মিজান রহমান

  ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

উপজেলা নির্বাচনে নির্দেশনা উপেক্ষা

সিদ্ধান্ত কী, তৃণমূলের চোখ গণভবনে

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত এমপি-মন্ত্রীরা। তাদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী করেছেন। এতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বাড়ছে ক্ষোভণ্ডহতাশা। এছাড়া দলীয় একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোট ঘিরেও বিভক্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ অবস্থার মধ্যেই আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে এই বৈঠক হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে থাকছে উপজেলা নির্বাচন, দলে শৃঙ্খলা ফেরানো, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ বিভিন্ন দিবস উদযাপনের কর্মসূচিসহ ১৬ এজেন্ডা। এছাড়া এই এই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত আসতে পারে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে। ফলে দলের জেলা-উপজেলা নেতারা তাকিয়ে আছেন গণভবনের দিকে। এই বৈঠকেই আসতে পারে দলীয় সিদ্ধান্ত। কারণ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেছেন, দলের নির্দেশনা অমান্য করে যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন করছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এগুলো তারা আজ দলীয় সভাপতির সামনে উপস্থাপন করবেন।

জানা গেছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অমান্য করে প্রথম ধাপে কমপক্ষে ১৪ জন এমপি-প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোয়ও মাঠে আছেন এক ডজনের বেশি এমপি-মন্ত্রীর স্বজন। এদের বিষয়ে আজ নির্দেশনা আসতে পারে দলীয় প্রধানের তরফে।

সূত্র জানিয়েছে, সভায় ১৬ এজেন্ডা রয়েছে। তা হলো শোক প্রস্তাব, মহান মে দিবস, ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, ৭ জুন ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী (৭৫ বছর) উদযাপন ও বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ, ৫ আগস্ট শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ দিবস, ২৪ আগস্ট আইভী রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী, ২৭ আগস্ট কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী। এ ছাড়াও সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সাংগঠনিক ও বিবিধ ইস্যুতে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সাংগঠনিক ও বিবিধ শিরোনামে প্রায় সব সমসাময়িক বিষয় ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়। সাম্প্রতিক ইস্যু উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে সহায়তা করা এবং মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়দের প্রার্থিতা বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আমি মনে করি। আশা করছি, আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সভানেত্রী তার প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত দেবেন।

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমরা তালিকা তৈরির কাজ শেষ করেছি। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে সেটা দলীয় সভায় উত্থাপন করব। দলের সভাপতি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা অমান্যকারীদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত আসবে তা জানতে গণভবনের দিকে দৃষ্টি রাখছি।

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক মানেই নতুন কিছু সিদ্ধান্ত। কাজেই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় সভাপতি যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, অনেকেই মানেননি। কী সিদ্ধান্ত আসে সেদিকেই নজর রাখছি।

বৈঠকে কী আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, দিবসভিত্তিক কর্মসূচি ছাড়াও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তাতে অনেকেই অনেক রকম যুক্তি তুলে ধরছেন। সাংগঠনিক কর্মসূচি ও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বেশি হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে যাদের স্বজনরা নির্বাচন করছেন তাদের মধ্যে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের তালিকা হচ্ছে। এই তালিকায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, ড. আবদুর রাজ্জাক ছাড়া আরো একজন নেতার নাম রয়েছে। সূত্র জানায়, এই তিন নেতা ছাড়াও অন্তত ১৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা দলের এই নির্দেশনা মানতে নারাজ। বিষয়টির ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ব্যাখ্যাসহ সরাসরি দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বাহাসও করেছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতা এ তথ্য জানান।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি শাখার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। শোনা গেছে, সম্প্রতি মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ কমিটি জমা দিয়েছে। সেখানে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের টাকার বিনিময়ে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ভাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মেয়াদও শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর যুবলীগের কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে অনেক আগে। ভারপ্রাপ্ত কমিটিরও মেয়াদ প্রায় অর্ধযুগ পেরিয়েছে। শ্রমিক লীগকেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। ফলে এসব জায়গায় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে আজকের বৈঠকে।

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘কার্যনির্বাহী সংসদের সভা দলের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। এবার নির্বাচন সামনে থাকায় সভাতে স্বভাবত এ প্রসঙ্গ আসবে। পাশাপাশি আগামী দিনে বিভিন্ন দিবস পালন বা উদযাপনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের করণীয় নির্ধারণ হতে পারে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close