আমিনুল ইসলাম হুসাইনী

  ২৯ মার্চ, ২০২৪

ইতিকাফ বান্দাকে ফেরেশতায় পরিণত করে

আল্লাহতায়ালার সঙ্গে প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ এক আমল হলো ইতিকাফ।

ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর অর্থ বিচ্ছিন্ন থাকা বা নির্জনে থাকা। পরিভাষায়, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়। ইতিকাফ বহু প্রাচীন বিধান। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে সেই সব লোকের জন্যে পবিত্র করো, যারা এখানে তওয়াফ করবে। ইতিকাফ করবে এবং রুকু ও সিজদা করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১২৫)

ইতিকাফের সাধনায় বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। আমরা তো আল্লাহতায়ালার বড়ই আদরের বান্দা ছিলাম। নিষ্পাপ হৃদয় দিয়ে তিনি আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। আমাদের কলব ছিল সাদা গোলাপের মতোই শুভ্র। সেই শুভ্র কলবে ছিল না গুনাহের কোনো দাগ। বয়স যত বাড়ল, আমরা দুনিয়ার লোভ লালসায় ততই আসক্ত হয়ে পড়লাম। ক্রমাগত পাপাচারের বিষবাষ্পে আমাদের কলব কলুষিত হয়ে পড়ে। এই কলুষিত কলবকে ইতিকাফের বহমান ঝরনায় উজ্জীবিত করার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। ইতিকাফ গুনাহগার বান্দাকে বেগুনা বানিয়ে দেয়। জাহান্নামের নিকষ আগুন রক্ষা করে। হাদিসে এসছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’ প্রতি খন্দকের দূরত্ব আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান।’ (শুয়াবুল ইমান, ৩/৪২৫)

ইতিকাফকারী আল্লাহর ঘরের মেহমান হিসেবে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হন। তা ছাড়া ইতিকাফের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো ‘লাইলাতুল কদর’ অর্জন। যে রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও অধিক। নবীজি (সা.) লাইলাতুল কদর লাভের আশায় একবার রমজানের প্রথম দশ দিন ইতিকাফ করেন। এরপর কয়েকবার মাঝের দশ দিন ইতিকাফ করেন। এরপর একসময় শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতে শুরু করেন আর বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বোখারি, হাদিস ২০২০)

আলহামদুলিল্লাহ। আমরা অনেকেই পবিত্র এই আমলে শরীক হই। ইতিকাফে বসি। কিন্তু আফসোসের কথা হলো, আমরা ইতিকাফে বসেও মহামূল্যবান সময়কে নষ্ট করি। অযথা গল্পগুজব করি। কখনো কখনো এমনও সব কাজ করি, যার ফলে ইতিকাফের সওয়াবের বদলে গুনাহ হচ্ছে। তাই আসুন, ইতিকাফে করণীয় ও বর্জণীয় সম্পর্কে জেনে নিই।

ইতিকাফে করণীয় : ২০ রমজানের সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্বেই নির্দিষ্ট মসজিদে প্রয়োজনীয় সামান নিয়ে চলে যাওয়া। শাওয়াল মাসের চাঁদ না ওঠা পর্যন্ত ওই মসজিদে অবস্থান করা। (শামি ২/৪৪)

ইতিকাফ অবস্থায় বেশি বেশি জিকির আজকার করা। নফল নামাজ পড়া। কোরআন তেলাওয়াত করা। তওবা ইস্তিগফার করা। বাড়িতে না যাওয়া। আম্মাজান আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা) কোনো কারণ ছাড়া গৃহে প্রবেশ করতেন না।’ (বোখারি, হাদিস ২০২৯)

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মসজিদের বাইরে যাওয়া যাবে না। ব্যবসার হিসাব-নিকাশ থেকে বিরত থাকা। জরুরতের জন্যে বাইরে গেলে বেশিক্ষণ না থাকা। জরুরত মানে হলো প্রশ্রাব-পায়খানা, অজু গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া। ইতিকাফের প্রতিটি সেকেন্ড মহামূল্যবান। তাই অযথা গল্পগুজব না করে বেশি বেশি ইবাদত করা প্রয়োজন।

তবেই আল্লাহর সঙ্গে বান্দার প্রেমের সেতুবন্ধ হবে। ইতিকাফ যেন এক পরশ পাথর। বান্দার কলুষিত জীবনকে পরিশুদ্ধ করে ফেরেশতা বানিয়ে দেয়। ইতিকাফ বান্দাকে জাহান্নামে নিকষ অগ্নি থেকে রক্ষা করে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, খতিব কসবা মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close