বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

  ০৮ জুলাই, ২০২০

বান্দরবানে দুই গ্রুপের গোলাগুলি, নিহত ৬

বান্দরবান সদর উপজেলার বাঘমারা এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে ছয়জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থিত নেতাকর্মী। নিহতদের মধ্যে সংগঠনটির শীর্ষ কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি।

নিহতরা হলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা (৬৮), উপদেষ্টা কমিটির সদস্য চিংথোয়াইয়াং মারমা ওরফে ডেভিড (৫৬), বান্দরবান জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গা (৫০), পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সদস্য রবীন্দ্র চাকমা (৫০), রিপন ত্রিপুরা ওরফে জয় (৩৫) ও জ্ঞান ত্রিপুরা ওরফে দিপন (৩২)। রতন তঞ্চঙ্গা ছাড়া বাকি সবার বাড়ি খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় আহতরা হলেন নিরু চাকমা (৫০), বিদ্যুৎ ত্রিপুরা (৩৮) এবং প্রু বা চিং মারমা (২৬)। এ ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমাকে দায় করেছে প্রতিপক্ষ।এ বিষয়ে বান্দরবান পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যর একটি দল পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে সেনা টহল ও চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ এলাকাকে ঘিরে রাখা হয়েছে। মূলত দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা হয়েছে বলে আমরা শুনতে পেয়েছি।

তিনি জানান, আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেওয়া হলেও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, যেখানে হামলা হয়েছে, সেটি জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থি অংশের বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি। রতন নিজেও এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন। সকালে যখন হামলা হয়, তখন তাদের ৯ থেকে ১০ জন সদস্য ওই বাড়িতে ছিলেন। হঠাৎ একদল সশস্ত্র লোক আসে, তারা বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে পাশের ধানখেত দিয়ে চলে যায়।

১৯৯৭ সালে সরকারের সঙ্গে সন্তু লারমার পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ছেড়ে ইউপিডিএফ গঠন করেছিলেন প্রসীত খিসা। প্রায় এক যুগ আগে জনসংহতি সমিতি আরেক দফা ভেঙে সুধা সিন্দু খিসার নেতৃত্বে গঠিত হয় জেএসএস (এমএন লারমা)। সেই অংশটিই স্থানীয়ভাবে জেএসএসের সংস্কারপন্থি অংশ হিসেবে পরিচিত।

আবার তপন জ্যোতি চাকমা বর্মার নেতৃত্বে ইউপিডিএফের সংস্কারবাদী একটি অংশ তিন বছর আগে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে নতুন দল গঠন করে। এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধেরে রাখতে জেএসএসের এমএন লারমা অংশের সঙ্গে তাদের এক ধরনের মিত্রতা তৈরি হয়। পাহাড়ি সংগঠনগুলোর এই বিভক্তির পথ ধরে ২০১৮ সালে পার্বত্য জেলাগুলোতে নতুন করে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয় এবং প্রায়ই সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনা ঘটছে।

খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ : সন্তু লারমার নির্দেশেই বান্দরবানে ৬ খুন : বান্দরবানে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ছয়জন নিহতের ঘটনায় খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এমএন লারমা সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। গতকাল বিকালে জেলা শহরের মহাজনপাড়া এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শাপলা চত্ব¡রে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

জেএসএস (এমএন লারমা) জেলার সহ-সভাপতি সুভাস কুমার চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রীক) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক দীপন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস (এমএন লারমা) জেলা যুববিষয়ক সম্পাদক প্রত্যয় চাকমা বক্তব্য রাখেন।

এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমাকে দায় করেছেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, সন্তু লারমার নির্দেশেই পরিকল্পিতভাবে বান্দরবানে জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থিত ছয় নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। দিনে-দুপুরে তাদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সামনে ব্র্যাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করেছে খুনিরা। সন্তু লারমাকে স্ব-জাতি হত্যার নির্দেশদাতা এবং খুনি আখ্যায়িত করে অবিলম্ভে তার ফাঁসির দাবি জানান বক্তারা। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জরিত খুনি সন্তু লারমা এবং তার দোসরদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। অন্যথায় জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ (পিসিপি) জুম্ম জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে।

বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নেতাকর্মীরাসহ সাধারণ নারী-পুরুষও অংশ নেয়।

পার্বত্যাঞ্চলে আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্যের লড়াই বেশ কিছুদিন ধরে অনেকটাই স্তিমিত ছিল। ছোটখাটো কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের কোন সংঘর্ষ ঘটেনি। তবে শেষ পর্যন্ত দেশে মহামারি করোনা পরিস্থিতিতেও থামেনি পাহাড়ের ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত।

জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য গত একমাস ধরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে একটি দল বান্দরবানে কাজ করছিল। ঘটনার দিন হতাহতরা সবাই বান্দরবান জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গার বাসায় অবস্থান করছিলেন।

সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে কয়েকজন নাশতা সেরে বাইরে বসেছিলেন। অন্যরা মূল ঘর থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে নাস্তা করতে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুটি দলে ভাগ হয়ে ১০ থেকে ১২ জন স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close