থা কেন?

আমি স্বাধীনতা করে সবকিছু পেয়েছিলাম কিন্তু আমার আপনজন আমাকে ঘরছাড়া করে দিয়েছে। তারা আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও মেরে খাচ্ছে।

খুব দুঃখজনক ব্যাপার, আমি কি আপনার কোনো উপকার করতে পারি। হুমম করতে পারেন, দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে পারেন। আমি চাই প্রতিটি শিশু-কিশোর এই গল্প জেনে বড় হোক।

কথাটা শুনে নানার চোখে পানি চলে এলো। তিনি তাকে কিছু টাকা দিলেন আর বললেন আপনার জন্য কিছু করতে পারলে আমি ধন্য হবো।

নানা ভাই চোখ মুছতে মুছতে মিতা আর নিতুর কাছে এলে তারা জিজ্ঞেস করে কাঁদছো কেন নানাভাই?

উনি পাগল নন নানা ভাই, উনি একজন যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা।

সেটা আবার কী? বাসায় গিয়ে বলছি তোমাদের তার গল্প।

চলো তাহলে। তারা বাসায় এসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বসে গেল গল্প শুনতে মিতা আর নিতু।

নানা বলতে শুরু করল। এই যে আমাদের দেশ তার নাম কী? মিতা বলল বাংলাদেশ।

আমাদের দেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে। তার পেছনে রয়েছে হাজার কাহিনি। আর আমাদের জাতিকে স্বাধীনতার জন্য তৈরি করেছিলেন বাঙালি জাতির মহান নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। তার মতো নেতা আর হয় না। আমাদের দেশ দুভাগে বিভক্ত ছিল। পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান।

পূর্ব পাকিস্তান ছিল বাঙালিদের। আর পশ্চিম পাকিস্তান ছিল পাঞ্জাবিদের। পশ্চিম পাকিস্তানিরা চেয়েছিল আমাদের শোষণ করবে। আমাদের গোলাম বানাবে। কিন্তু বাঙালিরা তা মানতে পারেনি।

শাসকদের বিরুদ্ধে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। ১৯৬৬ সালে বাঙালির প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি পেশ করেন। বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানে চলতে থাকে ৬ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন। ইতিমধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আইয়ুব খান মিথ্যা আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। শেখ মুজিবকে ছাড়িয়ে আনার আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ফলে ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয় আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে। শেখ মুজিবসহ সব নেতাকে ছেড়ে দিতে। আইয়ুব খান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। দেশে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালের এই নির্বাচনে বাঙালিরা পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি আসনেই জয় লাভ করে। কিন্তু ক্ষমতা ছেড়ে দিতে টালবাহানা শুরু করে পাকিস্তানি শাসকরা।

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যা ৭ মার্চের বিখ্যাত ভাষণ নামে খ্যাত। যে ভাষণে তিনি বলেছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’। ১৯৭১ সালের ২৫ রাত কালরাতে বেজে উঠে যুদ্ধের দামামা। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস যুদ্ধ করে করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। আনে একটি স্বাধীন লাল-সবুজের পতাকা। পাকিস্তানিরা হেরে গিয়ে এই বাংলা আমাদের দিয়ে ফিরে যান নিজ গন্তব্যে। ওই যে পাগল যেসব কথা বলল তিনি এই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তাই তো তিনি মুজিবের সেই ভাষণের কথা বলে যান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

মিতা বলল, আচ্ছা নানা ভাই এবার বুঝতে পারলাম পাগল আঙ্কেলের কথার মানে। তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট জানতে আর বুঝতে পারলাম।

হুমম ঠিক তাই। তোমরা নানা ভাই বুঝতে পারলেই আমি সার্থক। আমার বলাটা সার্থক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close