শামীম খান

  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পাখি ধরা সুবোধ

আমাদের বন্ধু সুবোধ। নাম তার সুবোধ হলে কী হবে? তার একটুও সু বোধ নেই। সারা দিন থাকে নানা দুষ্টুমির মধ্যে। তাও আবার কু দুষ্টুমি। এই যেমন কারো মাটির হাঁড়ি ভাঙা, ডাল ভেঙে ঝুলে থাকা, শুকনো গাছে আগুন দেওয়া, গাছে চড়ে পাখির বাসা ভাঙা- এসব তার রুটিনকাজ। এসব কারণে কেউ কেউ তাকে সুবোধের বদলে কুবোধ বলেও ডাকে।

একবার এক ঘুমন্ত কুকুরের পুরো মাথাটা কালো কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে বেঁধে দেয়, ঘুম ভাঙলে কুকুরের সে কী ছুটোছুটি! পুরো গ্রাম ছুটে বেড়িয়েছে কুকুরটি, একবার পুকুরেও পড়ে গেছে। শেষমেশ ভেজা কুকুরটি এবাদ চাচার আঙিনায় শুয়ে পড়ে। এ অবস্থা দেখে এবাদ চাচা ব্যাগটা ছাড়িয়ে কুকুরটাকে মুক্ত করেন। আর সুবোধও সেবার খুব বকা খায় সবার। পাখিদের বাসা ভেঙে ছানা পেড়ে আনা তার বড় শখ। বাসা দেখলেই তরতর করে উঠে যাবে গাছে। একবার তো দোয়েল পাখির খোঁড়ল থেকে ছানা পাড়তে গিয়ে সাপের কবলে পড়েছিল। ভাগ্যিস গাছটা ছোট ছিল বলে রক্ষা পায় সেবার। কোনো রকমে লাফ দিয়ে পড়ে পুকুরের পানিতে। সেই থেকে বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল তার পাখি ধরা।

যদিও পাখি ধরার অনেক কৌশলই তার রপ্ত। শীতকালে খেজুরগাছের কোষায় সুতোর ফাঁদ পেতে রেখে নিচে বসে থাকে সে। রস খেতে পাখি এসে কোষায় বসতেই সুতোয় টান মারে। হ্যাঁচকা টানে পাখির পা বেঁধে যায় সুতোর সঙ্গে। এখন আবার গুলতি আর মার্বেল কিনে এনেছে সে। সারা দিন টইটই করে ঘুরে বেড়ায় আর গুলতি চালায়। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে করতে পুকুর ঘাটে গেলাম। দেখি একটি শালিকের ছানা পাটি পাতার ঝোপের সঙ্গে পা আটকে চেঁচামেচি করছে। আমি তার পা খুলে দিতে গেলাম আর অমনি দুটি শালিক এসে আমাকে খামচি মারল দুদিক থেকে। ব্যথায় ককিয়ে উঠলাম, তবু কোনোমতে ছানাটিকে মুক্ত করে চলে যেতে চাইলাম। কিন্তু আরো তিন-চারটি শালিক এসে আমাকে আক্রমণ করল। আমি ছুটে পালিয়ে এলেও শরীরের কয়েকটি জায়গা থেকে রক্ত বের হয়ে গেল। তার পরও আমি খুশি ছানাটিকে মুক্ত করতে পেরে। দুপুরের দিকে ছোট চাচা এলেন বাজার থেকে। পুকুর পাড়ে শালিকছানাটি দেখে কাছে গেলেন, দেখলেন ছানাটি উড়তে পারে না। ছানাটিকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসতে উদ্যত হলে পাখির আক্রমণের শিকার হন তিনিও। ছোট চাচার দৌড়ানি দেখে আমরা হাসতে লাগলাম। পরে তিনি জানতে পারলেন সকালে পাখিরা আমাকেও আক্রমণ করেছিল। এ ঘটনায় বুঝতে পারলাম, পাখিরা মানুষদের একদমই বিশ্বাস করে না। মানুষরা তাদের ক্ষতি করে। বাসা ভেঙে পাখির ছানাদের ধরে নিয়ে যায়। যেমনটা করে আমাদের বন্ধু সুবোধ।

হ্যাঁ, তার মতো মানুষদের জন্যই তো পাখিরা আমাদের ভয় পায়। ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। বিকেলে খেলার মাঠে সুবোধের সঙ্গে দেখা। তাকে বললাম, আমাদের পুকুর পাড়ে একটি নাদুসনুদুস শালিকছানা আছে, ধরবি? আমার কথা শুনে সুবোধ তার সু বোধ হারিয়ে ফেলে। বলে, চল। এক্ষুনি চল। আমাদের খেলার মাঠের সব বন্ধু গেল আমাদের পুকুর পাড়ে। আমি সুবোধকে পাখির ছানা দেখিয়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। সুবোধ শালিক ছানাটিকে ধরতেই ছুটে এলো তিন-চারটি শালিক। উড়ে উড়ে খামচি মারতে লাগল সুবোধকে। সুবোধ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে লাফ দিল পুকুরে। সেখানেও পাখিদের আক্রমণ। কোনো রকম ডুব দিয়ে এ পাড়ে এসে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সে। তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। পাখিরা সুবোধকে উচিত শিক্ষাই দিয়েছে। সেই থেকে আর কখনো পাখি ধরতে গাছে ওঠেনি সে। গুলতিটাও ফেলে দিয়েছে। সুবোধ এখন নিতান্তই সুবোধ ছেলে। আমাদের বন্ধু সুবোধ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close