আবরার নাঈম

  ০৩ জুন, ২০২৩

পুঁটি মাছের গায়ে লাল শাড়ি

আসরের পর মুষলধারে বৃষ্টি। মোবাইল হাতে জানালার পাশে বসে আছি। উপভোগ করছি বৃষ্টিমুখর মুহূর্ত। মাঝেমধ্যে এলোপাতাড়ি বাতাস এসে বৃষ্টিকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে এদিক-সেদিক।

যারা হস্তশিল্পী, তারা এই দৃশ্যগুলোকে খুব নান্দনিক রূপ দিতে পারে তাদের অঙ্কন চিত্রে। যারা কবি-সাহিত্যিক তারা কাগজের বুকে কলমের আঁচড়ে তৈরি করতে পারে নানা গদ্য-পদ্য। আমি এসবে অব্যস্ত নই- তবুও ব্যর্থ চেষ্টা করলাম এমন সুন্দর একটা মুহূর্তকে কাগজে-কলমে সংরক্ষণ করতে। পারি আর না পারি চেষ্টা করতে তো মানা নেই। কারণ মোবাইলে তোলা ছবি আর কাগজে-কলমে লেখা তো এক না।

বৃষ্টির কারণে গৃহবন্দি। অথচ একটা সময় ছিল- যখন বৃষ্টি এলে মনে হতো আকাশের চাঁদ কিংবা রূপকথার গল্পে শোনা সোনার হরিণ হাতে পেয়ে গেছি। আকাশ সামান্য মেঘাচ্ছন্ন হলেই অধীর আগ্রহে থাকতাম- কখন আকাশ ফোটা হয়ে নামবে মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকার অন্যতম কারণ- বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করা এবং মাছ ধরা। মাছ ধরার নেশা আগে থেকেই। শুধু যে বৃষ্টি এলেই তা নয়! সময় পেলেই মাছ ধরায় লেগে যেতাম। এমনও হয়েছে মাদরাসা ফাঁকি দিয়ে বাসায় চলে এসেছি মাছ ধরতে। আমাদের বাড়ির উত্তর এবং পশ্চিমে ছিল দুটো পুকুর। বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিপাতে পুকুর দুটো পানিতে টইটম্বুর হয়ে পুকুরের এপার-ওপার একাকার হয়ে যেত। বাড়ির আশপাশেও ছিল ফিশারি- ফলে চারদিকের পানিতে মনে হতো বিশাল বিলের মাঝে ছোট্ট একটি কুড়েঘর আমাদের। এ সময় ঘটত সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা- একাধারে বৃষ্টিতে হতে থাকলে উঠোনে পানি জমে যেত হাঁটু বরাবর। পুকুরের অতিরিক্ত পানি উঠোন বেয়ে গড়িয়ে যেত বাইরে। তখন পানির সঙ্গে সঙ্গে পুকুর থেকে দলে দলে বেরিয়ে যেত নানা প্রজাতের মাছ। বিশেষ করে কৈ, তেলাপিয়া, দেশি পুঁটি- এগুলো পাওয়া যেত বেশি। বর্ষাকালে নতুন পানি পেলে পুঁটি মাছের গায়ে একটা লাল সরুরেখা দেখা যায়। দেখতে অনেকটা নববধূর লাল শাড়ির মতো। লোকমুখে প্রচলিত আছে- এ সময় নাকি তাদের বিয়ে হয়- সেজন্য তারা সাজগোজ করে। এই লাল সরুরেখার কারণে অন্য মাছ থেকে সহজেই তাকে পার্থক্য করা যায়, যা তার সৌন্দর্যের প্রতীক। মাছ খাওয়ার চেয়ে ধরার আনন্দটা বেশি।

বৃষ্টির পানি কিছুটা কমলে উঠোনে জাল ফেলতাম। বড় ভাই-বোন সবাই মিলেমিশে লেগে যেতাম মৎস্য শিকারে। একবার হলো কি- কোত্থেকে একটা ইয়া বড় শিং মাছ এসে হাজির! আমার বড় ভাই আরিফ রব্বানী দৌড়ে কাছে গেল। পানি ঘোলাটে হওয়ায় প্রথমে চিনতে পারছিল না সেটা কী? লেজের নড়াচড়া দেখে সে ভয় পেয়ে গেল এবং সাপ সাপ বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে এলো। পরে সবাই মিলে কাছে গিয়ে দেখি সাপ নয় সেটা আসলে শিং মাছ।

তখনকার দিনগুলো কত আনন্দে কাটত। বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে কত রকম আয়োজন হতো। এখনো বৃষ্টি হয় কিন্তু আগের সেই আবেগটা কাজ করে না। মন চায় না বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করি। পুকুরে নেমে মাছ ধরি। আর এখন তো চাইলেও পারব না। কারণ পুকুরের চিহ্নও নেই পুরো এলাকায়। যদি ফিরে আসত সেই দিনগুলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close