বদরুল আলম মজুমদার

  ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

তাপপ্রবাহ বাড়ছে তবুও খুললো প্রাথমিক বিদ্যালয়

দেশব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এ অসহ্য গরমের মধ্যেই আজ রবিবার সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যালয় খোলা রাখার এ আদেশ জারি করে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি পরিবর্তন আনা হয়েছে সময়সূচিতে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। এ অবস্থায় এখনই স্কুল খোলা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষক-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অতি তাপপ্রবাহ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। চলমান তাপের যে ঊর্ধ্বমুখী ধারা, তা আরো কয়েকদিন থাকতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তর সতর্কতা জারি করেছে। তাই সারা দেশে বৃষ্টি হয়ে গরম কমলে বর্তমান ঘোষিত সময় অনুযায়ী প্রাথমিক স্কুল খোলা হলে ভালো হতো।

এদিকে শিখন ঘাটতি পূরণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে শনিবারও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। তবে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে বহাল থাকছে বলে জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন বলেন, ‘শনিবার ছুটি বাতিল নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত শিক্ষকরাই নেবেন। তারা যদি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি রয়েছে, তাহলে নিজেরা আলোচনা করে শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখতে পারবেন। এ বিষয়েও আমরা এরকম নির্দেশনাই দিয়েছি।

তাপমাত্রা বাড়তে থাকা অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার যে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, সারা দেশের তাপমাত্রা বর্তমান সময়ে এসে আগের চেয়েও বেশি হয়েছে। এ অবস্থায় এক সপ্তাহ বন্ধ রাখার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সঠিক বলে আমি মনে করি। কারণ দেশের আবহাওয়ার চিরায়ত চিত্র মাথায় রেখেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার সময়সূচি মাথায় রেখেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য সব বিদ্যালয়কে বেলা সাড়ে ১১টার আগেই ছাত্রছাত্রীদের ছুটি দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন, একীভূত শিক্ষা) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মর্নিং স্কুল চালু রয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও রবিবার (আজ) আবার চালু হচ্ছে। নতুনভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কোনো নির্দেশনা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি। যদি নতুন সিদ্ধান্ত হয়, তখন সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।’ ঢাকাসহ দেশের ৫০টির বেশি জেলার ওপর দিয়ে এখন তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে দিনের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে কয়েক ডিগ্রি। তীব্র গরমের কারণে সারা দেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দফায় দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করে জনগণকে সচেতন করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সর্বশেষ গতকাল শনিবার দেওয়া পূর্বাভাসে ফের ৭২ ঘণ্টার জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করে সংস্থাটি।

এ অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছেন না একটি নামিদামি স্কুলের এক প্রধান শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ শিক্ষক বলেন, ‘সপ্তাহের শুরুতে যখন বিদ্যালয় বন্ধ করা হলো, তখনকার তাপমাত্রার ছেড়ে আজকের দিনের তাপমাত্রা আরো অনেক বেশি। সর্বশেষ হিট অ্যালার্ট আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আমার মনে হয় হিট অ্যালার্টের বিষয়টি মাথায় রেখে বিদ্যালয় খোলা উচিত ছিল। তবে এক্ষেত্রে ভালো হতো সারা দেশে এক পশলা বৃষ্টি হলে তাপামাত্রা অনেকটাই কমে আসত, তখন স্কুল খুললে তেমন একটা প্রতিক্রিয়া হতো না।’ স্কুল খোলার নির্দেশনা পেয়ে অনেক অভিভাবক বলেন, ‘তাপমাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে, কম থাকা অবস্থায় স্কুল বন্ধ করা হলো অথচ এখন তাপ বৃদ্ধির পরও কেন স্কুল খোলা হলো। এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর আমরা দিতে পারছি না।’

উত্তরা হাইস্কুলের প্রাথমিকের অভিভাবক আবু সিদ্দিক বলেন, ‘আজকে (শনিবার) শুনলাম, প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। এটা কেন করল সরকার, তা বুঝতে পারছি না। গরম যখন বাড়ছে, তখনই স্কুল খুলে দেওয়া হলো, তাহলে এক সপ্তাহ কেন বন্ধ রাখা হলো। তার মতে, আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করে স্কুল খোলা যেত।’ এদিকে প্রচণ্ড গরমের কারণে এক সপ্তাহ ছুটির পর খুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। আজ রবিবার থেকে শুরু হবে ক্লাস। তবে ক্লাসের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ক্লাস হবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।

শনিবার উপসচিব আক্তারুন্নাহার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২৮ এপ্রিল (আজ রবিবার) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকার্যক্রম চলমান থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে বেশকিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোয় প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট সকাল পৌনে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। তাপপ্রবাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি (প্রাত্যহিক সমাবেশ) বন্ধ থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close